Date: November 22, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / জাতীয় / অব্যবহৃত অবস্থায় দেশের ৬ বিমানবন্দর

অব্যবহৃত অবস্থায় দেশের ৬ বিমানবন্দর

February 18, 2023 09:27:14 PM   স্টাফ রিপোর্টার
অব্যবহৃত অবস্থায় দেশের ৬ বিমানবন্দর

৫০ বছরেও ওড়েনি কোনো বিমান
জমি পরিণত হয়েছে গোচারণভূমিতে
স্টাফ রিপোর্টার:
দেশের অভ্যন্তরীণ ৬টি বিমানবন্দর দীর্ঘদিন ধরেই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অথচ সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে ওসব বিমানবন্দর চালু করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়তো। যোগাযোগ হতো স্বাচ্ছন্দ্যময়। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ১৫টি বিমানবন্দরের মধ্যে বর্তমানে ৮টি বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ওঠানামা করে। তার মধ্যে ৩টি আন্তর্জাতিক, ৫টি অভ্যন্তরীণ। বাকি ৬টি বিমানবন্দরই পরিত্যক্ত ও অরক্ষিত। তবে শুধুমাত্র তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিক ব্যবহার না হলেও সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর অরক্ষিত ও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওসব বিমানবন্দরের কোনোটিতে ৫০ বছরেও কোনো বিমান ওড়েনি। আবার কোনো বিমানবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে রয়েছে। ওসব বিমানবন্দরে রানওয়েতে ঘাস গজানোয় গরু চরে। বিমানবন্দরের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে মাছের খামার, হচ্ছে ধান চাষ। আর অব্যবহৃত থেকে অকেজো হয়ে গেছে কয়েকটি বিমানবন্দরের নেভিগেশন সরঞ্জাম। অথচ পরিত্যক্ত অরক্ষিত অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে আকাশপথের অসীম সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব।
জানা যায়, দীর্ঘ ২৬ বছরেও বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ কাজে গতি আসেনি। ফলে রানওয়ে, বিমানবন্দর টার্মিনাল ভবনসহ কোনো অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। অধিগ্রহণকৃত ৭০০ একর জমিতে হচ্ছে ধান চাষ, মাছের খামার। বাকি জমি কৃষকরা গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করছে। ওই বিমানবন্দর প্রকল্পটি কবে বাস্তবায়ন হবে বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ তা বলতে পারছে না। তবে জমি দখলে রাখতে কর্তৃপক্ষ সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ করেছে। ১৯৯৫ সালে ‘শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং (স্টল) বন্দর’ হিসেবে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আর সম্ভাবনা সত্ত্বেও বগুড়ায় ২৭ বছর ধরে বাণিজ্যিক বিমান উড়ছে না। উত্তরের ১৬ জেলার অর্থনীতির গতি বাড়াতেই বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে বগুড়ায় বিমানবন্দর নির্মাণের প্রথম আলোচনা শুরু হলেও ১৯৯৬ সালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়ায় বগুড়া স্টল বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। তখন ১১০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে কাজ শুরু হয়। ওই প্রকল্পে ২২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পে ছিল ৫ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০০ ফুট প্রস্থ রানওয়ে নির্মাণ, অফিস ভবন নির্মাণ, মূল গ্রাউন্ড নির্মাণ, কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণ।
১৯৯৬ সালে প্রথমে নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০০ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে এখনো কোনো বিমান ওড়েনি। বরং ২০০১ সালে অজ্ঞাত কারণে বগুড়ার বিমানবন্দরটি বিমানবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়। বিমানবাহিনী সেখানে ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর স্কুল পরিচালনা করে আসছে। পরে রাডার স্টেশন হিসেবে সংযুক্ত হয়। তাছাড়া  কুমিল্লা বিমানবন্দরটিতে ৪৭ বছর ধরে বিমান নামছে না। ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেউরা-ঢুলিপাড়ার পাশে স্থাপিত হয় কুমিল্লা বিমানবন্দর। