রাকীব আল হাসান:
আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, মানব জাতির মুকুটমনি মোহাম্মদ (সা.) এর জীবনী ও হাদীস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কয়েকটি বিষয়ে তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কেউ দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে। আল্লাহ যেমন তার কোর’আনে দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষেধ করে দিয়েছেন, তাঁর নবীও (সা.) নিষেধ তো-করেছেনই, তার উপর যখনই কোন বাড়াবাড়ি দেখেছেন তখনই রেগে গেছেন। একদিন একজন লোক এসে আল্লাহর রসুলের (সা.) কাছে অভিযোগ করলেন যে অমুক লোক নামায লম্বা করে পড়ান কাজেই তার (পড়ানো) জামাতে আমি যোগ দিতে পারি না। শুনে তিনি এত রাগান্বিত হয়ে গেলেন যে -বর্ণনাকারী আবু মাসউদ (রা.) বলছেন যে- আমরা তাকে এত রাগতে আর কখনও দেখি নি (বোখারী)।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে মাসলাহ জানতে চাইলে বিশ্বনবী (সা.) প্রথমে তা বলে দিতেন। কিন্তু কেউ যদি আরও একটু খুঁটিয়ে জানতে চাইতো তাহলেই তিনি রেগে যেতেন। কারণ তিনি জানতেন ঐ কাজ করেই অর্থাৎ ফতওয়াবাজী করেই তার আগের নবীদের জাতিগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।
এছাড়াও আল্লাহর রসুল ঐক্য যাতে না ভাঙ্গে সে জন্য সদা শংকিত ও জাগ্রত থেকেছেন এবং এমন কোন কাজ যখন কাউকে করতে দেখেছেন যাতে ঐক্য নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে তখনও রেগে গেছেন। একদিন দুপুরে আব্দাল্লাহ বিন আমর (রা.) রসুলাল্লাহর গৃহে যেয়ে দেখেন তাঁর মুখ মোবারক ক্রোধে লাল হয়ে আছে। কারণ তিনি দু’জন আসহাবকে কোর’আনের একটি আয়াত নিয়ে মতবিরোধ করতে দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি (সা.) বললেন- কোর’আনের আয়াতের অর্থ নিয়ে যে কোন রকম মতভেদ কুফর। নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহ (উম্মাহ) তাদের (উপর অবতীর্ণ) কিতাবগুলির (আয়াতের) অর্থ নিয়ে মতবিরোধের জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে। তারপর তিনি আরও বললেন (কোর’আনের) যে অংশ (পরিষ্কার) বোঝা যায় এবং ঐক্যমত আছে তা বল, যেগুলো বোঝা মুশকিল সেগুলোর অর্থ আল্লাহর কাছে ছেড়ে দাও (মতবিরোধ কোরোনা)। (আব্দাল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে মুসলিম, মেশকাত)
কিন্তু ইতিহাস বলে- রসুল (সা.) এর অত ক্রোধেও অত নিষেধেও কোন কাজ হয় নি। তাঁর জাতিটিও ঠিক পূর্ববর্তী নবীদের জাতিগুলির মতো দীন নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে অতি মুসলিম হয়ে মসলা-মাসায়েলের তর্ক তুলে শিয়া-সুন্নী, হানাফি-হাম্বলী, সালাফি-দেওবন্দী ইত্যাদি হাজারো বিভেদ সৃষ্টি করে হতবল, শক্তিহীন হয়ে শত্রুর কাছে পরাজিত হয়ে তাদের গোলামে পরিণত হয়েছে।
