বর্ষা এখনো আসেনি কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে। সাধারণত বর্ষার পর জুলাই ও সেপ্টেম্বরের সময় মশার উপদ্রব বেশি দেখা যায়। আর এ সময়ই মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি বাড়ে। গত বছর কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ।
সেদিকে নজর রেখে মশাবাহিত রোগের হাত থেকে বাঁচতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর এখন থেকেই বেশ কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে আগামী কয়েক মাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন আবাসনগুলো পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।কারন এসব আবাসনেই বেশি সংখ্যক মানুষ মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মশাবাহিত রোগ বাড়ার পেছনে সেখানকার পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা উঠে এসেছে। ঠিকভাবে আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় না এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থাও ঠিকভাবে কাজ করছে না।
বেলগাছিয়ার বাসিন্দা মৌসুমী চক্রবর্তীর বেশ কিছুদিন ধরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর সঙ্গে বমি-বমি ভাব ছিল। মৌসুমীর পরিবারের লোকজন ভেবেছিলেন ঋতু বদলের কারণেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন জ্বর না কমায় চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গও ও ম্যালেরিয়ার টেস্ট করানো হয়। দেখা যায় টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ। সাত দিন হাসপাতালে থাকতে হয় তাকে। অনেকেই মৌসুমী চক্রবর্তীর মতো সমস্যায় ভুগছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত শুধু কলকাতার ৬ নম্বর ওয়ার্ডেই ৩৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। কলকাতার সরকারি আবাসনে আক্রান্ত হয়েছে ৬ জন। তাই শুরু থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে জোর কদমে প্রচার শুরু করেছে কলকাতার কর্পোরেশনসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পৌরসভা।
কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিমের কড়া নির্দেশ ডেঙ্গু মোকাবেলায় কোনো রকম ঢিলেমি দেওয়া যাবে না।কলকাতার পৌর এলাকার প্রত্যেক বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। আমজনতাকে সচেতন করতে তারাই গিয়ে বলছে তিনদিনের বেশি জ্বর থাকলে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া টেস্ট করতে। সে সময় ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া পরীক্ষা না করলে কি কি সমস্যা হতে পারে তাও জানানো হচ্ছে।
এছাড়াও কলকাতা কর্পোরেশনের পৌর এলাকার সব অলি-গলিতে ডেঙ্গু সচেতনতার মাইকিং করা হচ্ছে। প্রায় এক সপ্তাহ পর পর ধোঁয়াসহ ব্লিচিং, মশার তেল ছেটানো হচ্ছে।
কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের পৌর এলাকায় ডেঙ্গু সচেতনতায় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে মিছিলও করতে দেখা গেছে। ওই মিছিল থেকে মাইকিং করে সাধারণ জনগণকে মশাবাহিত রোগের হাত থেকে বাঁচার কি কি উপায় আছে সেগুলো জানানো হচ্ছে। আর জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
এর পাশাপাশি কলকাতা কর্পোরেশন ডেঙ্গু মোকাবিলায় বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। যেমন- ফাঁকা জমিতে আবর্জনা জমা করে রাখার জন্য জমির মালিকদের ওপর জরিমানা ধার্য করা হবে। এছাড়াও নির্মাণাধীন ভবন গুলোতে কড়া নজরদারি চালাবে কলকাতা পৌরসভা।
বিভিন্ন ভবনে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা পৌরসভা। জমে থাকা পানি তিন দিনের মধ্যে পরিস্কার না করা হলে ভবন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে। পৌরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের বেশ কিছু সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বিশেষ অভিযান চালাবেন পৌরসভার কর্মীরা।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিম জানান, গত বছরের কথা মাথায় রেখে এবার ডেঙ্গু মোকাবিলায় আগে থেকেই কলকাতা পৌরসভা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কলকাতায় ডেঙ্গু রুখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।