ক্রীড়া প্রতিবেদক: দক্ষিণ কোরিয়াকে বিধ্বস্ত করে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। এর মাধ্যমে ১৯৯০ পর বিশ্বকাপের সবগুলো আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে ব্রাজিল। আজ ব শেষ ষোলর ম্যাচে ব্রাজিল ৪-১ গোলে হারিয়েছে এশিয়ার দল দক্ষিণ কোরিয়াকে। ম্যাচের ৩৬ মিনিটের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার জালে এক হালি গোল দিয়ে ম্যাচ জয়ের পথ নিশ্চিত করে ব্রাজিল। ব্রাজিলের পক্ষে গোল চারটি করেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র, নেইমার, রিচার্লিসন ও লুকাস পাকুয়েটা। দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে একমাত্র গোলটি আসে পাইক সেয়াং-হোর পা থেকে। দোহার ৯৭৪ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে নেইমার ও ডানিলোকে নিয়েই খেলতে নামে ব্রাজিল। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে গোড়ালির ইনজুরিতে পড়েছিলেন তারা। নেইমার-ডানিলোকে পেয়ে যেন উজ্জীবিত হয়ে উঠে ব্রাজিল। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমনাত্মক খেলতে থাকে দক্ষিণ আমেরিকার দলটি। ১৩ মিনিটের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার জালে ব্রাজিলের ২ গোল। সপ্তম মিনিটে ডান-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ রচনা করেন রাফিনহা। দক্ষিণ কোরিয়ার বক্সের ভেতর প্রবেশ করে বাঁ-দিকে পাস দেন তিনি। বক্সের ভেতর মাঝের দিকে থাকা নেইমার-রিচার্লিসন বলের নাগাল পাননি। এতে বল চলে যায় পেছনে থাকা স্ট্রাইকার ভিনিসিয়াস জুনিয়রের কাছে। বলকে থামিয়ে সময় নিয়ে কোনাকুনি শটে গোল করেন ভিনিসিয়াস(১-০) এরপর ওপেনাল্টি থেকে ১৩ মিনিটে গোলের ব্যবধান দ্বিগুন করে ব্রাজিল। ডি বক্সের ভেতরে রিচার্লিসনকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। বলে শট নিতে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার মিডফিল্ডার জুং উ-ইয়ংয়ের পা রিচার্লিসনের পায়ে লাগায় পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্রাজিলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন দলের সেরা তারকা নেইমার। যা ছিল এবারের বিশ্বকাপে নেইমারের প্রথম গোল। এই গোলের মাধ্যমে করে অনন্য এক নজির গড়েছেন নেইমার। ব্রাজিলের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ভিন্ন তিনটি আসরে গোল করলে নজির সৃস্টি করেন নেইমার। ২০১০ আসরে না পররলেও ২০১৪ এবং ২০১৮ বিশ্বকাপের পর এবার বিশ্বকাপে গোল করলেন নেইমার। নেইমারের আগে এই কীর্তি গড়েছিলেন তারই দেশের দুই দুই কিংবদন্তী পেলে ও রোনালদো। এই গোলের মাধ্যমে কিংবদন্তি পেলের ঘাড়ে এখন নিশ্বাস খেলছেন নেইমার। ব্রাজিলের জার্সিতে পেলের গোল সংখ্যা ৭৭, নেইমারের ৭৬। