স্টাফ রিপোর্টার: ১০৭ বছর আগে সেই ব্রিটিশ আমলের কথা। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নে সাড়ে ছয়শো ফুট লম্বা ১৫ পিয়ারের বাউজান রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজ প্রতিষ্ঠার পর আর সংস্কার হয়নি। ব্রিটিশ আমলে ইটের সঙ্গে চুন-সুড়কি আর ভাতের মাড় দিয়ে ব্রিজটি নির্মিত হয়েছিল। ওই গার্ডার ব্রিজের ওপর ট্রেনগুলো ওঠার আগেই শূন্য কিলোমিটার গতিতে থেমে যেত।
একশো বছর অতিবাহিত হওয়ায় গার্ডার ব্রিজে পিয়ারের গাঁথুনির চুন-সুড়কির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বেডব্লকে ফাটল ধরেছে। সেই রেলব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিনই আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নে ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলরুটে ২৫ নম্বর বাউজান রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজে সংস্কার কাজ শুরু করেছে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী বিভাগ। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগামী বছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের জন্য ওই রেলওয়ে ব্রিজ দিয়ে ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলরুটে অস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় রেললাইন তৈরি করা হয়। পরে অস্থায়ীভাবে সিসিক্রিপ বসিয়ে (কাঠের স্লিপারকে লোহার এ্যাঙ্গেল রেললাইনে বসিয়ে) অস্থায়ীভাবে বিকল্প রেললাইন স্থাপন করা হয়।
অস্থায়ী রেললাইন তৈরির পর রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন, ঢাকা থেকে আসা রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি পারাপার করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে সবগুলো ট্রেন পারাপার করা হয়।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বাউজান ব্রিজে সংস্কারকাজ যতদিন চলবে, ততদিন অস্থায়ী ব্যবস্থাপনার ওই রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
এদিকে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খান, পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল, পাকশী বিভাগীয় সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী, সহকারী সেতু প্রকৌশলী জুয়েল মিয়া, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ব্রিজ) হাসান আলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আহসানুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আবু তৌহিদ সুমন।
পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল জানান, ব্রিটিশ আমলে ইট-বালু সিমেন্টের বদলে চুন-সুড়কি, ভাতের মাড় দিয়ে নির্মাণ করা হয় বাউজান ব্রিজ। একশো বছর অতিক্রম করার পর ব্রিজের পিয়ারের গাঁথুনির চুন-সুড়কির যে গুণাগুণ, তা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বর্ষার আগে টেন্ডার হয়েছিল, কাজও শুরু হয়েছিল। কয়েকদিনের মাথায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গার্ডার রেলওয়ে ব্রিজের ওপর দিয়ে আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ ১৯ জোড়া আন্তঃনগর, মেইল, লোকাল ও মালবাহী ট্রেন ৮৫ কিলোমিটার গতিতে না চলে ১০ কিলোমিটার গতিতে অতিক্রম করে। সংস্কার কাজ শেষ হলে আগের গতিতে ট্রেন চলবে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলওয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন, বাজেট ও রাজস্ব বাজেটের আওতায় দৃশ্যমান উন্নয়ন ও মেরামত কাজ চলমান।
প্রধান প্রকৌশলী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বের দরবারে যেভাবে রেলওয়েকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সেভাবে বাস্তবায়ন হবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে সব পুরোনা ব্রিজ, মেরামত, নতুন নির্মাণের জন্য একটি বৃহৎ প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। কাজগুলো চলমান রয়েছে। রেলওয়েতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বৃদ্ধির মাধ্যমে রেলওয়েকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশমত রেলপথ মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আওতাধীন এই রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজটি ১০৭ বছর অতিক্রম করেছে। বর্তমানে ১শ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করার জন্য গার্ডার ব্রিজটি যথেষ্ট না। এই ব্রিজটি অধিকতর শক্তিশালী করনের জন্য সাড়ে ৬শ ফিট দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় কাজ শুরু হয়েছে। সংস্কার কাজ শেষ হলে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে একশো কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।