হার্ভি রেনার এখন বড় তারকা বিশ্বকাপের। আর্জেন্টিনাকে সৌদি আরব হারিয়ে দেওয়ার পর পাদপ্রদীপের আলোর বড় অংশ এখন তাঁর ওপর। কিন্তু কাল ম্যাচ জয়ের অনুভূতি বলতে গিয়েই সৌদি আরবের ফরাসি কোচের কণ্ঠে ঝরেছে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের প্রতি সহানুভূতি। তিনি সব সময়ই বিশ্বাস করেন, আর্জেন্টিনা দারুণ একটি দল এবং মেসিরা অবশ্যই দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নেবেন।
রেনারের বক্তব্য খুবই পরিষ্কার, ‘আর্জেন্টিনা দারুণ একটি দল। বিশ্বকাপে তারা খেলতে এসেছে ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে। লাতিন অঞ্চলের সেরা তারা। দলে দুর্দান্ত খেলোয়াড় আছেন। মাঝেমধ্যে অদ্ভুত কিছু ঘটে যায়। ম্যাচে সৌদি আরবের পক্ষে সবকিছুই গেছে, গ্রহ–নক্ষত্র সবকিছুই। আমি নিশ্চিত, তারা পরের রাউন্ডে যাবে। বিশ্বকাপও জিততে পারে।’
মেসির পেনাল্টি গোলে ১–০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে গিয়েছিল সৌদি আরব। রেনারের হাই লাইন রক্ষণকৌশলের ফাঁদে পড়ে আর্জেন্টিনার তিনটি গোল অফসাইডে বাতিল হয়ে যাওয়ার পর সৌদি আরবের এক ধরনের নৈতিক জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। বিরতির সময় ড্রেসিংরুমে রেনার জ্বালাময়ী ব্রিফিং করেন তাঁর খেলোয়াড়দের উদ্দেশে। গলার রগ ফুলিয়ে নিজের সর্বোচ্চ আবেগ দিয়ে করা সেই ব্রিফিং সৌদি ফুটবলারদের দারুণভাবে উজ্জীবিত করে। যার প্রমাণ দ্বিতীয়ার্ধে তাদের অন্য মাত্রার ফুটবল পারফরম্যান্স।
কী এমন ব্রিফিং করেছিলেন রেনার? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে রেনারের ব্রিফিংয়ের কিছু অংশ। সেখানে দেখা যায়, তিনি খেলোয়াড়দের চিৎকার করে বলছেন, ‘দয়া করে সমর্থকদের কথা ভাবো। এই মাঠে এ মুহূর্তে ৬০ হাজার সমর্থক, তোমাদের হয়ে গলা ফাটাচ্ছে।’
আরও পড়ুন
রেনার নিজে কাল ম্যাচ শেষে এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘প্রচুর সৌদি আরব সমর্থক মাঠে ছিলেন, তাঁরা বিশেষ কিছু দেখতেই মাঠে এসেছিলেন। আমি আমার খেলোয়াড়দের তাদের কথা ভাবতে বলেছি। আমি তাদের সাড়ে ৩ কোটি সৌদি নাগরিকের প্রত্যাশা ও আবেগের কথা ভাবতে বলেছি।’
‘ম্যান ম্যানেজার’ হিসেবে দারুণ সুনাম সৌদি আরবের ফরাসি কোচ রেনারের। ভালো ব্যবস্থাপক হিসেবে নিজের সেরাটা তিনি যেখানে কোচ হিসেবে কাজ করেছেন, সেখানেই রেখেছেন। তিনি কোচ হিসেবে ব্রিফ করেই নিজের কাজ সারেন না, কাজটা হাতে–কলমে খেলোয়াড়দের করে দেখান।
২০১২ সালে জাম্বিয়াকে আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের শিরোপা জিতিয়েছিলেন রেনার। সেটি করেছিলেন চাকরির দ্বিতীয় বছরে। ২০১৫ সালে আবারও আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের সেরা কোচ এই ফরাসি—এবার শিরোপা জেতান আইভরি কোস্টকে। এরপর জার্মান লিগ ‘আঁ’র ক্লাব লিলের কোচ হিসেবে কাজ করে আবারও ফেরেন জাতীয় দলের দায়িত্বে। ২০১৮ বিশ্বকাপে তাঁর কোচিংয়েই মরক্কো ২০ বছরের আক্ষেপ ঘুঁচিয়ে পৌঁছে যায় বিশ্বকাপের মূল পর্বে। ২০১৯ সালে শুরু হয় তাঁর সৌদি–অধ্যায়।
মূলত রেনারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাছাইপর্ব পার করে সৌদি আরবকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দেওয়ার জন্য। সেটা তো রেনার করেছেনই, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে যা করেছে তাঁর দল, সেটা এখন জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।