Date: January 22, 2025

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / জাতীয় / ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়াতে রা‌জি চীন

ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়াতে রা‌জি চীন

January 21, 2025 08:20:51 PM   নিজস্ব প্রতিনিধি
ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়াতে রা‌জি চীন

চীনের কাছ থেকে অগ্রাধিকারমূলক ক্রেতা-ঋণ এবং সরকারি রেয়াত-ঋণ নামে দুই ধরনের ঋণ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ। ওই ঋণের সুদের হার ২-৩ শতাংশ এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছর। বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ পরিশোধের এই সময় বৃদ্ধি এবং ঋণের সুদ হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে চীন।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়া‌রি) বেই‌জিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-য়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই সম্মতি পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ও চীন ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর তৌহিদ হোসেন বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনে দ্বিপাক্ষিক সফর করলেন। চলতি বছর দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, খাতভিত্তিক সহযোগিতা এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ সম্পর্কের সব বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ভাগাভাগি সমৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন চীনে সরকারি সফর করছেন। বাণিজ্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চীনের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে, এমন তথ্য উল্লেখ করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, চীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সংস্কার, গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং উন্নয়নমূলক উদ্যোগের প্রতি চীনের অব্যাহত সমর্থন থাকবে। বাংলাদেশের জনগণ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন, যিনি দেশের সভ্যতা ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য কাজ করেছেন।

চীন তার কূটনীতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার ফলপ্রসূ বৈঠকের কথা স্মরণ করেন।

বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জোরালোভাবে বলেন, দুইপক্ষের সম্পর্কে বাংলাদেশ নতুন গতি (আরও বেগবান) সঞ্চার করতে চায়।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এক চীন নীতির প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭৫৮ নম্বর প্রস্তাবের প্রতি অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন বাংলাদেশে আমাদের জাতিকে সমতা, বৈষম্যহীনতা, দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা এবং সবার জন্য সম্পদের সমান প্রবেশাধিকারের নীতিতে পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি চীনকে প্রেফারেন্সিয়াল বায়ারস ক্রেডিট (পিবিসি) ঋণ এবং সরকারি ছাড়পত্র ঋণ (জিসিএল) উভয়ের জন্য সুদের হার ২-৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার, প্রতিশ্রুতি ফি মওকুফ করার এবং ঋণ পরিশোধের সময়কাল ২০ বছর থেকে ৩০ বছর করার অনুরোধ করেন। ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের অতীত রেকর্ডের প্রশংসা করে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নীতিগতভাবে ঋণ পরিশোধের সময়কাল বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হন এবং সুদের হার হ্রাসের অনুরোধটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

পাশাপাশি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরের ৩ বছর ধরে চীনা বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার অনুরোধে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য চীনের কুনমিংয়ে ৩/৪টি বিশ্বমানের হাসপাতাল বিশেষভাবে মনোনীত করা হবে। বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ঢাকায় একটি বিশেষায়িত চীনা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই।

বৈঠকে দুইপক্ষের মধ্যে শিক্ষা, রেলওয়ে, কৃষি, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পশুপালন, মৎস্য, জাহাজ ভাঙা, টেকসই ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি এবং নীল অর্থনীতির মতো খাতে আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির সহযোগিতা এবং সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে উভয়পক্ষ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের জন্য তাদের প্রস্তুতি ব্যক্ত করে। এই অঞ্চলে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান স্বীকার করে, উভয় পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর অধীনে অব্যাহত সহযোগিতার ওপর জোর দেয়। উভয়েই চীনা অর্থায়নে প্রস্তাবিত প্রকল্প যেমন দাশেরকান্দি পয়োনিষ্কাশন শোধনাগার, মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ, ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন এবং ফোরজি ইন্টারনেট সম্প্রসারণে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উভয়েই রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন এবং এই সমস্যার টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরিতে কাজ করার জন্য তাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের অব্যাহত সম্পৃক্ততার আশ্বাস দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশকে চীনের রাষ্ট্রপতি শি’র তিনটি বৈশ্বিক উদ্যোগ (জিডিআই, জিএসআই এবং জিসিআই) এ যোগদানের কথা বিবেচনা করার অনুরোধ করেন। জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা এসব ইস্যুতে আরও পর্যবেক্ষণ করতে চায়।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নদী সংক্রান্ত ‘ইয়ালুজাংবু-যমুনা’ নদীর জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। উপদেষ্টা চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও তার প্রতিনিধি দলের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন।

সফর শেষে আগামী ২৪ জানুয়ারি দেশে ফেরার কথা রয়েছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার।