অর্থনীতি ও বাণিজ্য ডেস্ক:
আগামী শীতেই বিশ্ববাজারে সম্ভাব্য জ্বালানি সংকটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) প্রধান ফাতিহ বিরোল। চলতি বছর চীনে জ্বালানি পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে বাজারে এলএনজির প্রবাহ কম। ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। রয়টার্স।
মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের সাইডলাইনে রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিরোল বলেন, ‘ইউরোপের দেশগুলো গত বছর জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিল। এসব পদক্ষেপ অনেক সুফলও বয়ে এনেছে। রাশিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহের বিকল্প হিসেবে নতুন নতুন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে, যা এসব পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জিরো কভিড নীতি গ্রহণ করে চীন। এতে দেশটির অর্থনীতিতে নেমে আসে স্থবিরতা। জ্বালানির ব্যবহার কমে চার দশকের সর্বনি¤েœ নেমে যায়। তার ওপর এবার শীতের তীব্রতা কম থাকায় জ্বালানির চাহিদাও প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়েনি। এসব বিষয় ইউরোপের দেশগুলোর জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। যদি নতুন কোনো জটিলতা না দেখা দেয়, তবে এই শীতে আমরা সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি বললে ভুল হবে না। তবে প্রশ্ন হচ্ছে আগামী শীতে কী হবে?’
চলতি বছর চীনের অর্থনীতিতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি আসবে। সর্বশেষ বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ফিচ সলিউশন ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। মহামারীসংক্রান্ত বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার কারণেই এ পূর্বাভাস দেয়া হয়। ক্ষুদ্র প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও এ বছর দেশটি বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফাতিহ বিরোল বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি টার্মিনাল রয়েছে। কিন্তু আগামী শীতে আমদানির জন্য এসব টার্মিনাল যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে ইউরোপে আমদানির জন্য আরো বেশি টার্মিনাল প্রয়োজন হবে।’ এ সংকট জ্বালানিটির দাম বাড়াবে বলেও জানান আইইএ প্রধান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বছর নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেলেও সেগুলোর কার্যক্রম শুরু হতে কয়েক বছর লেগে যাবে। ফলে আসন্ন সংকটের আশঙ্কা কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না। এ পরিস্থিতিতে গৃহস্থালি ও উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যাস ব্যবহার কমাতে হবে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহারও সম্প্রসারণ করা জরুরি।
রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলক ও সরবরাহকারী। দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা মিত্ররা নিষেধাজ্ঞার নীতি গ্রহণ করেছে। উদ্দেশ্য অর্থনৈতিকভাবে দেশটিকে কোণঠাসা করে দেয়া। সর্বশেষ রাশিয়া থেকে ডিজেল ও পেট্রলসহ পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ ঘোষণা করেছে ইইউ। পাশাপাশি এসব পণ্যের ওপর প্রাইস ক্যাপ দেয়া হয়েছে, যাতে অংশ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও জি৭। রুশ জ্বালানি খাতের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের এমন নীতি আগামী দিনগুলোয় বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোমভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিইআরের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাশিয়ার জ্বালানি তেল রফতানির ওপর ইইউর এসব নিষেধাজ্ঞা দেশটির আয় কমাতে ব্যর্থ হবে। উল্টো এসব পদক্ষেপ জ্বালানি তেলের বাজারকে আরো বেশি অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে। বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাশিয়ার উত্তোলন কমিয়ে দেয়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ইন্ধন জোগাচ্ছে। জি৭ ভুক্ত দেশগুলোর দেয়া প্রাইস ক্যাপ ও ইইউর নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।