রিয়াদুল হাসান:
পৃথিবীতে এই মুহূর্তে প্রতি সেকেন্ডে একজন নতুন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর বাংলাদেশে প্রতি বিশ মিনিটে একজন। পৃথিবীতে বর্তমানে মোট স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৫ টি। তবে পৃথিবীতে বেশ কিছু টেরিটোরি বা অঞ্চল আছে যেগুলো অন্য কোনো দেশের প্রত্যক্ষ প্রভাবাধীন। এগুলো মিলে পৃথিবীর মোট ২১০ টি দেশ ও টেরিটোরিতে (১৮০ টি স্বাধীন দেশ ও ৩৫ টি অঞ্চল) এখন করোনা চলছে। মোট আক্রান্ত রোগী 17,83,724 জন। এর মধ্যে মারা গেছেন 108,907 জন।
প্রতি মুহূর্তে লিখতে লিখতে এ পরিসংখ্যান পাল্টে যাচ্ছে। লেখার শুরু থেকে শেষ হতে হতে আরো একশ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।এই লাশ গণনা যেদিন শেষ হবে সেদিন সংখ্যাটি লাখের ঘরে থাকবে নাকি কোটির ঘরে, নাকি শত কোটির ঘরে চলে যাবে সেটা জানেন কেবল আল্লাহ।
প্রথম কয়েকদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেশ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু মাস দেড়েক পর থেকে এর কার্ভ পাহাড়ের মতো খাড়া হয়ে উঠে যাচ্ছে। সব দেশের চিত্রই মোটামুটি এমন। মানবসভ্যতায় বিরাট পরিবর্তন ঘটতে চলেছে আমাদের চোখের সামনে। যাদের চোখ খোলা থাকবে শেষ অবধি তারা এই প্রিয় গ্রহকে কী রূপে আবিষ্কার করবেন জানি না। বলা হচ্ছে জাপানে এর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে যার বিশ লক্ষ ওষুধ উৎপাদন চলমান আছে। যে কয়জন রোগীর উপর এ ওষুধ পরীক্ষা করা হয়েছে তারা সুস্থ হয়েছেন। এটা একটা আশার কথা।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার একটা উপায় এই মহামারী। গবেষকরা বলেন যখন পৃথিবীতে মানুষ বেড়ে ওঠে তখন যুদ্ধ হয়ে বা মহামারী হয়ে একটা সাম্যাবস্থা ফিরে আসে, পৃথিবী ভারমুক্ত হয়। হিন্দু পুরাণমতে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে মাতা ধরিত্রি নাকি ব্রহ্মার কাছে আবেদন করেছিলেন যে মানুষ এত বেশি হয়ে গেছে যে ধরিত্রি আর ভারবহন করতে, প্রতিপালন ও ব্যবস্থাপনা করতে পারছিলেন না। তখন যুদ্ধ বেঁধে আঠারো অক্ষৌহিণী মানুষ নিঃশেষ হয়।
একটি মাঝারি মাইক্রোবাসে আসনসংখ্যা এগারোটি। পৃথিবীর আসনসংখ্যা কত? কতজন মানুষকে সে সাপোর্ট করতে পারবে? পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদনের সক্ষমতা, ক্যাপাসিটি বর্তমানে কতটুকু? কতটুকু এর স্বাদু পানির রিজার্ভ? এসব কিছুই অসীম নয়। সেই ১৮শ শতকের দার্শনিক থমাস ম্যালথাস (১৭৬৬-১৮৩৪ খ্রি) অংক কষে বলেছিলেন, মানুষ নিজেদের সংখ্যা বাড়াবেই, ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা পৃথিবীর সম্পদ অচিরেই গ্রাস করে ফেলবে। তারপর বিরাট দুর্ভিক্ষ এসে তাদেরকে হত্যা করবে (Humans’ unquenchable urge to reproduce, would ultimately lead us to overpopulate the planet, eat up all its resources and die in a mass famine)।
ম্যলথাসের সময় থেকে বর্তমান সময়ের মধ্যে প্রযুক্তির চাপে পৃথিবীর খাদ্যোৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে। আবার কমেছে আবাদযোগ্য জমি। সব মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন সর্বোচ্চ নয় বিলিয়ন মানুষ এই গ্রহে বাস করতে পারবে। এর পরে আর না। বর্তমানে আট বিলিয়ন মানুষ ইতোমধ্যে পৃথিবীর রিসোর্স ভোগ করছে। অনেকেই ম্যালথাসের অর্থনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণীর বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলেও এখন সেটা করোনার রূপ নিয়ে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সব দেশেই চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে, মজুদ শেষ হয়ে যাবে। ফলে মহামারী শেষ হওয়ার পর কয়েক বছর চলে যাবে খাদ্য ঘাটতি মেটাতে। পরিণাম দুর্ভিক্ষ।