যাহোক, কী ধরনের বিষয়ে আল্লাহর রসুল (সা.) রেগে যেতেন তা দেখা গেল। এবার দেখা যাক কী ধরনের বিষয়ে তিনি ক্রোধান্বিতও হন নি।
(ক) ব্যভিচার: এক যুবক একদিন রসুলাল্লাহর কাছে এসে বলল “আমি ইসলাম গ্রহণ করতে চাই, কিন্তু আমি ব্যভিচার (যেনা) থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারব না”। হাদীস বর্ণনাকরী বর্ণনা করছেন যে সেই মহামানব (দ.) (রাগ তো করলেন না-ই বরং) ঐ যুবককে স্নেহভরে নিকটে ডেকে বসিয়ে বললেন তোমার মা, বোন, মেয়ের সাথে কেউ ব্যভিচার করলে তুমি কি তা পছন্দ করবে? সেই যুবক রক্তাক্ত চোখে জবাব দিলো, “কেউ তা করার আগেই আমি তাকে দু’টুকরো করে কেটে ফেলবো।” মহানবী (সা.) বললেন “তাই যদি হয় তবে তুমি ভুলে যাচ্ছো কেন যে তুমি যার সাথে ব্যভিচার করবে সেও তো কারো মা বা বোন বা মেয়ে (বোখারী )।”
(খ) সহিহ হাদীসে বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ আছে যেখানে কোন লোক নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে ব্যভিচার করে ফেলেছেন। পরে শুধু অনুতপ্ত হয়েই তারা ক্ষান্ত হন নি, তারা আল্লাহর দেয়া শাস্তি গ্রহণ করে পবিত্র হতে চেয়েছে, তারা আল্লাহর রসুলের (সা.) কাছে এসে তাদের ব্যাভিচারের কথা প্রকাশ করে দিয়ে শাস্তি চেয়েছেন। ঐসব ঘটনায় বিশ্বনবী (সা.) কী করেছেন তা লক্ষ্য করার বিষয়। কোন সামান্যতম রাগ করেন নি বরং সমস্ত ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন। ভাবটা এই রকম যে তুমি অপরাধ করে ফেলেছো তো ফেলেছোই সেটা আবার প্রকাশ করতে এসেছো কেন? তুমি না বললে তো কেউ জানবেই না যে তুমি কী করেছো। কাজেই ও গোপন ঘটনা গোপনই রাখো।
শাস্তি পেতে কৃতসংকল্প সেই লোককে যখন তিনি কিছুতেই বিরত করতে পারেন নি তখন তিনি তাকে উকিলের মত জেরা করেছেন, এই উদ্দেশ্যে যে যদি ঐ লোকের বর্ণনায় কোন খুঁত বের করতে পারেন তবে হয় শাস্তি দেবেন না বা লঘু শাস্তি দেবেন। উদাহরণ দিচ্ছি- একজন লোক মসজিদে (নববী) এসে বিশ্বনবীকে (সা.) বললেন ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি ব্যভিচার করেছি। কোন জবাব না দিয়ে মহানবী (সা.) ঘুরে অন্যদিকে হয়ে বসলেন। ঐ লোকটি ঘুরে রসুলাল্লাহর (সা.) সামনে যেয়ে আবার ঐ কথা বললেন এবং তিনি কোন জবাব না দিয়ে আবার ঘুরে অন্যদিকে হয়ে বসলেন। চারবার ওমনি করার পর অর্থাৎ প্রকাশ্যে চারবার ব্যাভিচারের ঘোষণা দেবার পর আল্লাহর রসুল (সা.) তাকে বিধিবদ্ধ শাস্তির আদেশ দিলেন (আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বোখারী, মুসলীম, মেশকাত)।
