শাকিলা আলম:
আমরা জানি, যে কোনো সংকটকালে সবচেয়ে কষ্ট পায় শিশুরা, সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয় নারীরা। বিশেষ করে সংকটের সুযোগ নিয়ে নারীদের ধর্ষণ করা হয়, বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্বাস্তু শিবিরে গিয়েও তাদের বিক্রি হতে হয়। কারণ হচ্ছে, নারী দুর্বল। পৃথিবীর যে কোনো দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এটাই হয়ে থাকে। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, মায়ানমারের নারীরা তো কম পর্দা করেন না। কিন্তু সেই বোরকা তাদের ইজ্জত বাঁচাতে কোনো কাজে আসে নি। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা নারী ধর্ষিতা হয়েছেন, গর্ভবতী হয়েছেন বৌদ্ধ রাখাইন সন্ত্রাসীদের দ্বারা। একই ঘটনা ঘটেছে বসনিয়াতে, ইরাকে, কাশ্মিরে।
কিন্তু ইসলামের ইতিহাস এমন ছিল না। ইসলামের নারীরা কোনো দিক থেকেই পুরুষদের থেকে পিছিয়ে ছিল না। এমন কি সাহসিকতা, সামরিক চরিত্র সবদিকে নারীরা অনেক যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। যতদিন সমাজে ইসলামের সঠিক আকিদা ছিল, ততদিন মুসলিম নারীদের কেউ স্পর্শও করতে পারে নি।
রসুলাল্লাহ (সা.) নিজে তাদেরকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আম্মা আয়েশাকে (রা.) উৎসাহ দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। তাতে ইচ্ছা করে নিজে হেরে গিয়ে আম্মা আয়েশাকে (রা.) বিজয়ী করেছেন। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে সাহাবিদের বর্শা খেলার প্রতিযোগিতা উপভোগ করেছেন। অন্যান্য মেয়েদেরকেও তিনি যুদ্ধের সময় নানারকম কাজে, আহতদের সেবা, রসদ সরবরাহ, চিকিৎসা, শহীদদের দাফন করা ইত্যাদি দায়িত্ব দিয়েছেন যা তারা সুষ্ঠুভাবে পালন করেছেন। রসুলাল্লাহর সঙ্গে থেকে তারা দুর্দান্ত লড়াই করেছেন। ইয়ারমুকের যুদ্ধে তাঁবুর খুঁটি দিয়ে পিটিয়ে রোমান সৈন্যদের হত্যা করেছেন।
তাদের এই চরিত্র আজ কোথায় হারিয়ে গেল? যে ইসলাম তাদেরকে এমন দুঃসাহসী যোদ্ধায় পরিণত করেছিল আজ তারা কীভাবে এমন জুবুথুবু, অবলা, ভীরু জনসংখ্যায় পরিণত হলো। যে কোনো সংকটকালে তারা জাতিকে সাহায্য করার পরিবর্তে নিজেরাই জাতির বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। যারা জাতিকে নিরাপত্তা দিত, তারা আজ নিজের সম্মানটাই রক্ষা করতে অক্ষম।
ইসলামের পর্দার বিধানের বাড়াবাড়ি করে তাদেরকে এমন অসহায় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যখন বলা হয়েছে পরপুরুষের সামনে যাওয়া যাবে না, তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যখন বলা হয়েছে তাদের কণ্ঠ পরপুরুষের কানে গেলে পাপ হবে, তখন তারা সকল অন্যায়কে মুখ বুজে মেনে নিয়ে নীরব হয়ে গেছে। তাদের মুখ থেকে প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে গেছে। ইসলামের প্রশাসনিক কেন্দ্র মসজিদ। নারীদেরকে সেই মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এভাবে তাদেরকে অক্ষম, অযোগ্য, বুদ্ধিহীন প্রাণীতে পরিণত করা হয়েছে। যারাই নিজেদেরকে বিকশিত করতে চেয়েছে, তাদেরকে এই পর্দার বাড়াবাড়ি ত্যাগ করতে হয়েছে। তাদেরই কপালে জুটেছে পর্দাহীনতার ফতোয়া। কর্মজীবী নারীদেরকে ব্যভিচারী বলে, চরিত্রহীন বলে গালি দিচ্ছে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি।
আজকে আফগানিস্তানে আবার তালেবানদের উত্থান হয়েছে। সেখানে নারীদেরকে চাকরি বাকরি থেকে ছাটাই করে দেওয়া হয়েছে। ঘরের বাইরে গেলে তাদেরকে আপাদমস্তক বোরকায় শরীর ঢেকে বের হতে হচ্ছে, সঙ্গে পুরুষ আত্মীয় নিতে হচ্ছে। অথচ আল্লাহর রসুল বলেছিলেন, এমন সময় আসবে যখন একা একটা সুন্দরী মেয়ে সারা গায়ে অলঙ্কার পরে শত শত মাইল পথ দিনে ও রাতে অতিক্রম করবে। তার মনে আল্লাহ ও বন্যপ্রাণী ছাড়া আর কোনো ভয় আসবে না। তিনি সেই সমাজ কায়েম করেছিলেন ইসলাম দিয়েই।
তাহলে আজকে আমরা এটা কোন ইসলাম দেখছি। আফগানিস্তানে মেয়েদের হাইস্কুলে পড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঠিক এটাই আমাদের দেশের আলেম ওলামারাও চান। হেযবুত তওহীদ এর প্রতিবাদ করছে। আমরা আল্লাহর রসুলের সেই ইসলামের ইতিহাসগুলো আমাদের নারীদের সামনে তুলে ধরছি। যেন আমাদের নারীরা সাহসী হন, তারা যেন ইসলামের বিধি-নিষেধ সম্পর্কে অবহিত হন, শালীনতার সঙ্গে পুরুষদের সঙ্গে সকল কাজে অংশ নিতে পারেন, জাতির বোঝা না হয়ে জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন।
ইসলামের পর্দার বিধান নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য। আল্লাহ এই বিধান দিয়েছেন যে নারী ও পুরুষ একত্রে কাজ করে সমাজ-সভ্যতাকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে। এই বিধানকে উন্নতি প্রগতির প্রতিবন্ধকতা হিসাবে প্রদান করা হয় নি। হেযবুত তওহীদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে ও সংগ্রামে নারী ও পুরুষ একত্রেই সকল কাজে অংশ নিচ্ছে, সভা সেমিনার, মানববন্ধন, পত্রিকা প্রকাশ, বিক্রি করছে, আজ পর্যন্ত কোনো একটি নারী ধর্ষণ দূরে থাক, একটি ইভ টিজিং এর মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা যায় নি। আমরা বিশ্বাস করি, হেযবুত তওহীদের আদর্শ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে নারীরা, সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা পাবে নারীরা, ঠিক যেটা হয়েছিল রসুলাল্লাহর মদীনায়।
[লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট; যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৫১, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৭১১৫৭১৫৮১]