সুশান্ত কুমার মল্লিক, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি:
কেশবপুরে চলছে সারা বছর ধরে চলে বালু ও মাটি কাটার মহোৎসব। কৃষিজমি, টিলা, খাল-বিল কোনো কিছুই বাদ যায় না মাটি খেকোদের হাত থেকে। ইটভাটায় মাটির জোগান, ডোবা ভরাট, বসতভিটা, রাস্তা তৈরিসহ বৈধ ও অবৈধ নানা কাজে কৃষি জমির উর্বর অংশ তথা টপ সয়েল কাটা শুরু চলছে। এসব মাটি লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে মাটি খেকোরা। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের অভিযান হলে জরিমানার টাকাকে ব্যবসার খরচ ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জন্য বৈধ ও অবৈধ বাজেট রেখে প্রতিবছর কৃষিজমি নিজেদের স্বার্থে ধ্বংস করছেন তারা।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শস্যভাণ্ডার খ্যাত ৩৪৭.৭২ বর্গমিটার আয়তন ও প্রায় ৩ লাখ জনসংখ্যার কেশবপুর উপজেলায় ইটভাটা আছে ১৬টি। চলতি বছর সচল ছিল ১১টি। কোন ভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই। ইটভাটার বেশীর ভাগই গড়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়কের পাশে কৃষি জমির পাদদেশে। ইটভাটার প্রধান উপকরণ হচ্ছে কৃষি জমির টপ সয়েল। কৃষি জমি থেকে হাজার হাজার একর টপ সয়েল রাতের আঁধারে কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করার কারণে বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে অনেক কৃষি জমি। যা জমির প্রাণ হিসেবে পরিচিত। কোটি টাকার মাটি কাটলে জরিমানা হয় মাত্র ৫০ হাজার টাকা। এটা ধরে নিয়েই মাটি খেকোরা অবাধে মাটি কেটে চলেছে।
বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপণা সংশোধন আইন-২০০৩ বলছে, কোনও ফসলি জমি থেকে বালু বা মাটি কাটা যাবে না। কৃষি বা অন্য ফসলি জমির টপ সয়েল কাটলে (জমির মাটির উপরের অংশ) দুই বছর জেল খাটতে হবে। এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার বায়সা, শ্রীরামপুর, জাহানপুর, মির্জাপুর, বগা, মহাদেবপুর, চালিতাবাড়িয়া, ভোগতী গ্রামের চিহ্নিত মাটি ব্যবসায়ীরা মাটি কাটা ব্যবসায় জড়িত। এরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে।
স্থানীয় পরিবেশবাদীরা করেন, অধিকাংশ মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। স্কাভেটর দিয়ে গভীরভাবে চাষী জমির মাটি কাটায় আশপাশের জমির চেয়ে ওইসব জমি নিচু হয়ে যাচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বোরো আবাদের জমিসহ ক্ষুদ্র কৃষকদের জমি। অব্যাহতভাবে মাটি কেটে ট্রাক্টার, মিনি ট্রাকযোগে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি সড়ক দিয়ে যাতায়াতে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। হুমকিতে পড়েছে এলাকার শতশত স্কুল পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থী, ঘটছে দুর্ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বোরো আবাদের জমিসহ কৃষক।
এ ব্যাপারে এক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, আমরা জনস্বার্থে মাটি কাটার কাজ করি। তাছাড়া ইটভাটার প্রধান উপকরণ তো মাটি। কেশবপুরে ব্যাপক ইটের চাহিদা রয়েছে। মাটি কাটায় ইতোমধ্যে তার দুবার করে ৪ জন শ্রমিককে ধরে উপজেলা প্রশাসন জরিমানা করেছে। ভাবছি এ ব্যবসা আর করবো না।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুজ্জামান বলেন, যেখানে মাটি কাটার খবর পাচ্ছি সেখানেই অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মাটি কাটার অভিযোগে এ বছর কয়েক মাটি ব্যবসায়ীর মালামাল জব্দসহ জেল-জরিমানা করা হয়েছে। এরপরও থামানো যাচ্ছে না।