Date: November 23, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / জাতীয় / অবশেষে মিথ্যা মামলায় ১৪ বছর হয়রানীর অবসান

অবশেষে মিথ্যা মামলায় ১৪ বছর হয়রানীর অবসান

March 31, 2024 05:36:34 PM   স্টাফ রিপোর্টার
অবশেষে মিথ্যা মামলায় ১৪ বছর হয়রানীর অবসান

স্টাফ রিপোর্টার:  
ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় দীর্ঘ ১৪ বছর ঝুলে থাকার পর অবশেষে মুক্তি মিললো হেযবুত তওহীদের দুই জন নির্দোষ সদস্যের। দীর্ঘ তদন্ত, সাক্ষী, জেরা আরো নানাবিধ আদালত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেকসুর খালাস পেলেন তারা।
আজ রবিবার (৩১ মার্চ) গাজীপুর জেলার বিজ্ঞ আদালত তাদের বেকসুর খালাস প্রদানের আদেশ দান করেন। 
হেযবুত তওহীদের সদস্যদ্বয় হলেন- রফিকুল ইসলাম ইমন (৪২), পিতা: মৃত শেখ শহিদুল ইসলাম, ঠিকানা: তালপাড়া, বড়গয়রা, খালিশপুর, খুলনা ও আহসান হাবিব রতন (৬৩), পিতা: মৃত বেলায়েত আলী সরদার, ঠিকানা: ধামুরা, উজিরপুর, বরিশাল। 
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১১ই ডিসেম্বর গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানা সংলগ্ন বাজারে শান্তিপূর্ণভাবে কালেমার দাওয়াত দিচ্ছিলেন ইমন এবং আহসান হাবিব। এক দোকানদার হেযবুত তওহীদকে নিষিদ্ধ সংগঠন বলে সন্দেহ পোষণ করলে তারা দোকানদারকে নিয়ে থানায় যায়। থানার তৎকালীন ওসি হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ নয় জানার পরও তাদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে। প্রায় দেড় মাস জেল-যুলুমের পর তারা জামিনে বের হন। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বে-আইনি কিংবা সন্ত্রাসী কোনো কার্যকলাপের সাথে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় এবং হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ নয় প্রমাণিত হওয়ায় আদালত পরবর্তী তারিখে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দান  করেন। ঐদিনই কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়ের করে। দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস জেল-জুলুমের পর তারা জামিনে বের হন। এরপর দীর্ঘ তদন্তের পরও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা অভিযোগের পক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ২০২৪ সালে আদালত তাদের নির্দোশ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। 
রফিকুল ইসলাম ইমন বলেন, আমরা থানায় গিয়ে ওসিকে আমাদের প্রচার কার্যক্রম চালানোর বৈধ কাগজপত্র দেখালাম। আমি জানিনা তিনি অন্য কোনো ইসলামি দল করেন কি না এবং হেযবুত তওহীদের সাথে তারা মতাদর্শের পার্থক্য থেকে বিদ্বেষভাব রয়েছে কি না। ওসি সাহেব আমাদের কোনো কাগজপত্র দেখলেনই না। বললেন, সব আদালত দেখবে। তিনি পুলিশসহ আমাদের বাড়ি তল্লাশি করতে পাঠালেন। তারা আমাদের নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে তল্লাশি করে অবৈধ কোনোকিছুই পেলেন না। তারপরেও আমাদের ৫৪ ধারায় চালান করে দিলেন।
দেড় মাস পরে জামিন থেকে বের হই আমরা। পরবর্তী তারিখে মামলার হাজিরা দিতে যাই। সেদিন মামলা খালাস হয়ে যায়। কিন্তু কোর্ট চত্বর থেকে পুনরায় আমাদের গ্রেফতার করা হয়। কি কারণ, কেন করা হলো আমরা কিছুই জানি না। আমাদের দুই দিন হাজতে আটকে রাখা হয়। পুলিশ আমাদের কাছে ৩০ হাজার টাকা করে দাবি করে। আমরা টাকা দিতে না পারায় আমাদের পেটানো হয়। এরপর চালান করে দেওয়া হয়। তখনো আমরা জানি না আমাদের কোন অপরাধে, কি মামলায় গ্রেফতার করা হলো। দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস জেল খাটার পর হাইকোর্ট থেকে আমাদের জামিন হয়। এর মধ্যে