Date: October 22, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / সারাদেশ / সৎ ভাইকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে সাজাতে মরিয়া হত্যাকারীরা

সৎ ভাইকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে সাজাতে মরিয়া হত্যাকারীরা

August 18, 2023 07:58:20 AM   ডেস্ক রিপোর্ট
সৎ ভাইকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে সাজাতে মরিয়া হত্যাকারীরা

ডেস্ক রিপোর্ট:

ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অথচ সেই হত্যাকাণ্ড কে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু ও আত্মহত্যা বলে সাজাতে মরিয়া হত্যাকারীরা। পুলিশ প্রশাসনও সেই ঘাতকদের পক্ষেই। ছেলের হত্যার বিচার চাইতে প্রায় ছয়মাস যাবৎ দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। কিন্তু কোথাও সুবিচার পাচ্ছেন না। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নাম উল্লেখ করে মামলা করতে গেলেও সেই মামলা পুলিশ নেননি বলে অভিযোগ করেন মৃত আব্দুর রহিম আকাশের (১৬) বাবা-মা।

মৃত আব্দুর রহিম আকাশ নীলফামারীর সংগলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট বানিয়া পাড়ার বাসিন্দা সেকেন্দার আলী ও রেখা বেগমের ছেলে। সে স্থানীয় সোনারায় সংগলশী বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের কাছে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে এই বাবা-মা দাবি করেন যে গত ২৯ মার্চ রাতে আকাশকে তার সৎভাই ওমর ফারুক হত্যা করেছে।

সেকেন্দার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আকাশ আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে। গত ২৯ মার্চ রাতে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে আমার প্রথম স্ত্রীর ছেলে ওমর ফারুক ও এলাকার সাজু মেলা দেখার কথা বলে নিয়ে যায়। এর কয়েক ঘণ্টা পর ওমর ফারুক ফিরে আসলে তাকে আব্দুর রহিমের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, আকাশ কোথায় আমি জানি না, হয়ত কোনো বন্ধুর বাড়িতে গেছে। এ ঘটনার দুইদিন পর জানতে পারি, এলাকায় একজন ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। পরে লোকজনের কাছ থেকে নিহতের বিবরণ ও ছবি দেখে নিশ্চিত হই, সে আমার ছেলে আকাশ। থানায় গিয়ে জানতে পারি, পুলিশ তাকে হাতিখানা কবরস্থানে বেওয়ারিস হিসেবে দাফন করেছে।

রেখা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার ন্যায্য বিচার চাই। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি হয় না। আমার ছেলে কোনোভাবেই আত্মহত্যা করে নাই। আমার ছেলেকে হত্যা করে রেললাইনে রাখা হইছে। আমি মেলা কষ্ট করছি বাচ্চাগুলার জন্য। সবার অত্যাচার সহ্য করছি। শুধু বাচ্চা দুইটাকে মানুষ করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, আমার সতিনের নেশাগ্রস্ত ছেলে ওমর ফারুক আমাদের ওপর নানা রকম অত্যাচার করত। আমার দুই ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিত। ঘটনার দিন ফারুক আমার ছেলেকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন বলছে, আকাশ আত্মহত্যা করেছে। আকাশ যদি আত্মহত্যাই করবে, তাহলে লাশ যেখানে পাওয়া যায় সেখান থেকে অনেক দূরে কলাবাগানে তার জুতা পাওয়া গেল কীভাবে। আমাদের ধারণা ওমরই আকাশকে হত্যা করেছে।

সেকেন্দার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বড় ছেলে ইউপি সদস্য নূর ইসলাম ও ওমর ফারুক পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করে আমাদের না দেখিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে। আমার ছেলে ওমর ফারুকের কথাবার্তা ও আচরণে মনে হয় সে আকাশকে হত্যা করে রেললাইনের ওপর রেখে আসে। ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ওমর ফারুক আত্মগোপন করে আছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেকেন্দার আলীর প্রথম স্ত্রীর ছেলে ইউপি সদস্য নুর ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। আকাশ বাবা মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করতে পারে। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে আমার সৎমা।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বজনের খোঁজ না পাওয়ায় ৪৮ ঘণ্টা পর মরদেহ দাফন করা হয়। পরবর্তীতে খোঁজ পাওয়ায় স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিউল আজম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ সুপারসহ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে এসেছে। দু-এক দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।