খেলারপত্র ডেস্ক:
আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসেছেন দুই দেশের মধ্যকার ফুটবলীয় সম্পর্ক স্থাপন করার উদ্দেশ্যে। গতকাল রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দেশের শীর্ষ ক্লাবগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তারা।
ঘুরে দেখেছেন ক্লাবগুলো। দেশের হ্যাটট্রিক লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের স্টেডিয়াম বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন রিভার প্লেটের কর্মকর্তারা। রিভার প্লেটের আন্তর্জাতিক ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান সেবাস্তিয়ান পেরেজ এসকোবার এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফুটবল স্কুল বিভাগের উপদেষ্টা গঞ্জালো লামাস আজ বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা ঘুরে দেখেছেন। শুধু তা-ই নয়, দেখেন পুরো স্পোর্টস কমপ্লেক্সই চোখ ছেয়ে যায় তাদের।
কিংস অ্যারেনা স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণাধীন থাকলেও ফুটবল মাঠ, গ্যালারি ও ড্রেসিং রুম ব্যবহার উপযোগী। এছাড়া স্পোর্টস কমপ্লেক্সের পুরো পরিকল্পনা তাদের সামনে তুলে ধরেন ক্লাব প্রতিনিধিরা। কেবল তাই নয়, তাদের কাছে কিংস অ্যারেনার সুযোগ-সুবিধা আর্জেন্টিনার ক্লাবের মানের মতোই মনে হয়েছে।
প্রায় ঘণ্টা খানেক সময় নিয়ে স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঠের এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত, গ্যালারি, ড্রেসিং রুম, মিডিয়া সেন্টার সবই পরখ করেছেন। দেখেছেন ফুটবল মাঠ থেকে শুরু করে ক্রিকেট মাঠ এবং নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোও। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রিভার প্লেটের আন্তর্জাতিক ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান সেবাস্তিয়ান পেরেজ এসকোবার বলেন, ‘বেশ সুন্দর লেগেছে কিংস অ্যারেনা। আর্জেন্টিনার মতোই। আমাদের রিভার প্লেটের গ্যালারি অবশ্য অনেক বড়, ৮৪ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। সেখানে সুইমিংপুল, বাস্কেটবলসহ অনেক স্থাপনা রয়েছে। কিংসের নির্মাণ কাজ শেষ হলে আরো সুন্দর লাগবে। কিংসকে আর্জেন্টিনার প্রথম বিভাগ ক্লাবগুলোর মতোই লাগছে।’
‘আমাদের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে প্রি-স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আছে। এখানে তেমনটা করতে পারলে অনেক ভালো হবে। খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে হবে শিশুদের।’
ক্লাবের কাজে বিশ্বের অনেক দেশেই ঘুরতে হয় সেবাস্তিয়ানকে। তাই কিংস অ্যারেনার সুযোগ-সুবিধা অন্য দেশের সঙ্গেও তুলনা করলেন তিনি, ‘আমি অনেক দেশেই গিয়েছি, কিন্তু অনেক ক্লাবেই এ রকম সুযোগ সুবিধা দেখিনি।’
রিভার প্লেট বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলকে আরও উন্নত করতে চায় তাদের অভিজ্ঞতা বণ্টন করে। এসকোবার বলেন, ‘তরুণ খেলোয়াড়দের গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা তরুণ ফুটবলারদের শেখাই কিভাবে ফুটবল খেলতে হয় এবং অন্যান্য বিষয়েও তাদের ধারণা দেই। আমরা এখানে আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবো।’
ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশের ভালোবাসা অন্য কোথাও দেখেননি স্কবার। তিনি বলেন, ‘ফুটবলের জন্য কাজ করতে যেয়ে অনেক দেশেই আমাদের যেতে হয়েছে। তবে আমরা যেভাবে ফুটবলকে ভালোবাসি বাংলাদেশের মানুষও সেভাবেই ফুটবলকে ভালোবাসে। এটা আমাদের মুগ্ধ করেছে। এমনটা আমরা অন্য কোথাও দেখিনি।’
বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে কোনো প্রীতি ম্যাচ খেলতে চান কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক ফুটবল স্কুল বিভাগের উপদেষ্টা গঞ্জালো লামাস বলেন, ‘এখানে আর্জেন্টিনার অনেক ভক্ত আছেন। আর্জেন্টিনার প্রতি তাদের ভালোবাসার সম্পর্কে আমরা অবগত। অবশ্যই আমরা এখানে খেলতে চাই। তবে এখন আমরা এসেছি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য। প্রথমে আমরা এটা নিয়েই ভাবছি। আমাদের একসঙ্গে অনেক কিছু করার আছে। অবশ্যই আমরা কিংস এবং রিভার প্লেটের মধ্যে অনেক ম্যাচ খেলবো। কিন্তু তার আগে আমাদের অনেক কিছু করার আছে।’
বাংলাদেশের তরুণ ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দেওয়াই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন লামাস। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের শিশু ফুটবলারদের ভালো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। যেন তারা পেশাদার ফুটবলার হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এখান থেকেই গড়ে উঠবে ভবিষ্যতের হুলিয়ান আলভারেস, এনসো ফার্নান্দেস।’
রিভার প্লেট ক্লাব মূলত একাডেমি পর্যায়ে কাজ করতে চায় বাংলাদেশের ক্লাবের সঙ্গে। গতকাল (সোমবার) চার ক্লাব আলোচনা করলেও অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনায় আবাহনী ও কিংসই যে এগিয়ে, সেটা প্রতিনিধিরা আজ (গতকাল) সকালেই উপলব্ধি করেছেন। কবে নাগাদ বাংলাদেশের ক্লাবের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু এই ব্যাপারে একটু কৌশলী উত্তরই দিলেন রিভারপ্লেটের প্রতিনিধি, ‘আমরা ফিরে যাওয়ার পর আমাদের ক্লাবের সঙ্গে আলোচনা করব। বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলবে। আশা করা যায় এই বছরের মধ্যে একটা কিছু হবে।’
বসুন্ধরা কিংস দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিহাব রিভারপ্লেট প্রতিনিধিদের পুরো অ্যারেনা ঘুরে দেখিয়েছেন। আর্জেন্টিনার এই ক্লাবের চাওয়া ও কিংসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তারা মূলত একাডেমি স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা নিয়েই ভাবছে। আর্জেন্টিনায় ফিরে গিয়ে তারা প্রস্তাবনা দেবে। আমাদের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ চলবে’। এদিকে কিংস অ্যারেনায় যাওয়ার আগে সকালে আবাহনী ক্লাব পরিদর্শন করেন রিভার প্লেটের কর্মকর্তারা।