লুৎফুন্নাহার মিতু:
মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত একমাত্র আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করার ফলেই সমাজে পরিপূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এটা ইতিহাস। আমরা যদি মানব সভ্যতার শুরুর শুরুর দিক থেকে নিয়ে বর্তমান পর্যন্ত দৃষ্টি দেই তাহলে সহজেই তা বোঝা যাবে। আদম (আ.) সৃষ্টির পর থেকে যে কয়েকটি দীন সম্পর্কে আমরা জানতে পারি তার সেগুলোর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে যখন সেই দীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার প্রভাবে মানুষগুলো সোনার মানুষের পরিণত হয়েছিল, আর সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অনাবিল শান্তি ও নিরাপত্তা।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাবা আদম (আ.) ও মা হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন, তাদের জান্নাতে বসবাস করতে দিলেন একটি মাত্র নিষেধ আরোপ করে। কিন্তু ইবলিশের প্ররোচনায় আদম-হাওয়া আল্লাহর নিষেধকে অমান্য করল যার ফলে আল্লাহ তাদের জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন।
আল্লাহর হুকুম অমান্য করায় ইবলিশকেও যখন আল্লাহ জান্নাত থেকে বিতাড়িত করলেন তখন ইবলিশ আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করেছিল - মানুষকে দিয়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, হেদায়াহকে অস্বীকার করিয়ে, আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থাকে বর্জন করিয়ে নিজেদের তৈরি জীবনব্যবস্থা তৈরি করাবে এবং মানুষকে দিয়ে সেই জীবনব্যবস্থাই মান্য করাবে। হয়েছেও তাই। বর্তমানের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা তা-ই দেখতে পাই। মানুষ আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে নিজেদের তৈরি জীবনব্যবস্থাকেই গ্রহণ করে নিয়েছে। ইবলিশ যখন আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করেছিল তখন আল্লাহ তার প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, “আমি যুগে যুগে পথপ্রদর্শক পাঠাবো। যারা সেই পথনির্দেশ অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই, তারা চিন্তিত হবে না।” (সুরা বাকারা ৩৮)
যখনই মানুষ আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি প্রত্যাখ্যান করে মানুষের তৈরি অর্থাৎ গায়রুল্লাহর তৈরি জীবনবিধান মেনে নিয়ে পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট করে নরককুণ্ডে পরিণত করতে চেয়েছে তখনই আল্লাহ তাঁর তরফ থেকে একজন পথপ্রদর্শক পাঠিয়েছেন। দীনের ভারসাম্য ফিরিয়ে এনেছেন। যুগে যুগে আল্লাহ তার নবী-রসুলদের মাধ্যমে জীবনব্যবস্থা পাঠিয়ে বলেছেন, আমাকে একমাত্র প্রভু, হুকুমদাতা, বিধানদাতা বলে বিশ্বাস কর এবং মেনে নাও। এই জীবনব্যবস্থা দিয়ে তোমাদের জাতীয়, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনা কর। তাহলেই তোমাদের পৃথিবী স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে। তোমরা শান্তিতে থাকবে। তোমাদের কোনো ভয় থাকবে না। কীসের ভয় থাকবে না? পৃথিবীতে ঐ ফাসাদ, অশান্তি, রক্তপাতের এবং পরবর্তীতে জাহান্নামের ভয় থাকবে না।
আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠার ফল হয়েছিল জাতীয়, পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবনের শান্তি। সমাজে কোনো অন্যায়-অশান্তি, রক্তপাত ছিল না। মানুষ মানুষকে হত্যা করত না, ঠকাত না। সমাজে কেউ কোন রকম অপরাধ করার সাহস পেত না। মানুষ ঘরের দরজা খুলে ঘুমাত। শত্রুও ভাইয়ে পরিণত হয়েছিল।
কালের পরিক্রমায় মানুষ দীনের বিধি-বিধান নিয়ে বাড়াবাড়ি করে দীনের আকিদা বিকৃত করে, আল্লাহর দেওয়া জীবনবিধানকে প্রত্যাখ্যান করে, মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থা মেনে নিয়ে মানবজাতি চরম অন্যায় অবিচারের আবারও দীনের ভারসাম্য নষ্ট করেছে। কিন্তু শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পর তো আল্লাহ আর কোন নবী-রসুল পাঠাবেন না। তাহলে বর্তমানের এই পথভ্রষ্ট জাতিকে কে হেদায়াতের পথে নিয়ে যাবে?
মানবজাতি যদি তার ভুল বুঝতে পেরে মানুষের তৈরি জীবনবিধান প্রত্যাখ্যান করে, একমাত্র আল্লাহকে এলাহ্ অর্থাৎ হুকুমদাতা হিসাবে তাঁর দেওয়া জীবনবিধান মেনে নেয় এবং ব্যক্তিজীবন থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত তা প্রতিষ্ঠা করে, তবে আবারও পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সমস্ত অন্যায় অপরাধ নির্মূল হয়ে পৃথিবী সুখরাজ্যে পরিণত হবে।
[যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৫১, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১৫৭১৫৮১]