প্রকাশ্যে জনসমক্ষে চারবার ব্যভিচারের স্বীকৃতি ঘোষণা না করলে মহানবী (সা.) শাস্তির আদেশ দিতেন না। অনেক সময় প্রথম ঘোষণার পর অপরাধীকে ফেরৎ পাঠিয়ে দিতেন অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইবার জন্য। চারবার ফেরৎ এসে স্বীকৃতি ঘোষণার পরও তাকে জেরা করতেন বর্ণনায় খুঁত ধরার জন্য [ইয়াযীদ বিন নুয়াইম (রা:) এবং আবু হোরায়রা (রা:)]। যখন কোন মানুষ মহানবীর (সা.) দরবারে এসে অর্থাৎ প্রকাশ্য জনসমক্ষে সবাইকে শুনিয়ে রসুলাল্লাহকে বলতেন যে তিনি ব্যভিচার করেছেন শুধু তখনই আল্লাহর নবী (সা.) বুঝে যেতেন যে ঐ লোকটির লক্ষ্য অত্যন্ত উচ্চ। তিনি চাচ্ছেন যে তার অপরাধে, পদস্খলের শাস্তি এই দুনিয়াতেই হয়ে যাক, যাতে তিনি পবিত্র হয়ে পরজগতে প্রবেশ করতে পারেন, যেখানে ঐ অপরাধের জন্য আবার শাস্তি হবে না। কিন্তু তা জেনেও তিনি তার শাস্তি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করতেন। যখন দেখতেন যে ঐ লোক এই দুনিয়াতেই পবিত্র হবার জন্য এমন কৃতসংকল্প যে তিনি চার চারবার প্রকাশ্যে তার অপরাধের কথা ঘোষণা করছেন শুধু তখন তিনি তাকে আল্লাহর শরিয়াহ অর্থাৎ এই দণ্ডবিধি (চবহধষ ঈড়ফব) মোতাবেক শাস্তির আদেশ দিতেন।
একজন লোককে মদ খেয়ে মাতলামির জন্য শরাহ মোতাবেক শাস্তি দেয়া হলো, দিলেন বিশ্বনবীই (সা.)। কিছুদিন পর তাকে আবার নবীর (সা.) পবিত্র দরবারে ধরে নিয়ে আসা হলো ঐ একই অপরাধে অর্থাৎ মদ পান করার জন্য। এবারও তিনি যথাযথ শরাহ মোতাবেক তার শাস্তির আদেশ দিলেন। কিন্তু হাদীস বর্ণনাকারী স্বয়ং ওমর (রা:) কোনও উল্লেখ করলেন না যে রসুলাল্লাহ (সা.) কোন রকম রাগ প্রকাশ করলেন বা কোন কসমও করলেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে একজন বলে উঠলেন- এর উপর আল্লাহর লানত হোক, একই অপরাধের জন্য একে কতবার হাযির করা হচ্ছে। ঐ সাহাবার কথা শুনে মহানবী (সা.) বললেন, “একে লানত করো না, আল্লাহর নামে আমি কসম করে বলছি এ আল্লাহ ও তার রসুলকে ভালবাসে (ওমর বিন খাত্তাব (রা:) থেকে বোখারী)।” লক্ষ্য করুন, বিশ্বনবী (দ.) ঐ মদখোরের পুনঃ পুনঃ মাতলামীর জন্য কসম খেলেন না, কসম খেলেন লোকটির সমর্থনে।
