পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরতে পারে সে লক্ষে অনলাইনে ঈদযাত্রার সব টিকিট বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পূর্বে স্টেশন থেকে সরাসরি টিকিট ক্রয় করতে হতো। সেসময় টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ব্য চোখে পড়তো। তবে সেই সুযোগ না থাকলেও অনলাইনে বিক্রির পদ্ধতিতেx অনেকে ভুয়া টিকিট বিক্রিতে সক্রিয়।
এই টিকিট বিক্রি চক্রের প্রধান টার্গেট থাকে অনলাইন থেকে ক্রেতা সংগ্রহ করা। পরে তাদের টিকিট প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়৷ যাত্রী যেন চক্রের সদস্যের ওপর নির্ভর এবং বিশ্বাস রাখতে পারে সেজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নেয় তারা৷ পরে অনলাইনে কাটা রেলওয়ের টিকিটের মতো করে একটি টিকিট বানিয়ে দেওয়া হয়। দেখে বোঝার উপায় নেই যে টিকিটি ভুয়া।
গত ৫ জুন প্রতারক চক্রের এক সদস্যের সঙ্গে টিকিট কিনতে কথা হয় জান্নাত শ্রাবনী নামের এক নারীর৷ ভুয়া টিকিট বিক্রিতে জড়িত ঐ প্রতারক চক্রের সদস্যের ফেসবুক আইডিতে থাকা নাম মো.মান্নাফ কবির৷
প্রতারক চক্রের এই সদস্য শ্রাবনীর কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি চান। পরে টিকিটের ফরম্যাটে যাত্রীর নামের স্থানে জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা নাম বসিয়ে দেন৷ যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী ভ্রমণের তারিখসহ যাত্রীদের নাম ও অন্যন্য বিষয় পূরণ করা হয়৷ পরে একটি পিডিএফ ফাইল এই তরুণীর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে বিকাশে টাকা চাওয়া হয়৷ বলা হয় এগুলো রিজার্ভ টিকিট৷ পরে এই তরুণীর সন্দেহ হলে তিনি খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন যে এটি ভুয়া টিকিট৷
টিকিটের ছবি পাঠানোর পর ঐ তরুণীকে হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকটি ভয়েস মেসেজ পাঠান মান্নাফ কবির৷ ভয়েস মেসেজে তিনি বলেন, এগুলো রিজার্ভেশনের সিট। এটা অনলাইনে আপলোড হয় না, এজন্য অনলাইনে ভেরিফাইডের কোনো সুযোগ নেই। টিকিট নিয়ে কোন সমস্যা নাই৷ টিকিট হানড্রেট পার্সেন্ট ওকে আছে৷ একবার যাইয়া দেখেন, আমি কেমন লোক৷ আশা করি সম্পর্ক থাকবে৷
জানতে চাইলে জান্নাত শ্রাবনী জাগো নিউজকে বলেন, আমার টিকিট প্রয়োজন ছিল৷ একটি অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে ঐ ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ হয়৷ আমার এনআইডি কার্ডের ছবি নিয়ে আমাকে টিকিট দেয়৷ পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এই টিকিট ভুয়া৷ তখন আর টিকিট নেইনি৷
জান্নাত শ্রাবনীর কাছ থেকে টিকিট সংগ্রহ করে সেটি রেলওয়ের অনলাইন টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কমের সিইও স্বন্দীপ দেবনাথের কাছে পাঠায় জাগো নিউজের এই প্রতিবেদক৷ পর তিনি টিকিটি ভুয়া বলে জানান৷ এবিষয়ে তিনি বলেন, অনেক প্রতারক চক্র ঈদকে কেন্দ্র করে এই ধরনের ভুয়া টিকিট বিক্রির চেষ্টা করে৷ যাত্রীদের বলতে চাই কেউ প্রতারিত হবেন না৷ বাইরের কারও থেকে কোনো টিকিট কিনবেন না৷ যাত্রীকে নিজেরই অনলাইন থেকে টিকিট ক্রয় করতে হবে৷
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বারবার বলছি অনলাইন ছাড়া অন্য কোথাও টিকিট বিক্রি হচ্ছে না৷ যাত্রীদের বারবার বলা হচ্ছে নিজের টিকিট নিজে কাটুন৷ বাইরের কারও থেকে টিকিট নিতে চাইলে প্রতারিত হবেই৷ এমন প্রতারক চক্রের সন্ধান পেলে আমরা পুলিশ ও সাইবার ক্রাইম বিভাগকে দিয়ে থাকি৷ তারা এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে৷
র্যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.কামরুল হাসান বলেন, র্যাব এবং গোয়েন্দা টিম টিকিট কালোবাজারি চক্র নিয়ে কাজ করছে৷ আমরা অনেকগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করছি৷ যদি কেউ প্রতারণার শিকার হয়ে থাকে র্যাবকে জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি৷ ভুয়া টিকিট বিক্রিতে কেউ জড়িত থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।