ভিন্ন অনিয়মে নুয়ে পড়া বা তারল্য সংকটের ব্যাংকগুলোকে অর্থ ধার দিয়ে বিশেষ সহায়তা করতে রাজি হয়েছে সবল ১০টি ব্যাংক। তবে এসব ব্যাংকের ঋণে গ্যারান্টি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে অর্থ ধার দিতে রাজি হওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
যেসব সবল ১০ ব্যাংক ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া।
ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধারের অর্থ ব্যবহার করতে পারবে না জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া ঋণের টাকা ফেরত চাইলে সবল ব্যাংকগুলোকে তিনদিনের মধ্যেই সেই অর্থ ফেরত দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কোনো ব্যাংক ঋণ দেওয়ার জন্য কোনো টাকা নিতে পারবে না।
ধারের পরিমাণ প্রসঙ্গে হুসনে আরা শিখা বলেন, কোন ব্যাংককে কত টাকার ধার দিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে, সেটি নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া দুই ব্যাংকের সমঝোতার ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।
এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক তারল্য সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি চুক্তি সম্পন্ন করেছে। চুক্তি করা ব্যাংকগুলো হলো- ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংক। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক গ্যারান্টি চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু এখনও চুক্তি হয়নি। যেকোন সময় ব্যাংক দুটির সাথে গ্যারান্টি চুক্তি করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। অপরদিকে বাকি ব্যাংকগুলো এখন পর্যন্ত গ্যারান্টি চুক্তির আবেদন করেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, তারল্য সংকটে পড়া দেশের ব্যাংকগুলোকে অর্থ ধার দিয়ে বিশেষ সহায়তা করবে ভাল ব্যাংকগুলো এবং এক্ষেত্রে ধারের টাকার গ্যারান্টি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো কী পরিমাণ অর্থ ধার দিয়ে সহায়তা দেবে, সেটাও ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারল্য সংকটে পড়া পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ গ্যারান্টির চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে নির্ধারিত মেয়াদে বিশেষ ধার পাবে।
গ্যারান্টির প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। দুই ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির আবেদন করেছে। এখনও চুক্তি হয়নি।
সংকটে পড়া সাত ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে ২৯ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চেয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে হুসনে আরা শিখা বলেন, তারল্য ঘাটতি প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে। আজকের তারল্য ঘাটতি কালকের সাথে মিল নেই।
তারল্য সহায়তার ব্যাপারে হুসনে আরা শিখা বলেন, কবে সহায়তা পাবে, সেটি এখনও ঠিক হয়নি। তবে যখন ব্যাংকগুলো অর্থ ধার দিতে সম্মত হবে, ঠিক তখনই সহায়তা পাবে তারা। টাকার ধারের পরিমাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থ ধারের পরিমাণ এখন বলা যাবে না। এটা পরে ঠিক করা হবে।