ফতোয়াবাজ ধর্মব্যবসায়ীদের অন্ধত্বকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না
ধর্ম এসেছে মানুষের কল্যাণে, মানবতার কল্যাণে। সেই ধর্ম যখন একদল স্বার্থান্বেষীর কাছে কুক্ষিগত হয়ে পড়ে তখন সেই ধর্ম তার প্রকৃত রূপ হারিয়ে ফেলে। বর্তমান ধর্মগুলোর সাথে ঠিক এমনটিই ঘটেছে। একদিকে আমরা শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, তথ্য-প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান এক কথায় সব দিক থেকে এগিয়ে গেলেও দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এখনো ধর্মের নামে কুসংস্কার, কূপম-ূকতা ও সাম্প্রাদায়িক মনোভাব বিদ্যমান। এর মূল কারণই হচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল যারা ধর্মকে নিজেদের কুক্ষিগত করে রেখেছে এবং ধর্মকে নিজেদের সুবিধামত ব্যবহার করছে, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে এবং ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছে। এরা ধর্মের প্রকৃত রূপ মানুষের সামনে উপস্থাপন করছে না। যারা এই সকল কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ও জনগণকে একযোগে অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র লাভ করেছি সেই রাষ্ট্রকে আমরা অস্থিতিশীল হতে দিতে পারি না। আমরা যে যে ধর্মেরই হই না কেনো আমরা সকলেই বাঙালী। আমরা বাঙালী মুসলিম, বাঙালী হিন্দু, বাঙালী খ্রিষ্টান, বাঙালী বৌদ্ধ। আমাদের সকলের জন্মস্থান এই দেশ, সকল ধর্মমতে আদি পিতা ও আদি মাতা একই, সকল ধর্মমতে মৃত্যু পরবর্তী পরিণতিও একই। তাহলে ধর্মের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মতভেদ নিয়ে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নই উঠে না।
কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে দেখা যাচ্ছে ধর্মের বিভিন্নতার কারণে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নামক ব্যাধীতে আমরা জর্জরিত। শুধু তাই নয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ার ফলে ইসলামের অপব্যাখ্যা প্রদান করে একটি শ্রেণী বারবারই বহু অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। পূর্বে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুর ঐতিহ্যবাহী ১২টি বিহার ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলা হয়। তারও পূর্বে ১৯৯৯ সালে উদীচী সংস্কৃতি গোষ্ঠির উপর হামালা করা হয়েছিল। এছাড়াও ২০১৬ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনের সদস্যদের ‘খ্রিষ্টান’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয় জনগণকে উসকে তোলে একটি শ্রেণী এবং সেখানে ব্যাপক হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি করে এবং ঘরবাড়ি, ক্ষেত খামার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়, তাদের দুইজন সদস্যকে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করে ও হাত পায়ের রগ কেটে দেয় এবং পরবর্তীতে লাশের উপর পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রতিটি ঘটনাই ঘটান হয় গুজব ও মিথ্যে অপবাদ ছড়িয়ে সাধারণ জনগণকে উস্কে দেয়ার মাধ্যমে।
অতএব সরকারকে এখনই এ বিষয়ে তৎপর হতে হবে যাতে করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছে, স্বার্থোদ্ধার করছে, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এরা কথায় কথায় ফতোয়ার বান ছোঁড়ে। সুস্থ সংস্কৃতিকে হারাম বলে ঘোষণা দেয়, কখনো নারী প্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য নেয়া প্রতিটি পদক্ষেপে এরা নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় এবং সে অনুযায়ী ধর্মকে ব্যবহারের চেষ্টা করে। যদি তারা তাদের এইসকল মনোভাব বন্ধ করে জাতির উন্নয়নে নিজেদের অবদান রাখতে সচেষ্ট হয় তবে উত্তম, নয়তো এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।