আরেক দিন একজন লোক মদ খেয়ে মাতাল হয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি দিচ্ছিলো। লোকজন তাকে ধরে মহানবীর (সা.) দরবারে নিয়ে যাবার জন্য রওয়ানা হলো। পথে ইবনে আব্বাসের (রা.) বাড়ী পড়ে। লোকজন ইবনে আব্বাসের বাড়ীর কাছে আসতেই লোকটি হঠাৎ সবার হাত ছাড়িয়ে দৌঁড়ে ইবনে আব্বাসের (রা.) বাড়ীতে ঢুকে তাকে জড়িয়ে ধরলো। লোকজন তাকে তার কাছে থেকে ছাড়াতে না পেরে আল্লাহর রসুলের (সা.) কাছে যেয়ে ঘটনা বলল। রসুলাল্লাহ (সা.) ঘটনা শুনে হেসে ফেললেন এবং বললেন “সে তাই করেছে নাকি?” বিশ্বনবী (দ.) কোন শাস্তির কথা বললেন না।
(গ) নামায। একদিন কিছু আসহাব বিশ্বনবীর (সা.) কাছে অভিযোগ করলেন যে অমুক গোত্রের সমুদয় লোকই ফযরের নামায সময় মতো পড়ে না। শুনে আল্লাহর রসুল (সা.) বললেন “তাই নাকি?” অতঃপর ঐ গোত্রের লোক সকলকে ডেকে আনা হলো। মহানবীর (সা.) প্রশ্নের উত্তরে তারা স্বীকার করলেন যে তারা ফযরের নামায ফযরের সময় পড়েন না, ঘুমিয়ে থাকেন এবং অনেক পরে ঘুম থেকে ওঠার পর পড়েন। কারণ হিসেবে আরজ করলেন যে তারা সবাই কৃষি কাজ করেন। দিনের প্রচণ্ড রৌদ্রে মাঠে কাজ করা সম্ভব নয় বলে রাত্রে কাজ করেন এবং শ্রান্ত-ক্লান্ত হয়ে শেষ রাত্রের দিকে ঘুমিয়ে পড়েন এবং ফযরের নামায সময়মত পড়া হয় না। শুনে আল্লাহর রসুল (সা.) তাদের অনুমতি দিয়ে দিলেন তারা যেমনভাবে নামায পড়ছে তেমনি পড়ার জন্য (মুসলিম)।
একটি পুরো গোত্র সময় মতো নামায পড়ে না জেনেও বিশ্বনবী (সা.) কোন রকম রাগ করেছেন বলে হাদীসের বর্ণনায় উল্লেখ নেই। একবার মহানবীকে (সা.) জানানো হলো যে ওমুক লোক চুরি করে। তিনি রাগও করলেন না, উত্তেজিতও হলেন না, এমনকি ঐ লোকটিকে ধরে আনতেও বললেন না। সহজভাবে জিজ্ঞেস করলেন লোকটি কি নামায পড়ে? তাকে জানানো হলো যে, হ্যাঁ, সে নামায অবশ্য পড়ে। শুনে মহানবী (দ.) বললেন নামাযই চুরি থেকে একদিন বিরত করবে।
একদিন আল্লাহর রসুল (দ.) তার আসহাবসহ মসজিদে নববীতে বসা আছেন এমন সময় একজন গ্রাম্য আরব যে নিজেও ওখানে সবার সঙ্গে বসা ছিল উঠে মসজিদের ভেতরেই পেশাব করতে শুরু করল। সাহাবারা সবাই চেঁচিয়ে উঠলেন- এই থামো থামো (স্বভাবতই)। কিন্তু আল্লাহর রসুল (সা.) তার সাহাবাদের বললেন ওকে বাধা দিও না, করতে দাও। তার আদেশে আসহাব বিরত হলেন এবং লোকটি পেশাব করা শেষ করলো। তারপর বিশ্বনবী (সা.) ঐ লোকটিকে কাছে ডেকে বুঝিয়ে বললেন যে এই জায়গা আল্লাহর এবাদতের জায়গা, আল্লাহকে স্মরণ ও কোর’আন পাঠের জায়গা। কাজেই এখানে কারো পেশাব পায়খানা করা উচিৎ নয়। তারপর তার আদেশে পানি এনে মসজিদ ধুয়ে ফেলা হলো [আবু হোরায়রা (রা:) এবং আনাস (রা:) থেকে বোখারী ও মুসলিম]। হাদীসের বর্ণনা এবং ভাষা থেকে একথা পরিষ্কার যে এমন একটা ঘটনায় তিনি বিন্দুমাত্র রাগ করেন নি, একটুকুও উত্তেজিত হন নি, লোকটাকে পেশাব শেষ করতে দিয়েছেন ও তারপর তাকে কাছে ডেকে শান্তভাবে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
