জমকালো আয়োজন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হলো ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর’ স্লোগানে এগিয়ে চলা দৈনিক বজ্রশক্তির ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরি হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, খ্যাতিমান সিনিয়র সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অধ্যাপক, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, শুভাকাঙ্খী ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এবারের থিম স্লোগান ছিল ‘যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব চাই’। এই স্লোগানের আলোকে আলোচনা সভার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘অর্থনৈতিক ও খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় আমাদের করণীয়’। প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন দৈনিক বজ্রশক্তির প্রধান উপদেষ্টা ও হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, পত্রিকা প্রকাশ কেউ লাভের জন্য করে না। ইতিহাস তাই বলে, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল অসামান্য। এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন, বঞ্চনা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের শক্তি জুগিয়েছে সে সময়ের পত্রিকাগুলো। সেই সময়ে পত্রিকাগুলোর ভূমিকা, হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার সম্মিলিত ভূমিকার চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ যখন জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িক শক্তির কালো থাবার কবলে পড়ছিল, দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি, উন্নতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চলছিল তখন আমরা সর্বপ্রথম মাঠে নেমেছি। সেসময় আমরা জনগণকে সচেতন করার জন্য পুস্তিকা, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি বিলি করেছি। কিন্তু তবুও আমরা কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, এক শ্রেণির উগ্রবাদি গোষ্ঠী আমাদের নানা ধরনের মিথ্যা অপবাদ দিতে শুরু করলো। আমরা জনি, গণমাধ্যম মানুষের মনোজগতে প্রভাব ফেলতে পারে। গণমাধ্যমের লেখায়, কথায় মানুষ সত্য জানতে পারে, ন্যায়-অন্যায়ের তফাৎ করতে পারে। তাই পত্রিকার মাধ্যমে যদি আমরা তাদের সচেতন করে তুলতে পারি তবেই আমাদের পত্রিকা প্রকাশ সার্থক হবে।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, কোন ধরনের অপশক্তির কাছে মাথা নত না করে সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্য-দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। তবেই কলমযোদ্ধার নাম স্বার্থক হবে। যার জ্ঞান, প্রজ্ঞা, শক্তি, সাহস, অর্থ মানবতার কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, তবে আমি বিশ্বাস করি সে সফলকাম হবে। এসময় তিনি সবাইকে দৈনিক বজ্রশক্তির পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার আহ্বান জানান।
দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা বলেন, দৈনিক বজ্রশক্তি সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল আছে এবং থাকবে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বলতে গিয়ে আমাদেরকে অনেক সময় ধর্মীয় উগ্রবাদি গোষ্ঠীর হামলার শিকার হতে হয়। আমাদের বিক্রয় প্রতিনিধিদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বাংলাদেশে এমন কোনো পত্রিকা আছে বলে আমার জানা নেই, যে পত্রিকা বিক্রি করতে গেলে মানুষের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তবুও সত্য প্রকাশে পিছপা হইনি, হবো না। এসময় তিনি বজ্রশক্তির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সবাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে এর সাথে থাকার আহ্বান জানান।
সাংবাদিক নেতা আবু জাফর সুর্য বলেন, গণমাধ্যম ও সুশাসন হাত ধরাধরি করে চলে। গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে চলতে না দিলে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে না। তাই গণমাধ্যমের উপর সরকারসহ সবার আস্থা রাখতে হবে। ১০টি বছর একটি পত্রিকা প্রকাশ করা ছোট কোন ব্যাপার নয়, তাই এই সময়ে যারা পত্রিকাটি সচল রেখেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আগামী দিনে শুধু ১০ বছর নয়, এই পত্রিকার একশ’ বছর পূর্তি হবে সেই আশা রাখি।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জাকারিয়া কাজল, দৈনিক দেশেরপত্রের সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, দৈনিক বজ্রশক্তির সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, প্রচার সম্পাদক শফিকুল আলম উখবাহ, অগ্রণী বার্তার সম্পাদক আলী আশরাফ, সহযোগী সম্পাদক শাকিলা আলম, বিশেষ প্রতিনিধি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, বাংলাদেশের আলোর রিপোর্টার নাসিমা আক্তার সোমা প্রমুখ। উপস্থিত বক্তারা ইউক্রেনে রাশিয়া যুদ্ধের অবসান চান। শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সেইকাজে দৈনিক বজ্রশক্তি আরো এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন। পরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।