স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীতে বিএনপির ডাকা অবরোধে যাত্রীবেশে বাসে উঠে আগুনের ঘটনার নির্দেশনায় জড়িত অভিযোগে এক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন— ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সূত্রাপুর থানা ছাত্রদের যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকি (২৫) ও তার সহযোগী সাকিব ওরফে আরোহান (২১)।
পুলিশের দাবি, রাজধানীতে প্রতিটি বাসে আগুন দিলে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হতো টাকা। এমন অভিযোগে ছাত্রদল নেতা রকি ও সহযোগী সাকিবকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)।
গতকাল রোববার (৫ নভেম্বর) রাতে বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বোতল ভর্তি পেট্রোল উদ্ধার করা হয়।
আজ সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত ১ নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন বাসে কতিপয় রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত যাত্রীবেশে আগুন দিয়ে পালানোর সময় আল আমিন নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
আল আমিন কার নেতৃত্বে কীভাবে বাসে আগুন দিয়েছে তা স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) গোয়েন্দা দল আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে সে বেশকিছু তথ্য দেয়।
সিটিটিসির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন বলেন, তার নেতা মিজানুর রহমান। এই মিজানুরের নেতৃত্বে আরও দুজন কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে বাসে ওঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসে। এরপর সঙ্গে থাকা পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মিজানসহ ৩ জন পালিয়ে যেতে পারলেও স্থানীয়রা আল আমিনকে ধরে ফেলেন। পরে মিজানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সিটিটিসিকে জানায়, মহানগর ছাত্রদলের একজন নেতা আমির হোসেন রকির (২৫) নেতৃত্বে মিজান রাজনীতি করে। এই রকির নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে প্রথম দফায় মিডলাইন বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এই নেতার কাছ থেকে সব রশদ পেয়ে চারজন বাসে আগুন দেওয়া শুরু করে। এর বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে তারা।
প্রথম দিনের অবরোধে মিজান আল আমিনের কাছে বোতলে পেট্রোল ও টাকা দেয়। এসময় মিজান তাদের আশ্বস্ত করে যে, দল ক্ষমতায় আসতেছে। কোনো সমস্যা হবে না। বাস পোড়ানোর নির্দেশনা দেয়।
কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও সড়কে চলাচল করা বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা বোনাস বিকাশ করে দেয়। পরে দ্বিতীয় দফা অবরোধে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য ডাবল বোনাস ঘোষণা করা হয়।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, দ্বিতীয় দফা অবরোধে রাজধানীতে ১০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকালও (রোববার) রকির নির্দেশনায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গতকাল রকির নির্দেশে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে আগুন দেওয়ার সময়ে হাতেনাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রকি তার সহযোগী সাকিবকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিএনপির এক নেতার কাছে যাচ্ছিলেন। পরে আমরা তার পিছু নিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে পেট্রোলসহ তাকে গ্রেপ্তার করি। তার কাছ থেকে আমরা বেশ তথ্য প্রমাণ পেয়েছি। সে কি কি কাজ করেছে এই দুই দফা অবরোধে, কার কার নির্দেশনা ছিল, কারা টাকা দিয়েছে সব তথ্য আমরা পেয়েছি।
প্রথম দিনের অবরোধে কি পরিমাণ জ্বালাও পোড়াও করেছে সেই ফুটেজ আমরা তার মোবাইলে পেয়েছি। অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কারা কারা সহযোগিতা করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি। আমরা রকির কাছ থেকে নির্দেশ দাতাদের তথ্য পেয়েছি। রকির নেতৃত্বে আরও কয়েকটি দল সক্রিয় রয়েছে।
পুরস্কারের অর্থদাতা কারা জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা সবার তথ্য পেয়েছি৷ কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারো নাম প্রকাশ করছি না। তবে একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।