ডেস্ক রিপোর্ট:
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ২৫ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন আব্বাস শেখ। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রিফলতলা গ্রামের যুবক আব্বাসের উচ্চতা তিন ফুট দুই ইঞ্চি। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে বলীয়ান আব্বাস বর্তমানে রামপাল সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র।
আব্বাস খর্বাকৃতির হওয়ায় সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন খুলনার ডাকবাংলা এলাকার সেলিম গাজীর মেয়ে (খর্বাকৃতি) সোনিয়া খাতুনকে (২০)।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাতে আব্বাসের বাড়িতে বসে তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কথায় কথায় আব্বাস তুলে ধরেন নিজের সংগ্রামী জীবনের গল্প। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেকেই আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে কথা বলতো। কিন্তু কখনো কারও কথায় থেমে যাইনি। অনেকেই বলেছে আমি বিয়ে করতে পারব না, আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে আমার পরিবার সোনিয়াকে পছন্দ করে। চলতি বছরের ২০ অক্টোবর পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ সোনিয়াকে দেখতে যাই এবং তাকে আমার পছন্দ হয়। তখন রেজিস্ট্রি করে আসি। গতকাল বৃহস্পতিবার আমার গায়ে হলুদ এবং শুক্রবার আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বরযাত্রী নিয়ে বউ আনতে কনের বাড়ি রওনা হব।
ঢাকা পোস্টকে আব্বাস বলেন, পরিবারের পছন্দে বিয়ে করেছি। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারি।
আব্বাসের ভাগনে সাইফুল বলেন, মামার বিয়েতে খুব আনন্দ করছি, খুব খুশি আমরা।
আব্বাসের মা নাজমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক হাতে বই আর অন্য হাতে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছি। অনেক কষ্টে মানুষের কথা শুনে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। এছাড়া এলাকার অনেক লোক হাসিঠাট্টা করে বলত ওকে (আব্বাস) কে মেয়ে দেবে? অনেক কষ্ট করে কথাগুলো সহ্য করতাম। আমার দুই মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে আব্বাস। সেই ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে করাচ্ছি। আপনারা সবাই দোয়া করবেন। ওরা যেন শান্তিতে থাকতে পারে।
আব্বাসের জীবনের গল্প অনুপ্রাণিত করেছে রামপাল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আশরাফুল আলমকে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রামপালের শ্রিফলতলা গ্রামের আব্বাস শেখ রামপাল সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার বিয়েতে সে নিজে থানায় এসে আমাকে দাওয়াত দিয়ে গেছে। আমি তার গায়ে হলুদে অতিথি হিসেবে গিয়েছিলাম। আমি আমার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তাকে নিয়ে একটি পোস্ট করেছিলাম। আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সমাজের বিত্তবানদের আব্বাসকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এই নব দম্পতির জন্য শুভ কামনা।