স্টাফ রিপোর্টার:
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২-এ শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কারপ্রাপ্ত ফারজিনা আক্তারের ঘরের স্বপ্ন পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই শিশুশিল্পীর জন্য জায়গা ও ঘরের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি ফারজিনার লেখাপড়ার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ ফেরার পর ফারজিনা ও তার পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এই আশ্বাস দেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক।
এসময় তিনি জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তিতে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে নতুন পোশাক ও ভালো খাবারের জন্য ফারজিনার হাতে নগদ বিশ হাজার টাকা তুলে দেন। এর আগে ফারজিনা পরিবারসহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আসার পর সবাইকে মিষ্টি মুখ করান জেলা প্রশাসক।
ঘরের পাওয়ার আশ্বাসে ফারজিনার বাবা মো. সায়েম বলেন, ডিসি স্যার আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের জায়গাসহ ঘর দেবেন। আমাকে বলেছেন নিশ্চিন্তে গ্রামে ফিরে যেতে। তিনি আমাদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন। আমার মেয়ে আমাকে অনেক উপরে নিয়ে গেছে। আমি জীবনেও কল্পনা করিনি প্রধানমন্ত্রীর সামনে যাব। মেয়ের কারণে ডিসি, চেয়ারম্যানরা আমার খোঁজ নিচ্ছে। প্রথমে এই পুরস্কারের মর্ম বুঝিনি। এখন সবাই এতো মূল্যায়ন করছেন, ফোন দিচ্ছেন, আমাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিচ্ছেন এটা দেখে বুঝতে পারছি আমরা কি পেয়েছি। আমার মেয়েকে নিয়ে আমার স্বপ্ন বড় হয়েছে এখন। তাকে অনেক লেখাপড়া করাতে চাই।
ছবির শ্যুটিংয়ের স্মৃতি মনে করে সায়েম বলেন, পুরো ছবিতে আমার মেয়ের মাত্র দুটি শট ছিল। একটা বিয়ের নৌকা আসে। তখন আমার মেয়েকে মামনি একটা দৌড় দাউ বলে আর সে নৌকা দেখতে দৌড় দেয়। দৌড়ে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়। এটাই সবার মন কেড়েছে। যার ফলে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে।
ফারজিনার বাবা সায়েম জানান, তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। বর্ষা মৌসুমে জেলের কাজও করেন। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ছিলান তাহিরপুর গ্রামে পৈতৃক ঠিকানা। স্ত্রী আছিয়া বেগম আর দুই মেয়ে এবং এক ছোট্ট ছেলে নিয়ে সংসার তার। জায়গা সংকুলান না হওয়া এবং অভাবে নিজ ভিটা বিক্রি করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন। সর্বশেষ কিছুদিন ধরে শ্বশুরবাড়িতেই থাকছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শিশুশিল্পী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে। আমরা তার বাবার সঙ্গে আলোচনা করে জেনেছি সে লেখাপড়া করছে। সে যেন ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে সেই ব্যবস্থা জেলা প্রশাসন করবে। তার বাসস্থানের যে সমস্যা সেটাও আমরা অচিরেই সমাধান করে দেব। এছাড়া বাংলাদেশের উপযুক্ত ও যোগ্য নাগরিক হিসবে গড়ে উঠতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
অনেকটা লাজুক স্বভাবের ফারজিনা আক্তার খুব একটা কথা না বললেও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার পেয়ে খুব অল্প কথায় তার ভালো লাগার কথা গণমাধ্যমকে জানায়। ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটির জন্য লাজুক ফারজিনা শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে।