মো. তুহিন, শ্রীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি ও বনবিভাগের রাস্তা ব্যবহার করার অপরাধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশে গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে দুটি এক্সভেটর মেশিনসহ বারোটি ডাম্পার জব্দ করেছেন শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে একটি এক্সভেটর জব্দ করা হয় হয় সাতখামাইর থেকে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি),শ্রীপুর আতাহার আলী। অভিযানে সহযোগিতা করেন শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান ও আনসার সদস্যবৃন্দ।
দুটি অভিযানই পরিচালিত হয় সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যারাতে ও মধ্যরাতে। এর মধ্যে দ্বিতীয় অভিযান পরিচালিত হয় রাত ২টার দিকে। মাওনা ইউনিয়নের ভেরামতলী গ্রামে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ। এ সময় তাঁর সঙ্গে অভিযানে ছিলেন শ্রীপুর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান, মাওনা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মো. হুমায়ূন, রাথুরা বিটের ফরেস্ট অফিসার মো. এমদাদুল হক ও শ্রীপুর রেঞ্জের স্টাফগণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নুহাশপল্লীর উত্তর পাশে তরুবীথি পিকনিক স্পটে মাছ চাষের নাম করে ৩০ ফুটের অধিক গভীর গর্ত করে বড় একটি অংশের মাটি বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। গভীর গর্তের কারণে আশপাশের কৃষি জমি পানির অভাবে চাষাবাদ অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
আরও জানা যায়, ১৯৯৯ সনের বন বিভাগের দেওয়া অযৌক্তিক ও আইন পরিপন্থী ডিমার্কেশনের দোহায় দিয়ে শালবন ঘেঁষে মাটি কেটে তা বনের ভেতরের রাস্তা দিয়ে ডাম্পার দিয়ে সিরামিক কোম্পানি, ইটভাটা ও মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হতো। এতে উধাও হচ্ছিল বনজ ও ভেষজবৃক্ষ। ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছিল জীববৈচিত্র্যের। প্রান্তজন ছিল স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
এ নিয়ে একাধিক দৈনিক ও নিউজপোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দৃষ্টিগোচর হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের। তিনি তাৎক্ষণিক তদন্ত সাপেক্ষে বিধিমোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনকে। ডিসির নির্দেশে শ্রীপুরের ইউওনও ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ সরেজমিনে তদন্তে পাঠান শ্রীপুরের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমানকে। মো. মোখলেছুর রহমান তদন্ত শেষে চক্রের সদস্য তরুবীথি পিকনিক স্পটের মালিক মো. রফিক ও তার সহযোগি গাজীপুর জেলা জিয়া পরিষদেরসহ সভাপতি মো. আব্দুল আলীমকে মাটি কর্তন বন্ধের নির্দেশের পাশাপাশি বন ও বন্যপ্রাণীদের রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বনের রাস্তায় সিমেন্টের খুঁটি ও গাছের গুঁড়ি দিয়ে আটকে দিলে অবৈধ মাটি বিক্রি চক্রের হোতা রফিক ও আব্দুল আলীমের নির্দেশে স্থানীয় সানোয়ার, রাকিব ও জিকু সদলবলে রাথুরা বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক ও স্টাফদের প্রকাশ্যে অকথ্য গালিগালাজ করে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে নির্মিত বেড়া ভেঙে ফেলে। চক্রের সদস্য মাসুম পল্লী রিসোর্টের মালিক সানোয়ার ও হিমেল হাওয়া রিসোর্টের মালিক রাকিব প্রকাশ্যে বনবিভাগের বেস্টনী ভেঙে ফেলার ভিডিও করে তা নিজের আইডি থেকে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। মাটি ব্যবসায় জড়িত অনেকেই তা শেয়ার করে সহমত প্রকাশ করেন। এসবের প্রেক্ষিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা বনের পাশে এত বিশাল গর্ত করাকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য নেতিবাচক দিক হিসেবেই দেখছি। যদিও জমির মালিক সেটি নিজের ডির্মাকেশন করা জমি উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া ডাম্পার বনের রাস্তা ব্যবহার করে বন,পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির পাশাপাশি মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের কারণে আশপাশের কৃষি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২টি এক্সভেটর মেশিন ও ১২টি ডাম্পার জব্দ করেছি। মাটি কাটা বন্ধ আছে। ডিমার্কেশনের কাগজপত্র যাচাই বাচাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অভিযান অব্যাহত থাকবে।