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও ক্ষান্ত হয়নি ব্রাজিল। বরং দক্ষিণ কোরিয়াকে আরো চেপে ধরে। তবে এরমাঝেও গোলের জন্য মরিয়া ছিলো দক্ষিণ কোরিয়া। ১৭ মিনিটে ব্রাজিলের গোলরক্ষক এ্যালিসনের দৃঢ়তায় নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হয় দক্ষিণ কোরিয়া। ২৫ গজ দূর থেকে বাতাসে ভাসানো শট নিয়েছিলেন মিডফিল্ডার হুয়াং হি-চান। তার শট বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন এ্যালিসন। তবে পাল্টা আক্রমণ থেকে ২৯ মিনিটে আবারও গোলের আনন্দে মেতে উঠে ব্রাজিল। গোলটি ছিলো চমৎকার ওয়ান-টু-ওয়ান পাসে। ডি বক্সের বাইরে থেকে মার্কুইনহোসকে পাস দিয়ে ভেতরে ঢুকেন পড়েন রিচার্লিসন। মার্কুনইহোসের কাছ থেকে বল পান থিয়াগো সিলভা। ততক্ষণ দক্ষিণ কোরিয়ার বক্সের ভেতর ফাকাঁয় রিচার্লিসন। তাকে উদ্দেশ্য করে বল দেন থিয়াগো সিলভা। বলকে ডান পায়ে থামিয়ে বাঁ-পায়ের শটে গোল করেন রিচার্লিসন(৩-০)। ৩-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও আক্রমনাত্মক খেলা অব্যাহত রাখে ব্রাজিল। গোলের ক্ষুধা ফুটে উঠে সাম্বার ছন্দময় ফুটবলে। এরপর চতুর্থ গোল পেতেও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। মধ্যমাঠ থেকে বল পেয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকে সময়ক্ষেপন না করে ক্রস করেন প্রথম গোলের মালিক ভিনিসিয়াস। উড়ে আসা বলে ডান-পায়ের শটে দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক কিম সেয়াং-গাইয়ুকে বোকা বানান মিডফিল্ডার লুকাস পাকুয়েটা(৪-০)। দক্ষিণ কোরিয়ার জালে এক হালি গোল পূর্ণ করে ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ করে ব্রাজিল। প্রথমার্ধ শেষে ৪-০ গোলে এগিয়ে ব্রাজিল। এতে ফিরে আসে ১৯৫৪ সালের স্মৃতি। সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ঐ আসরে মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধে ৪-০ গোলে এগিয়ে ছিলো ব্রাজিল। ৬৮ বছর পর বিশ্বকাপের মঞ্চে ম্যাচে প্রথমার্ধেই প্রতিপক্ষের জালে এক হালি গোল দেয়ার নজির গড়লেন নেইমার- রিচার্লিসনরা। প্রথমার্ধে ৫৭ শতাংশ বল দখলে রেখেছে ব্রাজিল। বিরতির পর প্রথম আক্রমনেই গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে দক্ষিণ কোরিয়া। ডিফেন্ডার কিম ইয়ং-গুনের অ্যাসিস্ট থেকে শট নিয়েছিলেন মিডফিল্ডার সন হেয়াং-মিন। কিন্তু সেটি আটকে দেন ব্রাজিলের গোলরকক্ষক এ্যালিসন। এরপর ৬৮ মিনিটেও একবার দক্ষিণ কোরিয়াকে গোল বঞ্চিত করেন এ্যালিসন। ব্রাজিলের বক্সের জটলার মধ্যে গোলমুখে শট নিয়েছিলেন মিডফিল্ডার হুয়াং হি-চান। ডান-দিকে ঝাপিয়ে সেই শট রুখে দেন এ্যালিসন। তবে ৭৬ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রথম গোলের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করতে পারেননি এ্যালিসন। ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা একটি বল বক্সের বাইরে পেয়ে যান মিডফিল্ডার পাইক সেয়াং-হো। প্রায় ২০ গজ থেকে দূরপাল্লার দুর্দান্ত বলকে ব্রাজিলের জালে পাঠান পাইক(১-৪)। ব্যবধান ৪-১ করে দক্ষিণ কোরিয়া। শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলেই ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। ম্যাচ জয়ের পর ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলের ছবি নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন নেইমার-ভিনিসিয়াস-রিচার্লিসনরা। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ জাপানকে হারানো ক্রোয়েশিয়া।