স্টাফ রিপোর্টার:
তিন বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালিয়েছেন মোহন খান। তার হালকা যানবাহন চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও ভারী যান চালানোর কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। এছাড়া বাশার-স্মৃতি পরিবহনের ঘাতক বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকলেও গাড়ির সত্যিকারের ফিটনেস ভালো ছিল না এবং মিটার নষ্ট ছিল।
গত শনিবার সকাল ১০টার দিকে ঝালকাঠির সদরের ছত্রকান্দায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর ঘাতক বাসের চালক মোহন খান কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এরপর তিনি ঝালকাঠি, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় তার বিভিন্ন আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে থাকেন।আত্মগোপনে থাকাবস্থায় মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দিবাগত রাতে ঢাকার আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেনটারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২২ জুলাই সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে পিরোজপুর-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠির ছত্রকান্দা নামক স্থানে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা বাশার-স্মৃতি নামের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে পুকুরে পড়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ঝালকাঠি সদর থানায় সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-১৪।
মর্মান্তিক ওই সড়ক দুর্ঘটনায় র্যাব ঘাতক চালক এবং জড়িততে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৮ এর সমন্বিত অভিযানে গত রাতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত ঘাতক বাস চালক মো. মোহন খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঝালকাঠির নলছিটির আব্দুল গণি খানের ছেলে গ্রেপ্তার মোহন খান। এর আগে ঘাতক বাসের সুপারভাইজার ফয়সাল ওরফে মিজানকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয় র্যাব
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মোহন গত ২২ জুলাই সকাল ৯টায় বাশার-স্মৃতি পরিবহনের বাসটি নিয়ে ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল যাওয়ার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে যাত্রা শুরু করে। ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্টপেজ থেকে বাসটিতে আরো যাত্রী ওঠানো হয় এবং বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি চালাতে থাকে।
৯টা ৫০ মিনিটের দিকে ঝালকাঠির ছত্রকান্দা নামক স্থানে পৌঁছলে গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত গতির কারণে ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশের পুকুরে গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। এ সময় ফায়ার সার্ভিস, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় জনগণ দুর্ঘটনায় পড়া বাসটির ভেতর থেকে ৫৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ১৭ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে ৮ জন নারী, ৬ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু। অবশিষ্ট ৩৮ জন আহত যাত্রীকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
গ্রেপ্তার চালক মোহনের সম্পর্কে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মোহন ৩ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার হালকা যানবাহন চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানবাহন চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। এছাড়াও বাশার-স্মৃতি পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৬৫৪৯, যাত্রী ধারণ ক্ষমতা-৪৫ সিট) ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকলেও গাড়ির ফিটনেস ভালো ছিল না। কারণ হিসেবে কমান্ডার মঈন বলেন, বাসটির মিটার নষ্ট ছিল। গ্রেপ্তার মোহনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।