হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম:
আমি কোনো রাজনীতি করি না। কোনো নির্দিষ্ট সরকারকে সাপোর্ট করি না। আমি সাধারণ মানুষ, কিন্তু আমার কথা সাধারণ নয়; আমাদের ছোট আন্দোলন, কিন্তু আমাদের বক্তব্য ছোট নয়। আমাদেরকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন না। বাঁচতে চাইলে আগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ করার কথা আল্লাহর রসুল বলেছেন। আল্লাহ আমাকে আদেশ দিয়েছেন আমি তোমাদেরকে আদেশ দিয়ে গেলাম। দাড়ি রাখার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। ঐক্যবদ্ধ করার আদেশ রাসুল দিয়েছেন, আল্লাহ দিয়েছেন। দাড়ি রাখার আদেশ আল্লাহ দেন নাই।
ঐক্যবদ্ধ করতে হবে জাতিবিনাশী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। জাতি বিনাশী বিভক্তি আর থাকা চলবে না। রাজনীতি অনৈক্য যেমন সেক্যুলার আন্দোলন, বাম আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সরকারি দল, বিরোধী দল, ধর্মীয় অনৈক্য যেমন ফেরকা মাযহাব তরিকা নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, কোনো ধরনের অনৈক্য চলবে না। কিছু কিছু মানুষ আমাকে বলে, ‘রসুলের সময়ও তো অনৈক্য ছিল’। কিন্তু তারা দেখে না যে তখন যারা অনৈক্য সৃষ্টিকারী কথা বলেছেন রসুল (স.) মিম্বরে দাড়িয়ে তাদের সতর্ক করেছেন এবং অনৈক্য করাকে কুফর বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফলে তারা তওবা করে ঐক্যের রশির মধ্যে ফিরে এসেছে। আর যারা ঐক্যের রশির মধ্যে আসে নাই তাদেরকে রসুল (স.) মো’মেন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন? দেন নাই। তারা কাফের, মুরতাদ, মোশরেক, মোনাফেক হিসেবে জাতি থেকে বিতাড়িত হয়েছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। জাতি হবে কয়টা? একটা। জাতির নেতা হবে কয়জন? একজন। এই সূত্র অলঙ্ঘীয় সূত্র। প্রকৃতিক সূত্র। তাহলে জাতির মধ্যে নেতা হবেন কে? আপনারা বাছাই করুন। আপনারা ভাববেন না যে, আমার নেতার হওয়ার খায়েস। না! আমি সূত্র দিয়ে গেলাম, মহামান্য এমামুযযামান সূত্র দিয়েছেন। নেতা আপনারা ঠিক করেন। কাকে নেতা বানাবেন, কে নেতা হবেন, কার আনুগত্য করবেন - আপনারা ঠিক করেন।
যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারেন ইসলামের রশি খুলে যাবে আর জাহান্নামের জ্বালানির পাথর হবেন। জাহান্নামের জ্বালানির পাথর হওয়ার আগে এটম বোমার জ্বালানির পাথর হবেন। আপনারা পম্পেই নগরীর নাম শুনছেন? ইটালির আগ্নেয়গিরি নাম হচ্ছে ভিসুভিয়াস। তার থেকেও আগ্ন্যুৎপাত হয়ে একটি নগরী মাটির সাথে মিশে গেছে। সেই নগরীর নাম পম্পেই। নগরীর মানুষগুলি যখন মিশে গেছে তখন পাথরের মতো মানুষ বসে ছিলো। আগ্ন্যুৎপাতে সেখানের মানুষ জন সব সঙ্গে সঙ্গে পাথর হয়ে গেছে। জাহান্নামের জ্বালানি পাথর হবেন? সেটা তো পরের কথা। এখনই তো হাউড্রোজেন আর এটম বোমার আঘাতে ধূলিসাৎ হতে হবে। তারপরে জাহান্নাম। আল্লাহর রাসুলের কথা ১০০% সত্য হবে। তাই আগে এক নাম্বার ঐক্য।
ঐক্যবদ্ধ করবেন কীভাবে?
