অর্থনীতি ও বাণিজ্য ডেস্ক:
বাংলাদেশ এতদিন ধরে কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে। প্রথমবারের মতো রাশিয়া এ দেশের সরকারি পর্যায়ে এলএনজি রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। গত সোমবার ভার্চুয়ালি শুরু হওয়া রাশিয়া-বাংলাদেশ আন্তঃসরকারি কমিশনের বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সংক্রান্ত চতুর্থ অধিবেশন চলাকালে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ইকোনমিক রিলেশনস ডিভিশনের (ইআরডি) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা রাশিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলব। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।” তিনি বলেন, বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার আগে সাধারণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে দৈনিক ৩,৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও এক্ষেত্রে বেশ ঘাটতি রয়েছে। এরমধ্যে ২,২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে, আরো ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসে এলএনজি আমদানি থেকে। বাংলাদেশ এতদিন ধরে কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে। প্রথমবারের মতো রাশিয়া এ দেশের সরকারি পর্যায়ে এলএনজি রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, “আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে এখনো কোনো লিখিত প্রস্তাব পাইনি। লিখিত প্রস্তাব পাওয়ার পর আমরা সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।” “রাশিয়া ছাড়াও, আমরা বিভিন্ন সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী এলএনজি কেনার প্রস্তাব পেয়েছি। কোন দেশ থেকে এলএনজি কিনব সে বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।
রাশিয়া বাংলাদেশে গ্যাস পাইপলাইন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি রপ্তানির পাশাপাশি ঘোড়াশাল ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ আধুনিকায়নের প্রস্তাব করেছে। পাকিস্তান আমলে নির্মিত বাংলাদেশের প্রাচীনতম বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে এখন উৎপাদন নেই বললেই চলে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মাত্র ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।
ইআরডি কর্মকর্তারা বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রকল্পের আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য টেন্ডারের মাধ্যমে না দিয়ে সরাসরি বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়া মস্কোর মুদ্রা রুবল ব্যবহার করে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেন পরিচালনার প্রস্তাবও দিয়েছে। ব্যাংকিং লেনদেন নিয়ে আলোচনা করেছে দুই দেশ। তাছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য কাজ করছে, এই অঞ্চলগুলোর জন্য বিনিয়োগ চাওয়া হচ্ছে এখন। তিনদিন মেয়াদী কমিশনের বৈঠকে দক্ষতার উন্নয়ন, কৃষি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, মৎস্য, রেলপথ, আইসিটি এবং বৃহত্তর সংযোগ, বিশেষ করে জনগণ থেকে জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়েও আলোচনা হবে।
অর্থ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা কমিশন সভায় অংশগ্রহণ করছেন। কমিশনটি সমস্ত অর্থনৈতিক সহযোগিতার তদারকি করার জন্য ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
কমিশনের প্রথম বৈঠকটি ২০১৮ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৯ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে, কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে তৃতীয় বৈঠকটি ২০২১ সালে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।