স্টাফ রিপোর্টার:
মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ সময় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। পাশাপাশি কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিকও হেনস্তার শিকার হন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, এদিন চারুকলার ক্যাম্পাস স্থানান্তর আন্দোলনের ১০০তম দিন ছিল। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই ব্যানার, পোস্টার সহকারে শহীদ মিনারের আশপাশে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। বিভিন্ন অনুষদের অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীও তাদের সমর্থন দেন। আন্দোলন চলাকালে হঠাৎ ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী এসে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে ব্যানার টেনে নিয়ে যান। পরবর্তীকালে তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলার নাম করে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে অন্য পাশে নিয়ে উপর্যুপরি লাথি, থাপ্পড় মারেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। তাছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সমকালের চবি প্রতিনিধি মারজান আক্তারকে হেনস্তা করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। তাদের হামলার ভিডিও ডিলিট করার জন্য মারজানকে চাপ দেন তারা। এ ছাড়া আরটিভির ক্যামেরা পারসন এমরাউল হোসেন মিঠুকেও ধাক্কা দেন তারা। হামলায় জড়িত কর্মীরা শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ভিএক্স এবং বাংলার মুখের অনুসারী বলে জানা গেছে। আন্দোলনকারী শহীদ বলেন, ১০০তম দিন উপলক্ষে আমাদের নিয়মিত দাবিতে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছিলাম। হঠাৎ করে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী এসে আমাদের ওপর হামলা করে। এ সময় আমাদের ১০-১২ জনকে আলাদাভাবে নিয়ে মারধরও করে তারা। মেয়েদের গায়েও হাত তোলে তারা। আমাদের একজন ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। এ সময় বারবার প্রক্টর ও প্রশাসনিক বডিকে কল দিলেও তারা কেউই সাড়া দেননি। আরেক শিক্ষার্থী সুস্ময় বড়ুয়া বলেন, স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে প্রশাসনের ইন্ধনে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলা করে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। মূল দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা অনশনের দিকে যাবো। হেনস্তার বিষয়ে দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারজান আকতার বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা যখন আন্দোলনকারীদের বাধা দিচ্ছিল তখন পেশাগত দায়িত্ব হিসবে তার ফুটেজ নিচ্ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীরা এসে আমাকে আটকায় এবং ভিডিও ডিলিট করার জন্য জোর করতে থাকে। আমি ডিলিট করতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে নিরাপত্তাজনিত হুমকি দেয়। হামলার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং ভিএক্স গ্রুপের নেতা মারুফ আহমেদ বলেন, চারুকলার আন্দোলনে আমাদের কিছু ছেলে অংশগ্রহণ করেছিল। আমরা তাদের আন্দোলন থেকে নিয়ে আসার জন্য গিয়েছিলাম। আমরা কারও ওপর হামলা করিনি। সাংবাদিক হেনস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিককে প্রথমে সাধারণ শিক্ষার্থী মনে করেছিলাম। তাই ভিডিও ডিলিট করতে বলি। কিন্তু তিনি যখন সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছেন তখন আমরা আর কিছু বলিনি। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে কেউ এ কাজ করে থাকে তবে আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাদের ওপরে হামলার বিষয়ে অবগত ছিলাম না। হামলা হচ্ছে শুনলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতাম।