ডেস্ক রিপোর্ট:
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীসহ সব নকশাবর্হিভূত কবর ও স্থাপনা অপসারণের দাবি জানিয়েছে এফ এফ কমান্ডার্স ফোরাম- ১৯৭১ নামে একটি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন।
আজ(১৬ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা খলিফা আশরাফ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের স্থাপত্য শিল্প পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নান্দনিক কর্ম হিসেবে সারা বিশ্বেই প্রশংসিত। এটির নকশা প্রণয়ন করেছিলেন বিশ্ব বরেণ্য স্থাপত্য শিল্পী লুই ইয়াডোর কান। সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজ ১৯৬১ সালে শুরু হয়ে ১৯৮২ সালে শেষ হয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে এ নান্দনিক শিল্পমন্ডিত সংসদ ভবন নির্মিত হয়।
তিনি দাবি করেন, যে রক্ত স্নাত পবিত্ৰ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের জন্য আমাদের এতো গর্ব, সেই সংসদ ভবন এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের কবর দেওয়া হয়েছে। যারা একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে হানাদার গণহত্যাকারী পাকবাহিনীর দোসর হয়ে নারকীয় তাণ্ডবে মদদ যুগিয়েছেন। স্থপতি লুই কানের নান্দনিক নকশা এখন শকুনিদের নখরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত, সংকীর্ণ অভিলাষের লালসায় আক্রান্ত, বিপর্যস্ত এবং সৌন্দর্যহীন কালিমায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। লুই কানের সেই নকশাস্থিত এলাকার মধ্যেই সমস্ত রীতি রেওয়াজ ভেঙ্গে নান্দনিকতার বৈভবকে উড়িয়ে দিয়ে ঘোষিত এবং স্বীকৃত রাজাকারসহ সাতজনকে করব দেওয়া হয়।
জাতীয় সংসদে যাদের কবর রয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা হলেন- সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান, মুসলিম লীগের সাবেক সভাপতি সবুর খান, সাবেক সিনিয়র মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার, সাহিত্যিক আব্দুল মনসুর আহমেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান।
খলিফা আশরাফ আরও অভিযোগ করে বলেন, এদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীকালে জাতির জনকের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে তাদের ভূমিকা কি ছিল, তা আপনারা সবাই জ্ঞাত আছেন। শুধু তাই নয়, এদেরই কুটচক্রান্তে চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জিয়া উদ্যান, নকশা বহির্ভূতভাবে ক্রিসেন্ট লেকে ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ করা হয়, মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পশ্চিম পাশে পাঁচ বিঘা জমিতে জাতীয় কবরস্থান ঘোষণা করে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সাতজনকে সমাধিস্থ করা হয়, সংলগ্ন ১০ বিঘা জমিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র করা হয়, নকশা লঙ্ঘন করে এলাকার মধ্যেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারদের বাসভবন নির্মাণ করা হয়। অর্থাৎ, স্থপতি লুই কানের বিশ্বনন্দিত নকশাস্থিত সংসদ ভবনের শৈল্পিক এবং নান্দনিক সমস্ত সৌন্দর্যকে যেমন নস্যাৎ করা হয়েছে, ঠিক তেমনি পবিত্র সংসদ ভবনের এলাকায় ঘোষিত রাজাকারদের কবর দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং আপামর স্বাধীনতাকামী মানুষের সঙ্গে উপহাস করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে অপবিত্র এবং কলঙ্কিত করা হয়েছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। অবিলম্বে পবিত্র সংসদ ভবন এলাকা থেকে এ সমস্ত অবাঞ্ছিত কবর এবং স্থাপনা অপসারণ করতে হবে। বিশেষ করে স্বাধীনতা বিরোধীদের কবর কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না। প্রয়োজন হলে দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এফ এফ কমান্ডার্স ফোরাম- ১৯৭১ এর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন, সদস্য সচিব আবু জাফর ফিরোজ, যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ উল্লাহ খান, ঢাকা বিভাগের সংগঠক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, সিলেট বিভাগের সংগঠক হাজী এস এম নাজিম উদ্দিন, রংপুর বিভাগের সংগঠক আব্দুল গাফফার প্রমুখ।