যারা বলবেন আল্লাহ ভরসা, তাদের পয়েন্টে আসা যাক। রসুলাল্লাহর হাদিসে ইয়াজুজ মাজুজ প্রসঙ্গটি আখেরি যুগের একটি বড় ফেতনা হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানেও এক বিরাট মহামারি, দুর্ভিক্ষের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আমরা এখনও জানি না যে ইয়াজুজ মাজুজ কী, তাই ও নিয়ে আলোচনা করা সময়ের অপচয়। তবে এটুকু সুস্পষ্ট যে তারা সামরিক বাহিনী, তারা প্রলয়ঙ্করী যোদ্ধা। বিরাট ধ্বংসকারী ক্ষমতার অধিকারী তারা। তো এরা যখন পৃথিবীর উপর তাদের চাবুক চালাবে তখন মানুষ অসহায় হয়ে পড়বে তাদের সামরিক শক্তির সামনে। রক্তের বন্যায় লাল হয়ে যাবে মাটি। প্রসঙ্গত বলি, দুই বিশ্বযুদ্ধে এগারো কোটি, তারপরে আরো এক কোটি মানুষ যুদ্ধে নিহত হয়েছে।
এই জাতির হাত থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করবেন আল্লাহ। তখন একদল মোমেন থাকবেন পৃথিবীতে। তারা ঈসা (আ) এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। বিরাট দুর্ভিক্ষ এসে মানুষকে চরম খাদ্যসংকটে নিক্ষেপ করবে। দ্রব্যমূল্য হবে আকাশছোঁয়া। সেই ইয়াজুজ মাজুজ মারা যাবে ‘নাগাফ’ নামে এক ক্ষুদ্র জীবের দ্বারা।
হাদিসের ভাষ্য হচ্ছে এমন – ইয়াজুজ মাজুজের কারণে আল্লাহর নবী ও তার সাথীরা অবরুদ্ধ হয়ে যাবেন। তাঁরা প্রচণ্ড খাদ্যাভাবে পড়বেন। এমনকি বর্তমানে তোমাদের কাছে একশত স্বর্ণ মুদ্রার চেয়ে তাদের কাছে একটি গরুর মাথা তখন বেশি প্রিয় হবে। তাঁরা এই ফেতনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। আল্লাহ তাঁদের দোয়া কবুল করে ইয়াজুয-মা’জুযের ঘাড়ে ‘নাগাফ’ নামক একশ্রেণীর ক্ষুদ্র পোকা প্রেরণ করবেন। এতে এক সময়ে একটি প্রাণী মৃত্যু বরণ করার মত তারা সকলেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। (কিতাবুল ফিতান, সহীহ মুসলিম)। তবে আল্লাহর রহমে মোমেনরা রক্ষা পাবেন, যদিও অনেক কষ্টের পর।
এমন একটি সংকটময় ঘটনার বিবরণ হাদিসে পাওয়া যায়। এই হাদিস সত্য কিনা, আর সত্য হলে সেটা বর্তমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিনা তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুস্পষ্ট হবে। বাস্তবতা হলো বিশ্ব আক্রান্ত, সেটা পরাশক্তিধর রাষ্ট্রই হোক আর দুর্বল সামরিক শক্তি রাষ্ট্রই হোক। যাদের অহঙ্কার ছিল আকাশচুম্বী তারাও আজ আতঙ্কে কম্পমান। মহা দাপুটে মানুষটিও ঘরে বসে মুক্তির প্রহর গুণছে।
প্রকৃত সত্য হলো, এই অবস্থা দুর্ঘটনাক্রমে বা দৈবক্রমে হয়নি, এটা অর্থনীতি ও প্রকৃতি বিজ্ঞানের সূত্র মেনেই হয়েছে। সবকিছুর মতো এই সূত্রগুলোও আল্লাহরই নির্ধারিত। আল্লাহর হুকুম অমান্য করে মানুষের সার্বভৌমত্ব মেনে জীবন পরিচালনার পরিণতিতে আজ এ মহা-সংহারী দুর্যোগ নেমে এসেছে। শুধু ইসলাম নয়, অন্যান্য ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণীতেও এর উল্লেখ ছিল। মানুষ উটপাখি হয়ে চোখ বুঁজে ছিল। পরিণামে আমাদের অনেকেরই চোখ চিরস্থায়ীভাবেই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। (লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া।)