ওবায়দুল হক বাদল:
হেযবুত তওহীদের আদর্শ অচিরেই বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে। আমরা চাই এমন একটি অখণ্ড পৃথিবী যেখানে অখণ্ড মানবজাতি স্রষ্টা প্রদত্ত সহজ-সরল জীবনব্যবস্থার অধীনে শান্তিতে বাস করবে। এই আদর্শ বিশ্বাব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশ্বের এমন কোনো লোকালয় থাকবে না যেখানে হেযবুত তওহীদের আদর্শ পৌঁছবে না। বিশ্ববাসী যেদিন হেযবুত তওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হবে, সেদিন এ বিশ্ব শান্তিপূর্ণ হবে এবং সেটা অচিরেই ঘটতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন হেযবুত তওহীদের শীর্ষ নেতা এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
আজ (১৫ ডিসেম্বর) শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ইন্সটিটিশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) তে ‘হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় আমির সম্মেলন- ২০২৩’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি বলেন, বিভিন্ন উগ্রবাদী গোষ্ঠী কোর’আন হাদিসের ভুল-ব্যাখ্যা করে ইসলামকে একটি সন্ত্রাসবাদী মতবাদে পরিণত করেছে। যার সাথে প্রকৃত ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। ঐ গোষ্ঠীগুলো আল্লাহ ও রসুলের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের বক্তব্য শুনে, তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। ইসলাম সম্বন্ধে একটা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে। অথচ প্রকৃত ইসলামের রূপ এমন নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একটি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রশ্ন আসছে- কে সন্ত্রাসী, হামাস নাকি ইসরাইল? কে আগ্রাসী- রাশিয়া নাকি যুক্তরাষ্ট্র? আমরা বলতে চাই, যারাই নির্দোষ মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, মানবাধিকার লংঘন করবে, মানুষকে তাদের মাটি থেকে উচ্ছেদ করবে, তারাই আগ্রাসী, তারাই সন্ত্রাসী, তারা যে ধর্মের, যে রাষ্ট্রের, যে মতবাদের হোক না কেন। তাদের বিরুদ্ধেই আমাদের আদর্শিক লড়াই অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবেÑ বলেন এই নেতা।
এর আগে তিনি বলেন, বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে একটি সভ্যতা চলছে। এই সভ্যতার প্রচারকরা প্রচণ্ড অহংকারে স্ফীত হয়ে আছেন। তারা প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সভ্যতার চূড়ান্ত শিখরে অবস্থান করছে। কিন্তু এই সভ্যতাই দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ ঘটিয়েছে। সেখানে চৌদ্দ কোটি মানুষ নিহত হয়েছে, এর কয়েকগুণ আহত ও বিকলাঙ্গ হয়েছে। গত ৭৫ বছরে এই সভ্যতার পুরোধা রাষ্ট্রগুলোর সৃষ্ট যুদ্ধে আরো অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ সভ্যতা কেবল যুদ্ধ আর রক্তপাতই দিয়েছে আমাদের। কারণ এ সভ্যতার ধারক বাহকদের অর্থনীতি হচ্ছে যুদ্ধ অর্থনীতি। প্রতি বছর তারা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মারণাস্ত্র বিক্রি করছে। এসব যুদ্ধের পরিণামে কত লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে, কত শহর, নগর, বন্দর ধ্বংস হবে, কত নারী লাঞ্ছিত হবে, কত শিশু মারা যাবে এটা তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। যত যুদ্ধ হবে তত তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, বিশ্বে তাদের প্রভুত্ব পাকাপোক্ত হবে। তাদের বানানো পারমাণবিক বোমার মাত্র কয়েকটাই সমগ্র পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট- বলেন তিনি।
মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার উপায় আছে দাবি করে হেযবুত তওহীদের এই নেতা বলেন, মানুষকে চলমান ভারসাম্যহীন এই ভুল জীবনব্যবস্থা পরিত্যাগ করতে হবে। এই সভ্যতা মানুষকে কিছু প্রযুক্তিগত সফলতা দিয়েছে। কিন্তু শান্তি ও নিরাপত্তা, সুবিচার দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের দ্বারা আজ পর্যন্ত এমন কোনো জীবনবিধান প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি যা তার মানসিক, আত্মিক চাহিদা পূরণ থেকে শুরু করে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিচারিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক সকল প্রকার চাহিদা ন্যায়সঙ্গতভাবে পূরণ করতে পারে। কিন্তু স্রষ্টা যুগে যুগে প্রতিটি জনপদে সেই ভারসাম্যযুক্ত জীবনব্যবস্থা দিয়ে তাঁর দূত পাঠিয়েছেন। ইতিহাস সাক্ষী, যতদিন মানুষ স্রষ্টার অবতারিত ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করেছে ততদিন তারা সোনালি যুগ লাভ করেছে।
