শ্রীপুর প্রতিনিধি, গাজীপুর:
গাজীপুরের “শ্রীপুরে তালাকের ফতোয়া জানতে গিয়ে দুই ঘণ্টার চুক্তিতে ইমামের পাহারায় মুহতামিমের বিয়ে, মসজিদে সহবাস অতঃপর তালাক” এই সংবাদটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। অভিযুক্ত কফিল উদ্দিন ইমাম ও ইসমত আলী আশেকী মুহতামিমের এই ঘটনায় দুটি পর্বে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। দেশের দায়িত্বশীল গণমাধ্যমগুলো যাচাই-বাছাই করে উক্ত সংবাদ প্রচার করে। সংবাদ ভাইরাল হয়ে উঠলে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
এদিকে সাংবাদিক মোজাহিদ ও এস এম জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বাজে মন্তব্য করেছেন আশেকীর কতিপয় পালিত ইউটিউবার ও আশেকানরা। ঘটনার কয়েকদিন পর অনেকে এটাকে সাজানো ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাও করছেন সামাজিক মাধ্যমে। তবে ঘটনার পরপরই তদন্তকালে মসজিদে বিয়ে ও সহবাসের বিষয়টি স্বীকার করেন আরফান আলী জামে মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম কফিল উদ্দিন। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার পর কফিল উদ্দিনকে বরখাস্ত করে মসজিদ কমিটির সভাপতি আলফাজ উদ্দিন স্বপন। এছাড়াও ইসমত আলী আশেকীকে টেংরা মধ্যপাড়া জামিউল উলুম কওমি মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে তদন্ত সাপেক্ষে মুহতামিমের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
জানা যায়, অভিযুক্ত ইসমত আলী আশেকী ময়মনসিংহের ধোবাউরা উপজেলার কামালপুর গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি ইসলামিক বক্তা ও হিল্লা বিয়ের ফতোয়াবাজ। অপরদিকে কফিল উদ্দিন টেপিরবাড়ী পশ্চিমপাড়া এলাকায় থেকে মসজিদে ইমামতি করতেন। তিনি হিল্লা বিয়ে পড়িয়েছেন এবং সহবাসে পাহারা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এসব তথ্য ভিডিও সংবাদে প্রচারিত হয়েছে। মসজিদে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় দর্শকরা প্রচুর পরিমাণে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় সচেতন ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মসজিদে সহবাসের বিষয়টি খুবই নিন্দনীয়। ইমাম কফিল উদ্দিন বিষয়টা স্বীকার করেছেন। তাছাড়া সংবাদে উল্লেখিত দুই অভিযুক্তই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। জামাল নামের এক মুসল্লি তাৎক্ষণিকভাবে কফিল উদ্দিনকে প্রশ্ন করেছিলেন, “তুমি হিল্লা বিয়ে করিয়েছো?” উত্তরে কফিল বলেছেন, “আমি আশেকীর সাথে বিয়ে পড়িয়েছি।” মসজিদে সহবাসের বিষয়টিও স্বীকার করে বলেন, “আমি মসজিদে তালা লাগিয়ে আশেকীকে চাবি দিয়েছিলাম।” এ ঘটনায় মুসল্লিরা নিন্দা জানিয়ে তাঁকে তাৎক্ষণিক কমিটির সাথে আলোচনা করে বরখাস্ত করেন।
সাংবাদিক মোজাহিদ ও এস এম জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, দেশের অনেক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল সংবাদটি প্রচার করেছে। সংবাদ প্রচারের পর আশেকীর কিছু অন্ধ ভক্ত এবং তথাকথিত লেবাসধারী ছাত্র ও আলেমদের নিয়ে ফেসবুকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে একটি মহল চিরন্তন সত্য ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে জানা যায়, নোয়াখালীর এক গৃহবধূকে ঝগড়াঝাঁটির পর তার স্বামী তিন তালাক প্রদান করেন। পরবর্তীতে তাঁকে শ্রীপুরে পাঠানো হয় বিজ্ঞ আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য। এরপর তালাকপ্রাপ্ত নারী মুহতামিম ইসমত আলী আশেকীর কাছে যান ফতোয়া জানার জন্য। পরে আশেকী জানান, এই নারীকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়া ছাড়া পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল করা সম্ভব নয়। একপর্যায়ে তিনি হালালের ফতোয়া দিয়ে নিজেই মসজিদে হিল্লার নামে কুকর্ম করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন।