বর্তমান সমাজে অনেক মানুষই পাশ্চাত্যের অনুকরণে ধর্মহীনতার চর্চার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। কিন্তু একজন মানুষ কী সত্যিই সম্পূর্ণভাবে ধর্মহীন হতে পারে?
আলোচনার শুরুতেই ধর্ম কি তা বলা প্রয়োজন কারণ বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ ধর্ম বলতে শুধু মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডায় গিয়ে নামায, রোযা, পূজা, প্রার্থনা ইত্যাদিকে মনে করেন। কিন্তু ধর্ম শুধু কোন আনুষ্ঠানিকতা পালন নয়। আসলে ধর্ম হচ্ছে কোন আদর্শ বা বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করা এবং কর্মে ও আচরণে তা প্রকাশ করা। উদাহারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি আগুন, যার ধর্মই হচ্ছে পোড়ানো। পোড়ানোর এই ধর্মকে সে শুধু ধারণই করেনা কোন কিছু পেলেই পুড়িয়ে সে তার ধর্ম প্রকাশ করে। ধর্মের এই সংজ্ঞাই বলে দেয় একজন মানুষ কখনই সম্পূর্ণভাবে ধর্মহীন হতে পারে না। কারণ তাকে ভালো অথবা মন্দ, সত্য অথবা মিথ্যা যে কোন একটি আদর্শ ধারণ করতেই হয়।
তবুও তর্কের খাতিরে ধরে নিই একজন মানুষ আল্লাহকে অর্থাৎ স্রষ্টাতে অবিশ্বাসী। সে স্রষ্টাকে বিশ্বাস করেন না। তার কাছে বস্তুতান্ত্রিক ধর্মহীন মতবাদই মূখ্য। সে সর্বদা নিজেকে ধর্মের বিষয়গুলো থেকে দূরে রাখতে চায়। কিন্তু সে তার পর্থিব জীবনে মিথ্যা, অন্যায়, অশ্লিলতা ইত্যাদি খারাপ বিষয়গুলিকে কখনই প্রাধান্য দেয় না। সে মনে করে এগুলো অন্যায়, সঠিক নয়। অন্যের খারাপ আচরণ ও কর্মে সেও ব্যথিত হয়, আবার অন্যের ভালো আচরণে ও সৎকর্মে সে আনন্দিত হয়। এমন হওয়াটা স্বাভাবিক। এই যে ভালো কাজে ভালো লাগা আর মন্দ কাজে মন্দ লাগার বা অনুতপ্ত হওয়ার উপলব্ধি, এটাই বিবেক।
তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায় তার মধ্যকার এ অনুতাপের কারণ কী? তার মধ্যকার এ সংশয় কোথা থেকে আসলো? এর জবাব দেয়ার পূর্বে বলা প্রয়োজন যে, মানুষ ¯্রষ্টাকে অবিশ্বাস করতে পারলেও কখনই তাঁর প্রদত্ত সেই মন্দ লাগা-ভালো লাগার অনুভূতিকে অর্থাৎ বিবেককে অস্বীকার করতে পারবে না। এই বিবেকের কথা স্রষ্টা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সেই আদম থেকে শুরু করে শেষ রসুল হযরত মোহাম্মাদ (দ.) সবার মাধ্যমেই জানিয়েছেন। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থেই স্রষ্টা সৎকাজের আদেশ ও মন্দকাজে নিষেধ করেছেন। ধর্মহীনদের ভালো কাজে ভালো লাগার অনুভূতি আর মন্দ কাজে মন্দ লাগার অনুভূতির প্রধান কারণ হলো মানুষের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ¯্রষ্টার দেওয়া সেই বিবেক বিদ্যমান।
কিভাবে ¯্রষ্টার সেই বিবেক মানুষের মধ্যে আসলো? স্বাভাবিকভাবেই ধর্মহীনদের মনে এই প্রশ্ন জাগতে পারে। পবিত্র কোর’আনের সুরা হিজরের ২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, মানুষের মধ্যে আল্লাহ নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষের মাঝে আল্লাহর রুহ বিদ্যমান। যা মানুষকে ঐ বিবেক দান করে। এজন্য দেখবেন একটি পশুর মানুষের মতো ঐ বিবেক বা মূল্যবোধ থাকেনা। ক্ষুধা লাগলে সে তার সন্তানকেও খেয়ে ফেলে। এটার কারণ হল পশুর মধ্যে আল্লাহর রুহ নেই, সেই বিবেক নেই। আর একজন মানুষ সে ধর্মে বিশ্বাসীই হোক আর ধর্মে অবিশ্বাসীই হোক তার মাঝে আল্লাহ্র রুহ থাকায় সে যতই আল্লাহ অর্থাৎ স্রষ্টার প্রতি অবিশ্বাস স্থাপন করুক না কেন সে কখনই তার মধ্যকার মূল্যবোধ, বিবেক ইত্যাদির থেকে মুক্ত হতে পারে না। তাকে এগুলোর বন্ধনে আবদ্ধ থাকতেই হয়। এ ব্যাপারগুলোই ধর্মের অংশ। কারণ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ধর্ম মানুষকে শালীনতা, মূল্যবোধ, সততা ইত্যাদি গুণাবলীর শিক্ষা দিয়ে আসছে। মানুষের মধ্যকার স্রষ্টার এই অংশ তাকে সবসময় অন্যায় থেকে বিরত রাখে। কাজেই একজন মানুষ কখনোই সম্পূর্ণরূপে ধর্মহীন হতে পারে না।