Date: November 22, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / জাতীয় / নবীকে (সা.) নিয়ে ‘কটূক্তি’: প্রশাসনের উপস্থিতিতে কিশোরকে গণপিটুনি

নবীকে (সা.) নিয়ে ‘কটূক্তি’: প্রশাসনের উপস্থিতিতে কিশোরকে গণপিটুনি

September 05, 2024 09:43:54 AM   জেলা প্রতিনিধি
নবীকে (সা.) নিয়ে ‘কটূক্তি’: প্রশাসনের উপস্থিতিতে কিশোরকে গণপিটুনি

ফেইসবুকে নবী করিমকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে খুলনায় উপ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে ঢুকে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক কিশোরকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। পিটুনিতে ওই কিশোরের নিহত হওয়ার কথা নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। 
গতকাল বুধবার রাতে পৌনে ১২টার দিকে নগরের সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে উপ-পুলিশ কমিশনার (সাউথ) তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।
উৎসব মণ্ডল নামের ওই তরুণ খুলনার একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। উৎসব মন্ডল হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে, ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঠিক কী লেখা হয়েছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। 
পিটুনিতে ওই তরুণের নিহত হওয়ার কথা নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে উৎসব মণ্ডলকে উপ পুলিশ কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তাদের অভিযোগ ছিল, উৎসব মহানবীকে (সা.) নিয়ে ফেইসবুকে কটূক্তি করেছেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে শত শত লোক ওই কার্যালয় ঘেরাও করে। তারা উৎসবকে তাদের হাতে তুলে দিতে বিক্ষোভ করতে থাকে।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গিয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে রাত পৌনে ১২টার দিকে উত্তেজিত জনতা কার্যালয়ে ঢুকে উৎসব মণ্ডলকে গণপিটুনি দেয়।
ওই সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকেও তরুণের নিহত হওয়ার তথ্য প্রচার করে উত্তেজিত জনতাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
তরুণের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ওই এলাকা ত্যাগ করে।
ওই তরুণের সহপাঠীরা বলছেন, উৎসব মণ্ডলের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ওই পোস্ট দেওয়া হতে পারে। তারা এ বিষয়ে তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার তাজুল ইসলাম বলেন, “আটক উৎসব মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে আদালতের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তারপরও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। তারা উৎসবকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে।”
কী হয়েছিলো খুলনায় গতরাতে
পুলিশ কর্মকর্তা ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন, বুধবার বিকালে স্থানীয় কিছু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এক কিশোরকে সাথে করে পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে আসে।
তাদের অভিযোগ, ছেলেটি ইসলামের 'নবীকে কটূক্তি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে'।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, তখন অভিযুক্ত ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তার মোবাইল চেক করে ঘটনার সত্যতা পান তারা। তখন তিনি বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, “ঠিক আছে। প্রচলিত আইনে ওর বিচার হবে, মামলা হবে।”
কিন্তু উপ-কমিশনারের এই প্রস্তাব মানতে রাজি হননি ওই শিক্ষার্থীরা। "তাদের দাবি, দেশের প্রচলিত আইনে নয়, বিচার করতে হবে ওদের আইন অনুসারে," বলেন মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। "ওরা বলে যে আমাদেরকে পাঁচ মিনিট সময় দেন। আমাদের হাতে তুলে দেন। ওদের প্রচলিত আইন হল কতল করা। আমরা তো সেই পারমিশন দিতে পারি না,” বলেন তিনি।
এই ঘটনাপ্রবাহের মাঝেই ওই শিক্ষার্থীরা অন্যান্য মাদ্রাসার লোকজন খবর দেয়। সাথে ইমাম সমিতির লোকজনও পুলিশ কমিশনারের অফিসের সামনে এসে জড়ো হয়।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলছিলেন, বিকাল থেকে আস্তে আস্তে ১০ জন, ২০ জন করে বাড়তে বাড়তে একটা সময় পুলিশ কমিশনারের অফিসের সামনে কয়েক হাজার লোক জমে যায়। সাথে বাড়তে থাকে উত্তেজনা।
ফেসবুকে কটূক্তি করার অভিযোগে যে কিশোরকে ধরে আনা হয়, তাকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার হাতে তুলে দেয়া নিয়ে অভিযোগকারীদের সাথে পুলিশের দীর্ঘ বাকবিতণ্ডা চলে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে।
পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, স্থানীয় ইমাম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অভিযোগকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ওই মাদ্রাসা ছাত্রেরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকে।
এরপর সেনাবাহিনী-নৌবাহিনীর উপস্থিতিতেই পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে একসময় কয়েকশো লোক ঢুকে পড়ে।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, "শত শত মানুষ ধাক্কা দিয়ে আমার অফিসে ঢুকে যায় এবং ওকে মারধর করে। ওরা বলে যে ও মারা গেছে। তারপর আস্তে আস্তে সবাই বের হয়ে যায়।”
স্থানীয় সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, উপ-কমিশনারের অফিসে ছাত্র-জনতার ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটে রাত ১১টার দিকে এবং তারা বের হয় পৌনে ১২টার দিকে।
তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এরপর ছেলেটিকে সেনাবাহিনী নিয়ে গেছে। সেনাবাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরেই গণপিটুনিতে ছেলেটি মারা গেছে কী-না সে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাষ্য পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমে গণপিটুনির শিকার কিশোর ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন বলে খবর প্রকাশিত হলেও, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে নিশ্চিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। ।

খুলনার স্থানীয় সাংবাদদাতারা জানিয়েছেন, রাতে স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়েছে, ছেলেটি মারা গেছে।
ঘটনার সাক্ষী খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মি. ইসলাম বলেছেন, তিনি 'নিশ্চিত নন, কনফিউজড'। “তবে ওকে লাশের ব্যাগে করে নিয়ে গেছে, সেটা আমরা দেখলাম। এখন সে জীবিত নাকি মৃত, তা এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না,” তিনি যোগ করেন।
“ওখানে পুলিশের লোকজন তো অল্প কয়েকজন ছিল, সব তো ওরাই (সেনাবাহিনী) হ্যান্ডেল করছে। এখন ও জীবিত নাকি মৃত, সে বিষয়ে আমরা কনফিউজড। আমরা পরে আর যোগাযোগ করতে পারি নাই,” বলেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি