জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড রাখা শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম জুন মাস ছিল ২০২৪ সালে। সোমবার (৮ জুলাই) ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস এ তথ্য জানিয়েছে।
১৮০০ সালের মাঝামাঝি থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড রাখতে শুরু করে সিথ্রিএস।
সোমবার সংস্থাটির মাসিক বুলেটিনে বলা হয়েছে, ব্যতিক্রমী তাপমাত্রার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখায় ২০২৪ সালকে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হতে পারে বলেও দাবি করেছেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। তাছাড়া ১৮৫০ সাল থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রাকশিল্প যুগ ও শিল্পযুগের প্রাথমিক পর্যায়ের জুন মাসগুলোতে গড়ে যে তাপামাত্রা থাকতো, তার তুলনায় ২০২৪ সালের জুনে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১ দশমিক ৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
এ বিষয়ে সিথ্রিএসের আওতাধীন জলবায়ু গবেষণা সংস্থা বার্কলে আর্থের কর্মকর্তা জ্যাক হাউসফাদার রয়টার্সকে বলেন, এতদিন পর্যন্ত ২০২৩ সালের জুন মাসকে ইতিহাসের উষ্ণতম জুন বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু ২০২৪ সালের জুন সেই রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতে আমার অনুমান, ১৮০০ সালের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত ২০২৪ সাল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ।
সিথ্রিএস বলছে, রেকর্ড তাপমাত্রার কারণে অন্যান্য বছরের জুন মাসের চেয়ে ২০২৪ সালের জুনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ, খরা, অতিমাত্রায় বর্ষণ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগও বেশি ঘটেছে।
এ বছরের জুন মাসের প্রায় পুরোটা জুড়ে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির ওপর দিয়ে। অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে মেক্সিকোর কয়েকটি শহরের সুপেয় পানির উৎসও শুকিয়ে গেছে। অন্যদিকে, চলতি বছরের হজে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা গেছে ইউরোপের দেশ গ্রিসেও।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান করাণ হলো- জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা রোধ করার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত ও ধনী দেশ এখন পর্যন্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কয়েক দশক ধরেই বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের অধীনস্ত গবেষণা সংস্থা গ্রেন্থাম ইনস্টিটিউটের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ফ্রেডেরিক ওটো বলেন, এখন বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার এল নিনো প্যাটার্ন চলছে। এই ধরনের আবহাওয়ায় গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমার ধারণা ২০২৪ সাল বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হবে। কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাস করা রাতারাতি সম্ভব নয়।
সূত্র: রয়টার্স