হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেছেন, চলমান ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ধর্মীয় উগ্রবাদের মতো সঙ্কটগুলো মোকাবেলা করতে হলে পারস্পরিক দোষাদোষি-হানাহানি বাদ দিয়ে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। হেযবুত তওহীদ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সেই রূপরেখা মানুষের সামনে তুলে ধরছে। আমরা দেশ রক্ষার প্রস্তাব নিয়ে ময়দানে আছি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়ে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘হুজুগ, গুজব ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় আমির ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ।
হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ধস, করোনা মহামারির ফলে কর্মহীনতা, বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক অঙ্গন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি সব মিলিয়ে আমাদের দেশ এক ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে। এই সংকটের সুযোগ নিয়ে অনেকে চেষ্টা করবে লুটতরাজ করতে, পণ্য মজুদ করে, নানা উপায়ে স্বার্থ হাসিল করতে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীরা হয়ত চেষ্টা করবে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের দায়িত্ব আছে দেশটাকে রক্ষা করার জন্য। এ জাতীয় জাতিবিনাশী কর্মকাণ্ড ঘটার আগেই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বর্তমান এই সংকট মোকাবেলা করতে হলে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
তিনি বলেন, কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায় তার চূড়ান্ত মানদণ্ড হিসাবে আল্লাহর বিধানকে মেনে নেওয়াই হচ্ছে ঐক্যের একমাত্র সূত্র। আমাদের দেশের সকল হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খ্রিষ্টান, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি সকলকে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বার্থচিন্তার কারণে দেশকে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। দেশ ধ্বংস হলে কেউই রক্ষা পাবে না। তিনি আরো বলেন, এই সংকটকালে ভয় পেয়ে কেউ কেউ হয়ত দেশ ছেড়ে পালাবে, কেউ আবার সুযোগ বুঝে দেশে ঢুকবে। কিন্তু আমাদের দেশের জনগনের মুক্তি হবে না। সেই মুক্তির জন্য আসলে কী করণীয় সেই রূপরেখা হেযবুত তওহীদ তুলে ধরছে। আমরা দেশকে রক্ষার প্রস্তাব নিয়ে ময়দানে আছি। আমরা সবসময় জাতির কল্যাণে কথা বলেছি। আমরা বলেছি প্রয়োজনে বাংলাদেশের মাটিতে জীবন দেব, তবু দেশ ছেড়ে পালাব না, বাংলাদেশকে ইরাক সিরিয়া আফগানিস্তান হতে দেব না ইনশা’আল্লাহ।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে ব্যবসা, অপরাজনীতি, কায়েমি স্বার্থ উদ্ধার করা, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া, গুজব-হুজুগ সৃষ্টি করা বন্ধ করতে হবে। যেহেতু এই দেশের প্রায় ৯০% জনসংখ্যা মুসলমান, তাদের ধর্মানুভূতিকে ব্যবহার করে, ঈমানকে হাইজ্যাক করে বারবার এদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। কেউ তাদের ঈমানকে ব্যবহার করে রাজনীতি করেছে, কেউ জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়েছে, কেউ কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়েছে। এগুলো বন্ধ করার উপায় একটাই, ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা আল্লাহ রসুলের ইসলামের প্রকৃত রূপ জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই মানুষ পরিষ্কার বুঝতে পারবে কোনটা হক কোনটা বাতিল, কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা, কোনটা আল্লাহর হুকুম আর কোনটা ধর্মব্যবাসয়ীদের বানানো শরিয়াহ, কোনটা রাসুলুল্লাহর নির্দেশ আর কোনটা মিথ্যা ফতোয়া। এটা যখন জনগণের সামনে পরিষ্কার হবে তখন আর কেউ তাদের ঈমানকে হাইজ্যাক করতে পারবে না। ইসলামের প্রকৃত রূপ, প্রকৃত ইতিহাস ও আদর্শ জাতির সামনে তুলে ধরে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজটি আমরা করছি।
তিনি দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন একটা কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হই, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে পুরো জাতি ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলি। যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, ইনশা’আল্লাহ হলফ করে বলতে পারি, এই সংকট আমরা মোকাবেলা করতে পারব। আমাদের কাউকে না খেয়ে মরতে হবে না, বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে না, কেউ বস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাবে না, শিক্ষা থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না। এতটুকু নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি। ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্ত্বা গড়ে তুলতে পারলে সাম্রাজ্যবাদী অস্ত্রব্যবসায়ী পরাশক্তিধর সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রগুলোর লোলুপদৃষ্টি থেকে আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি নিরাপদ থাকবে। আল্লাহও তখন আমাদেরকে সাহায্য করবেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, হেযবুত তওহীদের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভাপতি খাদিজা খাতুন, সিলেট বিভাগীয় আমির মো. আলী হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় আমির মো. আলামিন সবুজ, কেন্দ্রীয় নারী ও শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, প্রচার বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল আলম উখবাহ, গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, আপন শিশু বিকাশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. সুলতানা রাজিয়া, উত্তরা ও গাজীপুর জোনের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রাব্বানী, মিরপুর শাখার সভাপতি আব্দুল হক বাবুল সহ স্থানীয় হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা।