Date: November 22, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / জাতীয় / নবায়নযোগ্য জ্বালানির চেয়ে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে

নবায়নযোগ্য জ্বালানির চেয়ে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে

December 18, 2022 11:40:30 PM   স্টাফ রিপোর্টার
নবায়নযোগ্য জ্বালানির চেয়ে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার: ক্রমাগত বেড়েই চলেছে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি তেলের ব্যবহার। ওই অনুপাতে আশানুরূপভাবে বাড়ছে না নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের কৃষিখাতে ১১ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়েছে। যা মোট ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ১৬ দশমিক ৬৪ ভাগ। আর আসন্ন ২০২২-২০২৩ সালের কৃষি সেচ মৌসুমে ডিজেল ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ১২৯ মেট্রিক টন ও লুব অয়েল ৪৫ হাজার ৯৭১ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল প্রয়োজন হবে। তাছাড়া চাহিদা মেটাতে দেশে আগামী ১০ বছরে ২৯ লাখ ৩৮ হাজার টন ডিজেলের আমদানি বাড়াতে হবে। সরকার কৃষি সেচে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়ার মধ্যে কৃষিতে তেলের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জীবাশ্ম-জ্বালানির ওপর থেকে সারাবিশ্ব যখন ক্রমেই নির্ভরতা কমাচ্ছে চাচ্ছে, তখন এদেশে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে। মূলত অনিশ্চিত জ্বালানি নিরাপত্তা, পরিবেশ দূষণ এবং তেলভিত্তিক ভূ-রাজনীতির কারণেই বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসছে। যদিও এখনো জীবাশ্ম-জ্বালানিই বিশ্বের মোট জ্বালানি চাহিদার বেশিরভাগ পেট্রোলিয়াম তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক জ্বালানি যোগান দিচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কপ-২৭ (জলবায়ু সম্মেলন) সম্মেলনেও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে চুক্তি করার দাবি উঠেছে।  যেখানে স্পষ্টভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। আর তার লক্ষ্য হচ্ছে কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহারের পরিবর্তে ‘ক্লিন এনার্জি’ বা পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়ানো।


সূত্র জানায়, আগামী ২০৩০ সালের পর্যন্ত দেশে জ্বালানি তেলের যে চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে তাতে দেখা যায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৫ টন ডিজেল আমদানি করা হয়েছে। যা ২০৩০-২০৩১ অর্থবছরে বেড়ে ৬৯ লাখ টন হবে।  ২০২১-২২ অর্থবছরে জেট ফুয়েল আমদানি করা হয় ৪ লাখ ১০ হাজার ৯৮২ মেট্রিক টন। যা ১০ বছরে বেড়ে হবে ৬ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে অকটেন আমদানি করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫১৪ টন, যা ১০ বছরে উন্নীত হবে ৬ লাখ ৩০ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ফার্নেস অয়েল আমদানি করা ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৬ টন; যা ১০ বছর পর হবে অর্থবছরে ৫ লাখ টন। মেরিন ফুয়েল ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে ১৬ হাজার ৫০৬ টন; যা বেড়ে ২০৩০-৩১ অর্থবছরে দাঁড়াবে ২ লাখ ৩০ হাজার টন। তবে নতুন রিফাইনারি না হলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি ১৫ হাজার মেট্রিক টনের ঘরেই ঘোরাফেরা করবে। তবে সরকার সম্প্রতি বেসরকারি খাতকে জ্বালানি তেল আমদানি, পরিবহন এবং খুচরা বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে যদি দেশে কোনো নতুন তেল পরিশোধনাগার গড়ে ওঠে তাহলে বিদ্যমান চিত্র বদলে যাবে। যদিও পৃথিবীতে জ্বালানি ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তন আসছে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিশ্ব নতুন জ্বালানিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে রিফাইনারিগুলোকে তখন বেকার বসে থাকবে।


সূত্র আরো জানায়, এদেশে পরিবহন এবং সেচে জীবাশ্ম জ্বালানি তেলের সব চাইতে বেশি ব্যবহার হয়। তবে সরকারের তরফ থেকে গ্রিন এনার্জির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে সৌর, বায়ুর মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা সংরক্ষণ এবং ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণ বেশি। সেজন্যই সারা বিশ্ব এনার্জি ট্রানজিশন করে রিনিউয়েবলে যাচ্ছে। আর নাতিশীতোষ্ণ দেশ হয়েও যদি এদেশে রিনিউয়েবল না বাড়িয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ে তাহলে রিনিউয়েবলে যে সম্ভাবনা আছে সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে দেশে লাগাতার দূষণের মাত্রা বাড়তেই থাকবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল জানান, জীবাশ্ম জ্বালানির একটি সীমিত সম্পদ। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ তা আমদানি করে থাকে। ফলে হুমকির মুখে থাকে জ্বালানি নিরাপত্তা। কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদ দেশীয় সম্পদ এবং আনলিমিটেড রিসোর্স। যা জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে। দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে দেশের উচিত ধীরে ধীরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাওয়া আর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা।
অন্যদিকে সম্প্রতি এক সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ক্লিন এনার্জির বিস্তারে সরকার পরিকল্পনা অনুসারে অগ্রসর হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উৎপাদন করা হবে। এমনিতেই বাংলাদেশ কার্বন ইমিশন কম করে। সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ ভাগ পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।