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে সেনাবাহিনী ওই বিমানবন্দর ব্যবহার করতো। ১৯৬৬ থেকে ওই বিমানবন্দর সর্বসাধারণের জন্য উন্মক্ত করা হয় আর ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ওই বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা করে। ৭৭ একর ভূমির ওই বিমানবন্দরের রানওয়ে এখন গাড়ি প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ মাত্র ৩০ কোটি টাকার সংস্কারে বিমানবন্দরটি সচল হতে পারে। বিমানবন্দরটি এখন আন্তর্জাতিক রুটের সিগন্যালিংয়ের কাজ করে। প্রতিদিনই ৩৫ থেকে ৪০টি বিমান এ সিগন্যাল ব্যবহার করে। বেশি চলাচল করে ভারতের অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান। ওই রুটে আগরতলা বিমানবন্দরে যাওয়া বিমান চলে। তাছাড়া রয়েছে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরের বিমান। বিমানবন্দরটি প্রতি মাসে সিগন্যালিং বাবদ আয় ৩০-৪০ লাখ টাকা করছে। যদিও বিমানবন্দরটি চালু করতে জমি অধিগ্রহণের ঝামেলা নেই। প্রয়োজন শুধু রানওয়ে কার্পেটিং, ফায়ার সার্ভিস ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের জনবল। বর্তমানে এ বন্দরে ২০ লোকবল রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ব্রিটিশ শাসনামলে পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রতিষ্ঠিত বিমানবন্দরটি ১৯৮৭ সালে লোকসানসহ নানান অজুহাতে প্রথম বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি আবার চালু করা হয়। কিছুদিন বিমান চলাচলের পর লোকসানের কথা বলে আবারো ১৯৯৬ সালে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তার দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। তখন ছয় মাস ১১ দিন চালু থাকার পর ২০১৪ সালের ২৯ মে বিমানবন্দরটি আবারো বন্ধ হয়ে যায়। তবে মাঝেমধ্যে হেলিকপ্টার ও বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে ওঠানামা করলেও বাণিজ্যিক বিমান বন্ধ রয়েছে। ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের জন্য ৪৩৬ দশমিক ৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে ১৪৫ দশমিক ৯১ একর জমি এখন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দখলে রয়েছে। ওই জমিতে টার্মিনাল বিল্ডিং, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, অ্যাপ্রোন, নেভিগেশন ও সংযোগ সরঞ্জাম, অফিসারদের আবাসিক এলাকা রয়েছে। দীর্ঘদিন বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় অকেজো হয়ে পড়ছে বিমানবন্দরের নেভিগেশন ও যোগাযোগ সরঞ্জাম। তাছাড়া পরিত্যক্ত পড়ে আছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর বিমানবন্দর। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বিমানবন্দরটি চালু হয়নি।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান, বার্মা (মিয়ানমার), মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় অভিযান চালানোর জন্য ব্রিটিশ সরকার শমসেরনগর চা বাগানের ৬২২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দরটি গড়ে তোলে। বিমানবন্দরটিতে ৬ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭৫ ফুট প্রশস্ত রানওয়ে রয়েছে। প্রশস্ত রানওয়ে, বিশাল পরিসর, উন্নত যাতায়াতব্যবস্থা ও অবকাঠামো সুবিধা থাকা ওই বিমানবন্দরে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত বিমান ওঠানামা করতো। পরে যাত্রীবাহী বিমান ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে শমসেরনগর বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ ইউনিট খোলা হয়। তখন থেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে। বর্তমানে বিমানবন্দরের পতিত ভূমি ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল কৃষি খামার। সংস্কার করা হয়েছে রানওয়ের কিছু অংশ। ২০১২ সালে বিএএফ শাহীন কলেজের কার্যক্রম শুরু করা হয়। আর ৪২ বছর ধরে পরিত্যক্ত পড়ে আছে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর। ওই বিমানবন্দরের ১১১ একর জমি পরিণত হয়েছে গোচারণভূমিতে। বন্দরের রানওয়ে ভরে গেছে আগাছায়। রানওয়েটি স্থানীয়রা ফসল শুকানো আর মাড়াই করার কাজে ব্যবহার করছে। ১৯৪০ সালে ৫৫০ একর জমির ওপর বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়। পাকিস্তান সরকার বিমানবন্দরের জমি আর্মি স্টেট হিসেবে ঘোষণা দিলে ১১১ একর জমি বুঝে পায় সিভিল অ্যাভিয়েশন। এ বিমানবন্দরটি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য নির্মাণ করেছিল। স্বাধীনতার পর বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য বিমানবন্দরটি ১৯৭৭ সালে সংস্কার করা হয়। তখন কিছু সময় বাণিজ্যিক ফ্লাইটও পরিচালিত হয়। কিন্তু ১৯৮০ সালে অজ্ঞাত কারণে বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে পরিত্যক্ত ওই বিমানবন্দর।