পাবনায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় ধারাল অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর আবারো হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে আন্দোলনটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। না হলে কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচির ঘোষণার হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান আন্দোলনটির নেতাকর্মীরা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী বিভাগের সদস্য রুফায়দাহ পন্নী, তথ্য সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শফিকুল আলম ওখবাহ, ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি আল আমিন সবুজ, নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি আরিফ উদ্দিন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একই সন্ত্রাসীরা একই স্থানে একই সংগঠনের লোকজনের উপর বারবার হামলা করছে, হত্যা করছে, কার্যালয় বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট করছে, অগ্নিসংযোগ করছে। আইন আদালতের দ্বারস্থ হয়েও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এভাবে আর কতদিন চলবে। সব মানুষগুলোকে উচ্ছেদ করে এরা ক্ষান্ত হবে? সব মানুষগুলোকে খুন করলে প্রশাসন, সরকারের টনক নড়বে?
গত ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চরঘোষপুর কার্যালয়ে একই জায়গায় এই উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল। সেদিন রাতে প্রায় ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে সুজন মন্ডলকে হত্যা করে তারা। আহত করে আরো ১০ সদস্যকে। সেই মামলার আসামিরা জামিনে বের হয়ে বাদীকে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা হামলার হুমকি দেয়। ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে কয়েকদিন আগেই থানায় জিডি করা হয়। সন্ত্রাসীরা এতটাই বোপরোয়া যে, প্রশাসনও সন্ত্রাসীদের নিবৃত করতে পারল না।
থানা আদালতের তোয়াক্কা না করে গত রবিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ২০-২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী জামিনে থাকা আসামিদের নেতৃত্বে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় ধারাল অস্ত্র নিয়ে সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চরঘোষপুর এলাকায় মামলার বাদীর বাড়ির পাশে নফসারের মোড় নামক স্থানে হামলা চালায়। তারা হেযবুত তওহীদের সদস্যদের এলোপাতাড়ি কোপায় এবং গুলি করে। এঘটনায় হেযবুত তওহীদের অন্তত ১০ জন সদস্য আহত হয়েছে। তারা পাবনা সদর হাসপাতালে কাঁতড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ২০২২ সালে এই স্থানে হামলা করেই সুজন মন্ডলকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসীরা।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিগত সরকারের আমলে সুজন হত্যা মামলাটি রাজনৈতিক মামলায় পরিণত করা হয়। ফলে আসামিরা সহজেই জামিনে বেড়িয়ে আসে। এরপর তারা শহীদ সুজন মন্ডলের পরিবার ও মামলার বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। তারা মামলা চালিয়ে গেলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে আসামিরা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। গত বছরের ৫ আগস্ট বিগত সরকারের পতনের পর আইন শৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির সুযোগে মামলার বাদী সেলিম শেষের বাড়িতে হামলা চালায় তারা। এসময় তারা সেলিম শেখের বাড়ি ও হেযবুত তওহীদের স্থানীয় চরঘোষপুর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। সেলিম শেখের বাড়িতে অগ্নিসংযোগও করা হয়।
একই জায়গায় একই হামলাকারী আসামিদের দ্বারা বারবার হামলার ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দ। তারা হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার এবং এমন ঘটনার পুনারাবৃত্তি যেন আর না ঘটে তার জন্য প্রশাসনের নিকট যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
এছাড়াও মানববন্ধনে বক্তারা হামলাকারী সন্ত্রাসীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। না হলে কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচির ঘোষণার হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন বক্তারা।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট ২০২২ মঙ্গলবার রাতে একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হেযবুত তওহীদের পাবনা স্থানীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। এতে হেযবুত তওহীদের ১০ সদস্য আহত হন। এরমধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হলে সেখানেই রাত আড়াইটায় সুজন শেখ নামে এক সদস্য মারা যান। এ ঘটনার পর সারাদেশে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা রাস্তায় নেমে আসেন। তারা সুজন হত্যার বিচারের দাবীতে মানবববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এ ঘটনায় ঐদিন রাতেই হেযবুত তওহীদের সাবেক জেলা সভাপতি সেলিম শেখ বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় মামলা করে। পরে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়। সকল আসামিরা বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছে।