Date: December 04, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণে শীর্ষে ময়মনসিংহ বিভাগ

অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণে শীর্ষে ময়মনসিংহ বিভাগ

June 09, 2022 03:58:36 PM  
অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণে শীর্ষে ময়মনসিংহ বিভাগ

অনলাইন ডেস্ক
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের হার সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগে, যার হার ৮৩ শতাংশ। ‘সিচুয়েশন অ্যানালাইসিস অব ইউজ অব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালস অ্যামং অ্যালোপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স ইন বাংলাদেশ: আ সেকেন্ডারি অ্যানালাইসিস’ শীর্ষক এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খুলনা বিভাগে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের হার হার ৮১ শতাংশ। এছাড়া চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগে ৭৯ শতাংশ করে, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে ৭৮ শতাংশ করে এবং রাজশাহী বিভাগে ৭৪ শতাংশ রোগী অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করছে। সিলেট বিভাগে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ সবচেয়ে কম হলেও বিভাগটিতে ৭৩ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার রয়েছে।

ময়মনসিংহ অঞ্চলে অ্যান্টিবায়োটিকের বিষয়ে সচেতনতা কম বলে জানালেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. শাহ আলম। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, ময়মনসিংহ অঞ্চলের লোকজন বিভিন্ন অঞ্চলে কাজের জন্য যায়। তারা গোষ্ঠীগতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের জন্য প্রভাবিত হতে পারে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের বাইরেও তারা অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খায় বেশি। সর্দি-কাশি হলে দেখা যায়, একজনের দেখাদেখি অন্যরাও অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া শুরু করছে। অ্যান্টিবায়োটিকের বিষয়ে এ অঞ্চলের মানুষের জানাশোনা কম। একই সঙ্গে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রভাবিত হওয়ার বিষয়টিও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের অনৈতিকতার বিষয়টিও জড়িত।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ জানিয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ময়মনসিংহ বিভাগে বেশি হলেও অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ওষুধের প্রয়োগ অন্যান্য বিভাগে বেশি। অ্যান্টিভাইরাল সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ হচ্ছে রাজশাহীতে, অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ রাজশাহী ও রংপুর দুই বিভাগেই সর্বোচ্চ প্রয়োগ হয়। আর অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ওষুধের সর্বোচ্চ প্রয়োগ হচ্ছে সিলেট বিভাগে।
দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিব্যবহার ও অপপ্রয়োগ নিয়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের মূল্যায়নে উঠে এসেছে, শিশুদের ওপর অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে নিবন্ধনহীন চিকিৎসকরাই রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন বেশি। যথাযথ যোগ্যতাহীন চিকিৎসকদের কাছ থেকে আসা ব্যবস্থাপত্রের ৮৩ শতাংশেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগও যথাযথভাবে নির্ণয় করা হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্ট সেলের ফোকাল পারসন ডা. সুব্রত পাল জানান, সুনির্দিষ্ট রোগভিত্তিক খরচের তথ্য বা ডিজিজ স্পেসিফিক অ্যাকাউন্ট তৈরির অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট সারা দেশের রোগীদের কাছ থেকে সাড়ে ১০ হাজার চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র সংগ্রহ করে। ব্যবস্থাপত্রগুলো নিয়ে বছরজুড়ে গবেষণার পর সেসব তথ্য থেকে বিষয়টি তুলে আনা হয়।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব জানান, অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ বন্ধে ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক, ওষুধের দোকান ও পল্লী চিকিৎসকের ভূমিকা থাকতে হবে। শুধু গবেষণা করলেই অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ বন্ধ করা যাবে না। ওষুধের দোকানগুলোয় কাকে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা হচ্ছে, সে সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সারা দেশে প্রচুর ওষুধের দোকান রয়েছে। সেখানে শিক্ষিত লোকবল রাখতে হবে। আর সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো সচেতনতা সৃষ্টি করা। সচেতনতা এক দিন বা এক বছরে হবে না। নিয়মিতভাবেই সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করতে হবে।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ জানান, আমরা গবেষণার পর সে আলোকে প্রাসঙ্গিক গাইডলাইন ও প্রটোকল তৈরি করে বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে সরবরাহ করি। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে একটি প্রটোকল দিয়েছি। এতে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে হলে চিকিৎসককে অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। কিছু রোগের ক্ষেত্রে নিবন্ধিত চিকিৎসকও রোগ নির্ণয় ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারবেন না। সময়ে সময়ে এসব গাইডলাইন ও প্রটোকলকে আমরা পুনর্মূল্যায়ন করি।

সূত্র : বণিক বার্তা