তাই আল্লাহ তাঁর শেষ নবীকে এমন একটি জীবনব্যবস্থা দিয়ে পাঠালেন যার মধ্যে তিনি ব্যক্তিগত ও আধ্যাত্মিক জীবনের পাশাপাশি বিশ্ব পরিচালনার ব্যবস্থাও প্রদান করলেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় অজ্ঞতাপূর্ণ সমাজকে পাল্টে দিতে একটি রেনেসাঁ সংঘটন করলেন। ফলে অশিক্ষা-কুশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত, অনৈক্য ও হানাহানিতে লিপ্ত, বিশ্বের সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত অনগ্রসর আরব জাতিকে তিনি রাতারাতি পরিবর্তন করে দিলেন।
দুর্ভাগ্যক্রমে কয়েক শতাব্দী পর সেই প্রগতিশীল, ভারসাম্যপূর্ণ স্রষ্টাপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থাটির প্রাণশক্তি হারিয়ে যায়। শাসক শ্রেণি তাদের নেতার মূল শিক্ষা থেকে সরে গিয়ে জঘন্য ভোগবিলাসে লিপ্ত হয়ে পড়ে। স্রষ্টার পাঠানো সেই সহজ সরল অবিকৃত জীবনব্যবস্থার রূপরেখা আমরা লাভ করেছি। মানবজাতির এই চরম সংকটমুহূর্তে সেই জীবনব্যবস্থাটি আপনাদের সামনে পেশ করছি যেন আমরা সবাই চূড়ান্ত ধ্বংসের প্রান্ত থেকে ফিরে আসতে পারি। আমাদের আহ্বান সমগ্র মানবজাতির প্রতি।
আমরা মানবজাতিকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারি, যদি আমাদের প্রস্তাবিত আদর্শ মানুষ গ্রহণ করে তাহলে তাদের সমাজে নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, প্রগতি, মানবতা, ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়বিচার এক কথায় শান্তি সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা চাই এমন একটি অখণ্ড পৃথিবী যেখানে অখণ্ড মানবজাতি একটি মাত্র জীবনব্যবস্থার অধীনে শান্তিতে বাস করবে।
মুখলেছুর রহমান সুমন ও নওশীন আমীনের যৌথ সঞ্চালনায় এবং হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী। তিনি বলেন, বর্তমানে ধর্মের যে চেহারা উপস্থাপন করা হয় সেটা আল্লাহর রসুলের আনীত ইসলাম নয়। পক্ষান্তরে আমরা যখন ইসলামের প্রকৃত রূপ, প্রকৃত ধারণা তুলে ধরছি তখন পুরনো ধারণা এবং আসল ধারণার মধ্যে একটি সংঘর্ষ দেখা দিচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সমাজে অন্যায় অশান্তি রক্তপাত যুদ্ধ হানাহানি ইত্যাদি নিবারণে কোন অবদান না রেখে, আর্তমানবতার ডাকে সাড়া না দিয়ে সারাদিন ধরে ঘরে বসে থাকব, এটা তো ইসলামের শিক্ষা নয়। আমরা বলছি, কেবল পুরুষের নয় নারীরও সমাজের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে এবং এর স্বপক্ষে কোরআনের আয়াত এবং আল্লাহর রসুলের জীবনী উপস্থাপন করছি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের দপ্তর সম্পাদক খাদিজা খাতুন, রংপুর বিভাগের দায়িত্বশীল জনাব মশিউর রহমান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক উম্মুত তিজান মখদুমা পন্নী, সাহিত্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদুল হাসানসহ সংগঠনটির সাংগঠনিক ১০ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবর্গ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রচার সম্পাদক শফিকুল আলম উখবাহ, অনলাইন প্রচার সম্পাদক সুলতানা রাজিয়া হেলেন, নারী ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক শিশু মনবিজ্ঞানী সুলতানা রাজিয়া, ক্রীড়া সম্পাদক রিয়াল তালুকদার, প্রকাশনা সম্পাদক সজিব শেখ, আইন বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান, বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থার কোষাধ্যক্ষ আইনুল হক, কৃষি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদ খান প্রমুখ।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল। প্রধান অতিথি হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের আগমনের সাথে সাথে যেন বিদ্যুৎ সঞ্চারিত হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থলে। মুহূর্মূহু করতালি আর স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে যায় আলোচনায়তন। ঢাকা বিভাগের পক্ষ থেকে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়া হয়। এরপর ফটোসেশন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের ‘স্মার্ট গ্রাম’ চাষিরহাট ইউনিয়নের পোরকরা গ্রামের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপর উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের মনোনয়নপত্র প্র্রদান করেন হেযবুত তওহীদের এই নেতা।
আন্দোলনের বিভিন্ন কাজে সাফল্য অর্জন করায় ৫টি ক্যাটাগরিতে ১৫ জনকে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়। সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন মোহন, শাহীন আলম ও তাহমিনা চাঁদ।
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ অথবা কালো তালিকাভুক্ত মর্মে মুষ্টিমেয় পত্রিকায় প্রচার করতে দেখা গেছে। যদিও হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ অথবা কালো তালিকাভুক্ত মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সরকারি কোনো সংস্থা থেকে আজ পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন বা সার্কুলার জারি করা হয় নাই।