আপনারা বলেন, কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হব? আপনাদের দলের কর্মীরাই তো নেতার কথা শুনে না। দলের সিদ্ধান্ত যদি হয়- তুমি নির্বাচনে দাঁড়াবে না, সঙ্গে সঙ্গে বলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে যাবো, আমি ওকে মানি না। ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন না আপনারা। ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব হেযবুত তওহীদ নিয়েছেন। হেযবুত তওহীদের কর্মীদেরকে, নেতাদেরকে, আমিরদেরকে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এখন মাঠে নামতে হবে।
আজকের সম্মেলনের প্রথম সিদ্ধান্ত- দুর্ভিক্ষের হাত থেকে জাতিকে বাঁচানোর জন্য এক নম্বর সূত্র কী? ঐক্যবদ্ধ হওয়া। কেমন ঐক্য? লোহার মতো ঐক্য, সীসার মতো ঐক্য। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য, ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আপনারা মাঠে ময়দানে নামবেন। আপনাদের বিছানা হবে আল্লাহর জমিন। আল্লাহ যা খাওয়াবেন মাঠে ময়দানে তা খাবেন। আপনারা যদি ঐক্যের দাওয়াত নিয়ে, ঐক্যের আহ্বান নিয়ে মাঠে ময়দানে থাকেন, তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করতে পারেন, কেউ কেউ আহত বিকলাঙ্গ হতে পারেন, কেউ কেউ নাস্তানাবুদ হতে পারেন, কেউ কেউ অর্থনৈতিকভাবে একেবারে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন।
সাহাবায়ে কেরাম জাহেলি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। এই সুন্নাহ অনুসরণ না করে অন্য কোনো পথে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন না। অফিসে বসে পারবেন না। এসি লাগানো টাইলসের অফিস, দামি চেয়ারে বসে কেউ কোনোদিন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে নাই। ঘরে বসে পোলাও কোরমা খেয়ে জাতিকে কেউ দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচাতে পারে নাই। তোমরাও পারবেনা। যেদিন তোমরা মাটি খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে, কলা রুটি খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবে সেদিন জনগণকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে।
সরকার বলছেন, সরকারের আদেশ শিরধার্য। আমরা ভেন্নার তেল ব্যবহার করব। আমাদের বিদ্যুৎ লাগবে না। ছোটবেলার কথা আমার মনে আছে, সূর্যের আলোয় বিদ্যুৎ ছাড়া লেখাপড়া করেছি। কুপি বাতি দিয়ে লেখাপড়া করেছি। আমরা পারব, আবার সেখানে ফিরে যাবো। কোনো বিদ্যুৎ লাগবে না। কিন্তু আপনারা যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, আপনারা যারা সমাজ চালাচ্ছেন তারা আগে আপনারা প্র্যাক্টিস করেন। তখন দেখবেন জাতি প্র্যাক্টিস করবে। এই দেশের বড় বড় শিল্পপতি, কোটিপতি, পয়সাওয়ালাদের ভবিষ্যৎ দেশে নাই। তাদের সন্তানদেরকে বিদেশে পড়ান। গত মাসের খবর, ব্রিটেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ২০ হাজার স্টুডেন্টকে ভিসা দিয়েছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। লেখাপড়া করার জন্য আমরা ব্রিটেনে যাচ্ছি। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছুরি চাপাতি দিয়ে মারামারি লাগিয়ে দিয়ে আপনাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু তারা সেখান থেকে ইসলাম শিখে আসবে না, দাজ্জালীয় সভ্যতা রপ্ত করে আসবে।
আমার দেশের সেনাপ্রধান চাকরি যাওয়ার পরে বিদেশে চলে যান। আমার দেশের রাষ্ট্রপতি চাকরি যাওয়ার পরে বিদেশ চলে যান। আমার দেশের পুলিশ প্রধান বিদেশ চলে যান। আমার দেশের যাদের পয়সা আছে তারা বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসা করান। ছেলেমেয়েদেরকে বিদেশে লেখাপড়া করান। কে বাঁচাবে আমাদের দুর্ভিক্ষ থেকে? আল্লাহ বাঁচাবেন? না, আল্লাহ শর্ত দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, আমি বাঁচাবো। শর্ত একটাই- মো’মেন হতে হবে। কী হতে হবে? মো’মেন। পত্রিকার সম্পাদক কোথায়? খবর নিয়ে দেখেন, সম্পাদক মহোদয় বিদেশে। কলকারখানা ইন্ডাস্ট্রির এমডি পরিচালক বিদেশে, সব বিদেশে। তাদের ভবিষ্যৎ এখানে নাই। বিচারপতি অবসর নিয়ে চলে যান বিদেশে। সন্তানরা আগে থেকেই সেখানে প্রতিষ্ঠিত। তারা বলেন, এ দেশে কোনো ভবিষ্যৎ নাই। তাহলে জাতিকে কে বাঁচাবে? কে দুর্ভিক্ষর হাত থেকে বাঁচাবে? রাজনৈতিক সংকট থেকে বাঁচাবে কে?
আপনারা দীর্ঘদিন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। জ্ঞান অর্জন করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা সেই জ্ঞান নিয়ে আপনারা চলে যাচ্ছেন বিদেশে। সন্তানদেরকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বিদেশে। আর নাক শিঁটকিয়ে বলেন, এই দেশের কোনো ভবিষ্যৎ নাই। এই দেশের ভবিষ্যৎ আপনারা নষ্ট করেন। আমাদের ভবিষ্যৎ আপনারা নষ্ট করেন। কিন্তু আপনার সন্তান বিদেশে গিয়ে নাদুসনুদুস হতে পারে, আমার সন্তানদেরকে বাংলার মাটিতে কঙ্কালসার হতে দেব না। এ মাটি আমার, দেশ আমার, মানুষ আমার। আপনার সব নিয়ে বিদেশ যান, কিন্তু বাংলার মাটিতে পা রাখতে পারবেন না।
দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতে হলে হেযবুত তওহীদ এখন থেকে তোমরা পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় শহরে নগরে বন্দরে তোমরা বেরিয়ে পড়ো। কোনো প্রতিরোধের তোয়াক্কা করবে না। কোনো সমালোচনাকারীর সমালোচনা তোয়াক্কা করবে না। তোমরা কি জীবন দিতে প্রস্তুত? যদি তোমরা জীবন দিতে প্রস্তুত হও তবে এই জাতি দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচবে।
এ জাতিকে যতদূর সম্ভব ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ধর্মগুরুরা ঐক্যবদ্ধ হতে দেবে না। যার যার মাদ্রাসা তার তার এলাহ। আল্লাহ এখন এদের কাছে এলাহ নয়। যারা শাসন করে ব্রিটিশদের তৈরি আইন দিয়ে করে। পশ্চিমাদের জীবন দর্শনই তাদের এলাহ। যারা রাজনীতি করে পশ্চিমারা তাদের এলাহ। কাজেই এরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে না। হেযবুত তওহীদ তোমরা মাঠে নাম। ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বেরিয়ে পড়ো।
[ হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ থেকে সম্পাদিত: হাসান মাহ্দী ]