অর্থনীতি ও বাণিজ্য ডেস্ক:
২০২২ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা কমে ইতিহাসের সর্বনিম্নে নেমে গিয়েছিল ইউরোপের দেশগুলোয়। চলতি বছর তা মোটাদাগে অপরিবর্তিত থাকবে বলে প্রত্যাশা করছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। তবে রাশিয়া রফতানি কমিয়ে দেয়ায় অঞ্চলটিতে সরবরাহ অব্যাহত ঝুঁকির মুখে থাকবে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।
প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটি গ্যাসের বাজারবিষয়ক এক প্রতিবেদনে জানায়, জ্বালানি পণ্যের অস্থিতিশীল বাজার ও রাশিয়া থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। শুধু তাই নয়, এতে বৈশ্বিক সরবরাহ খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আইইএর জ্বালানি বাজার ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক কিসুক সাদমোরি বলেন, ‘গ্যাসের বৈশ্বিক বাজারের জন্য একটি ব্যতিক্রমধর্মী বছর ছিল ২০২২ সাল। তবে এ বছর দাম আবারো নাগালের মধ্যে ফিরতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ইউরোপে শীতের স্বল্প প্রভাব ও চাহিদা বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে।’
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতি ও সবচেয়ে বড় জ্বালানি আমদানিকারক। তিন বছর জিরো কভিড নীতির কারণে দেশটির অর্থনীতি ছিল স্থবির। দেশটিতে চাহিদা কম থাকায় ইউরোপ চাহিদামাফিক পর্যাপ্ত গ্যাস ও জ্বালানি কিনতে সক্ষম হয়েছে। ব্লকটি এ সুযোগে গ্যাসের মজুদ পরিপূর্ণ করেছে। ফলে সরবরাহ সংকট ছাড়াই গত বছর পার করেছে ইউরোপের দেশগুলো। তবে চীন এ বছর সব ধরনের বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ায় অর্থনীতি গতিশীল হতে শুরু করেছে। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জ্বালানি পণ্যের চাহিদা ও আমদানি।
গত বছরের আগস্টে প্রাকৃতিক গ্যাসের ইউরোপীয় বাজার আদর্শ চুক্তি মূল্য (টিটিএফ) বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। প্রতি ঘণ্টা মেগাওয়াটের মূল্য স্থির হয় ৩৪৩ ইউরোয়। তবে বর্তমানে দাম কমে প্রতি ঘণ্টা মেগাওয়াট ৫০ ইউরো বা ৫৩ ডলারে অবস্থান করছে।
আইইএ বলছে, এশিয়ার বাজারে বিশেষ করে চীনে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ফলে গ্যাসের দাম আবারো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংস্থাটি মনে করছে, চলতি বছর চীনে এলএনজির চাহিদা ২০২২ সালের তুলনায় ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। দাম কমে যাওয়া ও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে দেশটিতে এলএনজির ব্যবহার বাড়তে পারে ৩৫ শতাংশ।
এতে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে প্রতিযোগিতা চরমে পৌঁছতে পারে। দাম গত গ্রীষ্মের অস্থিতিশীল পর্যায়ে ফিরে যেতে পারে, যা ইউরোপের ক্রেতাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য গত কয়েক মাসে ইউরোপের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে বেশকিছু এলএনজি আমদানি চুক্তি করেছে।
ইউরোপে গত বছর গ্যাসের চাহিদা ১৩ শতাংশ কমেছে। আইইএ জানায়, এর বিপরীতে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় চাহিদা বেড়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। বিদ্যুতের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে গ্যাসের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী ছিল।