আমাদের তিনবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুইবার পুলিশ আর একবার র‌্যাব। র‌্যাবের জেআইএস রিমান্ডে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আমাদের উত্তর শুনে তারা বলে, তোমরা তো নির্দোষ। তোমাদের এই মামলায় কেন দেওয়া হলো বুঝতেছি না। তারা নিজেরা নিজেরা বিরক্তি নিয়ে বলাবলি করতে থাকে, কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, বড় বড় এসাইনমেন্ট পড়ে আছে সে সব রেখে এসব ফালতু মামলায় আমাদের সময় নষ্ট করা হচ্ছে। একজন অফিসার বলেন, তোমরা চিন্তা করো না। আমরা ভালো রিপোর্ট দিয়ে দিচ্ছি। তোমাদের জামিন হয়ে যাবে। তারা ২দিনের রিমান্ড সংক্ষেপ করে একদিন পরেই আমাদের ছেড়ে দেয়। 
জামিনে বের হবার পর দীর্ঘ ১৩টা বছর কোর্টে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা আজ নিঃস্ব। প্রথমদিকে ২-৩ মাস পর পর মামলার তারিখ পড়ত। শেষদিকে এসে প্রতি মাসে ৩-৪ বারও তারিখ পড়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা। খেটে খাওয়া মানুষ আমরা, দিন আনি দিন খাই অবস্থা আমাদের। যা ইনকাম করতাম তার বেশিরভাগই মামলায় উকিল-পেস্কারের পিছনে ঢালতে হয়েছে। 
আহসান হাবিব রতন বলেন, আমি একজন সেনেটারি মিস্ত্রি। বুড়া মানুষ। চোখে সমস্যা। আমার বাঁ চোখে দেখি না। আজকে আমার চোখে লেজার লাগানোর তারিখ ছিল। মামলার তারিখ ছিল বলে যেতে পারিনি ডাক্তারের কাছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আজকেই মামলায় আমাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। ১৩টা বছর কোর্টে দৌড়াতে দৌড়াতে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। তাও এতটুকু শান্তি যে, শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হলো। 
রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার ইন্ধনদাতা বা এই মামলার রুজুর পেছনে কে বা কারা কাজ করেছে বলে আপনি মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইমন বলেন, আমরা কোর্ট কাচারি কখনো চিনতাম না, বুঝতাম না। আমাদের ইচছাকৃতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। কালিগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি এই কাজটি করেছে বলে আমার ধারণা। তিনি জানতেন যে, ৫৪ ধারায় আমরা এমনিতেই খালাস পেয়ে যাবো। তাই তিনি লবিং করে এই মামলাটি রুজু করিয়ে থাকতে পারেন। আর যার সাথে আমাদের প্রথমে বাক-বিতণ্ডা হয়েছিল, আদালতে তিনিও আমাদের ব্যাপারে সত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং ঐ থানার যে দারোগা সাক্ষী দিয়েছেন তিনিও আমাদের ব্যাপারে মিথ্যা কিছু বলেননি। এই মামলায় যে কয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে সবাই সত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। 
আবেগ জড়িত কণ্ঠে ইমন বলেন, এই মামলার কারণে আমার বাবা মারা যান। পুলিশ গ্রামের বাড়িতে আমার ছোট ভাইকেও গ্রেফতার করে। তখন আমার বাবা হার্ট অ্যাটাক করে। ঐ অসুস্থতায়ই তার মৃত্যু হয়। আমাদের যারা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে তারাই আমার বাবার খুনি। এমন হয়রানি, এমন বিড়ম্বনা আমার পরম শত্রুরও যেন না হয়। আর যে বা যারা আমাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ষড়যন্ত্র করে এই মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি-নির্যাতন করেছে তার বিচার আমরা আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম। 
গাজীপুরের দেশেরপত্রের সংবাদকর্মী মোস্তাকিম খান বলেন, মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদেরকে ফাঁসানো হয়েছিল। তদন্ত রিপোর্ট ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।