পাঠক, মোহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে আল্লাহ যে দীন মানব জাতির জন্য পাঠিয়েছিলেন সেই দীন এবং বর্তমানে আমরা ইসলাম বলে যে দীনটাকে নিষ্ঠাভরে পালন করি এই দুই দীন পর¯পর বিরোধী-বিপরীতমুখী। যে হাদীসগুলি উল্লেখ করেছি সেগুলো একটা একটা করে দেখুন আর চিন্তা করুন। দেখতে পাবেন যে সব ঘটনায় আল্লাহর রসুল (সা.) বিন্দুমাত্র বিচলিত হন নি, সেইসব ঘটনায় বর্তমানের ধর্মীয় নেতারা কী করবেন। মসজিদে পেশাব করলে তো মেরেও ফেলতে পারেন। অন্যদিকে যে কাজে যে ব্যাপারগুলোয় সেই সর্বরিপুজয়ী সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব রেগে লাল হয়ে গেছেন, উত্তেজনা ভরে কসম খেয়েছেন সেই হাদীসগুলি একটু দেখুন। দেখবেন সেই ব্যাপারগুলো শুধু যে মহাউৎসাহ ভরে করা হচ্ছে তাই নয়, মহা পুণ্যের মহা সওয়াবের কাজ মনে করে করা হচ্ছে। যে কাজগুলোকে বিশ্বনবী (সা.) কুফর বলে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই কাজ যে যত বেশি করছে আজকের এই “দীন ইসলামের” দৃষ্টিতে সে তত পাক্কা মুসলিম। লক্ষ্য করলে আরও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখতে পাবেন। সেটা হচ্ছে এই যে, ব্যক্তিগত মহাপাপ গুনাহে কবিরার ব্যাপারেও তিনি কিছুমাত্র রাগেন নি। কিন্তু আজ আমাদের কাছে যে সব বিষয়ের কোন গুরুত্ব নেই- যেমন জাতীয় ঐক্য, লক্ষ্য আকীদা, শৃঙ্খলা, গুরুত্ববোধ ইত্যাদি এককথায় যেসব বিষয়গুলি পৃথিবীতে আল্লাহর সংবিধান ও শাসন-প্রতিষ্ঠাকে ব্যাহত করতে পারে সেগুলির প্রত্যেকটায় তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন। কারণ হলো এই যে, আল্লাহর বিধান কোর’আন এবং রসুলের (সা.) হাদীস অনুযায়ী মানুষের জীবন শাসন ও পরিচালন করা হলে, আল্লাহর দেয়া আইন অনুযায়ী আদালতে বিচার করা হলে, আল্লাহর দেয়া দণ্ডবিধি অনুযায়ী অপরাধের শাস্তি দেয়া হলে সমাজ থেকে ব্যক্তিগত অপরাধ নিজে থেকেই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। প্রমাণ- ইসলামের প্রথম ৬০/৭০ বছরের ইতিহাস। অন্যদিকে ঐ কাজ না করে ব্যক্তিগতভাবে যত পুণ্যের-সওয়াবের কাজই করা হোক যত তাকওয়া করা হোক সমাজের সর্বপ্রকার অপরাধ বেড়েই চলবে, ফাসাদ-অন্যায়-অবিচার বেড়েই চলবে, যুদ্ধ, রক্তপাত, হানাহানি বেড়েই চলবে, ইবলিস সফল ও কৃতকার্য হবে। প্রমাণ বর্তমান পৃথিবী।
এক কথায় বিশ্বনবীর (সা.) ও তার সাহাবাদের ইসলাম সম্বন্ধে ধারণা আর আজকের আমাদের ধারণা বিপরীতমুখী। তাই বিশ্বনবীর (সা.) আসহাব অর্ধেক পৃথিবীকে বশ্যতা স্বীকার করিয়েছিলেন আর আজ এই জনগোষ্ঠী পৃথিবীর সব জাতির লাথি খাচ্ছি।