Date: November 22, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / জাতীয় / বঙ্গবন্ধু রেলসেতু: কাজ এগিয়েছে অর্ধেকেরও বেশি

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু: কাজ এগিয়েছে অর্ধেকেরও বেশি

February 18, 2023 09:32:13 PM   স্টাফ রিপোর্টার
বঙ্গবন্ধু রেলসেতু: কাজ এগিয়েছে অর্ধেকেরও বেশি

রেলসেতু প্রকল্পে ব্যয় প্রায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা
উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ খাতে হবে নবদিগন্তের সূচনা
খুলবে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার
স্টাফ রিপোর্টার:
যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। মহামারী করোনাকালেও থেমে নেই রেল সেতুর নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে এর কাজ এগিয়েছে প্রায় ৫৩ শতাংশ, যা অর্ধেকেরও বেশি। দৃশ্যমান হয়েছে এক কিলোমিটারেরও বেশি। যদিও প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত, তবে কাজ শেষ হবে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। জাপান ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে প্রায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলসেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাইকা। যমুনার উপর রেলসেতুটি নির্মাণ হলে একদিকে যেমন উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ খাতে নবদিগন্তের সূচনা হবে, অন্যদিকে খুলবে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার। বঙ্গবন্ধ সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে যমুনার দুই প্রান্তে দুটি ভাগে দেশি, বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চলছে এ সেতুর নির্মাণ কাজ।
জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধ সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধ সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে পারাপার হওয়ায় সময় অপচয়ের পাশাপাশি শিডিউল বিপর্যয়ে বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এ সমস্যার সমাধানে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যায়ে রেল সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। ২০২৪ সালের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিরা।
জানা যায়, ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ এ রেল সেতুর মোট ৫০টি পিলারের মধ্যে ইতোমধ্যে ১০টি পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আরো কয়েকটি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ সমাপ্তের পথে। রেল সেতুটি বাস্তবায়িত হলে বিদেশ থেকে দেশে আসা মালবাহী ট্রেন রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি চলাচল করতে পারবে। এতে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধ সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। রেল সেতুটি নির্মিত হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পরিবহন খরচ যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
রেল বিভাগের তথ্য মতে, ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত করবে। এ ছাড়া ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে বলে রেল বিভাগ কর্তৃপক্ষ মনে করছে। জানা যায়, এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখেরও বেশি টাকা। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটিতে ৫০টি পিয়ার এবং দু’টি পিয়ারের মাঝখানে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য গড়ে ১০০ মিটার। এরইমধ্যে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর প্রান্ত থেকে ৩৪ নম্বর থেকে ৫০ নম্বর মোট ১৭টি পিয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ৩৩টি পিয়ারের মধ্যে বেশ কয়েকটি আংশিক স্থাপন করা হয়েছে। আর ৪০ নম্বর থেকে ৫০ নম্বর পিয়ার পর্যন্ত ১০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। ৩৯-৪০ নম্বর পিয়ারে আরও একটি স্প্যান বসানোর কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, সেতুটিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে তাতে আলাদাভাবে রং করার প্রয়োজন হবে না। এটি বেশ টেকসই। এর ফলে আগামী ১০০ বছরেও সেতুর কাঠামোয় কোনো মরিচা ধরবে না। এমনকি আবহাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে নিজ থেকেই বদলে যাবে গার্ডারের রং। প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৩ শতাংশ। এছাড়া সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি নদীর দুপাড়ে সমান তালে এগিয়ে চলেছে মাটি ভরাট ও নতুন সংযোগ লাইন বসানোর কাজ। এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু ও রেল সেতুর পশ্চিমেই গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প পার্ক। এখানে উত্তর জনপদের ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলে শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তারা। বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ হলে এই শিল্পাঞ্চল থেকে রেলপথ, সড়কপথ, স্থলপথ ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোন দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পরিবহনও সহজ হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী মহল। এতে এই জনপদের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের অপার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আবু ইউসুফ সূর্য জানান, দীর্ঘ দিনের আকাঙ্খার ফল রেল সেতু নির্মাণ হতে চলেছে। এই সেতু নির্মাণ হলে সড়কপথ, স্থলপথ ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোনো দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এ সেতুর মাধ্যমে যাত্রী সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যেরও দ্রুত প্রসার ঘটবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।