স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে ঢাকার নয়াপল্টনে জড়ো হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে মকবুল হোসেন (৪০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। তবে তিনি বিএনপির কর্মী কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
আগামী ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে দুদিন ধরেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিল কয়েক শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী। গতকাল সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে। বেলা ৩টার দিকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ শুরু করে। বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জবাব দেয়। শুরু হয় দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় স্পেশাল বাহিনী সোয়াতও। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী চলে এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এসময় পুরো নয়াপল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের লাগাতার টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপে টিকতে না পেরে পিছু হটে বিএনপি নেতাকর্মীরা। আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় তারা। এদিকে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে বেশ কয়েকজন ছাত্রদল নেতা গুলিবিদ্ধ হন।
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর দলটির কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখান থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহবায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমানসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। আটক হওয়ার আগে এ্যানি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পুলিশ কমিশনার আমাকে ডেকেছেন তার সঙ্গে কথা বলার জন্য। নয়াপল্টন থেকে আমি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। পরে তাকে আটকের খবর পাওয়া যায়।
এদিকে বিকেল ৫টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে বসে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটা ভয়াবহ, ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করতে পারি না, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।’ এ সময় তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে সেখান থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যত্থায় সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। এই পরিস্থিতিতে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ কি করা সম্ভব- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করেই তো এগুলো হচ্ছে। তারা সমাবেশকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে আমার কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের লোকজন ঢুকছে, বের হচ্ছে। আমরা সন্দেহ করছি, তারা ভেতরে বোমা জাতীয় কিছু রেখে এর দায় আমাদের ওপর চাপাবে।’