জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা:
কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। যার একটিতে বাদী ভুক্তভোগীর বাবা, অন্যটিতে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান। একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। এর বাদী ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা। এই মামলার আসামি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, অপর মামলার বাদী পুলিশ। এই মামলার আসামি পুলিশের ওপর হামলাকারীরা। এই মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় ঘটনাস্থল থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থেকে পুলিশের ওপর হামলা করা ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, কুমিল্লার দেবিদ্বারে মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় অঙ্গনে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে প্রধান শিক্ষক ও দেবিদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোকতল হোসেনকে অবরুদ্ধ করে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলসহ ২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ সময় জনতা-পুলিশ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫ পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়লে আরও অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রথমে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে ও সাড়ে ১০টার দিকে দ্বিতীয় দফায় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেন। ওই ঘটনা সহপাঠীরা দেখে ফেলে এবং তাকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে তার বাবার কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়।
এদিকে ঘটনাটি জানাজানির পর ১৫ মার্চ দুপুর থেকে রাত অবধি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে। এসময় প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় তার পক্ষে বহিরাগত কিছু লোকজন এসে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়।
ছাত্র আহতের ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও অভিভাবকরাও আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভে অংশ নেন।
খবর পেয়ে দেবিদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ ও দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্য, শিক্ষক ও এলাকার মানুষের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান।
ওইদিন (১৫ মার্চ) রাত অবধি চলা বিক্ষোভে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে স্কুল মাঠে এনে বিচারের দাবি জানায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ও প্রধান ফটক ভাঙচুরের চেষ্টা করে। প্রধান শিক্ষকের মোটরসাইকেলসহ দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পরে রাত পৌনে ৯টায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেজী চক্রবর্তী বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
অন্যদিকে এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিদ্যালয়ে আসেনি শিক্ষার্থীরা।