অর্থনীতি ও বাণিজ্য ডেস্ক:
বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদক দেশগুলোয় বৈরী আবহাওয়ায় কমছে ভুট্টা উৎপাদন। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদনে। পরিস্থিতি বিবেচনায় খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন পূর্বাভাস কমিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল (আইজিসি)। এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন কমতে পারে ৪ কোটি ৩০ লাখ টন। জানুয়ারিতে আইজিসি ২২৫ কোটি ৬০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু চলতি মাসে তা ৮০ লাখ টন কমিয়ে ২২৪ কোটি ৮০ লাখ টন ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও আর্জেন্টিনায় ব্যাপক হারে ভুট্টা উৎপাদন কমায় পূর্বাভাসে এমন পরিবর্তন আনা হয়েছে।
খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪০ কোটি ৭০ লাখ টন। জানুয়ারির মতোই বাণিজ্য পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে গত মৌসুমের চেয়ে বাণিজ্য ১ কোটি ৭০ লাখ টন কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দার উদ্বেগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিসহ নানা বিষয় বাণিজ্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এদিকে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার পূর্বাভাস ৯০ লাখ টন কমানো হয়েছে। আইজিসি বলছে, চলতি মৌসুমে ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াবে ২২৬ কোটি ৬০ লাখ টনে। জানুয়ারিতে দেয়া পূর্বাভাসে যা ছিল ২২৭ কোটি ৫০ লাখ টন। আইজিসি ১৬ ফেব্রুয়ারি গ্রেইন মার্কেট শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদনের চেয়ে ব্যবহারের পরিমাণ ১ কোটি ৮০ লাখ টন বেশি। ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ ঘাটতির মুখে থাকবে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চলতি মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ভুট্টা উৎপাদন এর আগের মৌসুমের তুলনায় ৬ কোটি ৭০ লাখ টন কমতে পারে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১৫ কোটি ৩০ লাখ টনে। এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন ৬ কোটি ৭০ লাখ টনে নামতে পারে। শস্যটির বাণিজ্য পূর্বাভাস ১৭ কোটি টনেই পরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে গত মৌসুমের তুলনায় বাণিজ্য ৯০ লাখ টন কমতে পারে।
এদিকে গমের উৎপাদন ও ব্যবহার পূর্বাভাস জানুয়ারির মতোই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৬০ লাখ টন। তবে গত মৌসুমের তুলনায় উৎপাদন দেড় কোটি টন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ মৌসুমে শস্যটির ব্যবহার দাঁড়াতে পারে ৭৮ কোটি ৯০ লাখ টন। বিশ্বজুড়ে ১৯ কোটি ৭০ লাখ টন গমের বাণিজ্য হতে পারে বলে মনে করছে আইজিসি।
আইজিসি জানুয়ারিতে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টন সয়াবিন উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছিল। চলতি মাসে তা ৭০ লাখ টন কমিয়ে ৩৭ কোটি ৮০ লাখ টন ধরা হয়েছে। তবে গত মৌসুমের চেয়ে উৎপাদন ২ কোটি ২০ লাখ টন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) বলছে, বৈরী আবহাওয়ায় সয়াবিন উৎপাদন পাঁচ বছরের সর্বনি¤েœ নামতে পারে। আর্জেন্টিনা বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন উৎপাদক দেশ। বর্তমানে ভয়াবহ খরার প্রভাবে বিপর্যস্ত দেশটির কৃষিপণ্য উৎপাদন খাত। গত অর্ধশতকে এমন খরা আর কখনো দেখা যায়নি। এতে দেশটিতে সয়াবিন উৎপাদন তলানিতে নামার আশঙ্কা রয়েছে, যা বৈশ্বিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তেলবীজটির বাণিজ্য পূর্বাভাস ১০ লাখ টন কমিয়েছে আইজিসি। বাণিজ্যের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৭০ লাখ টন। এর আগের পূর্বাভাসে যা ছিল ১৬ কোটি ৮০ লাখ টন।
অন্যদিকে চালের বৈশ্বিক উৎপাদন পূর্বাভাস ৫০ কোটি ৪০ লাখ টনে অপরিবর্তিত রেখেছে আইজিসি। যদিও গত মৌসুমের চেয়ে শস্যটির উৎপাদন ১ কোটি ২০ লাখ টন কমার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বাণিজ্য পূর্বাভাস ১০ লাখ টন বাড়িয়ে ৫ কোটি ২০ লাখ টন ধরা হয়েছে।