ওবায়দুল হক বাদল:
‘শ্রেষ্ঠ জাতি হবার মূল শর্ত- ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য’ এই স্লোগানে রাজধানীতে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে ‘দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উগ্রবাদ মোকাবেলায় করণীয়’ শীর্ষক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মুক্তিযুদ্ধ মিলনায়তনে এ সম্মেলন আয়োজন করে ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদ।
হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের শীর্ষ নেতা এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের সুযোগ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যারা সাম্রাজ্য বিস্তারের নেশায় মত্ত, তারা বাংলাদেশের মানচিত্র খাবলে খাওয়ার জন্য শকুনের মত থাবা বিস্তারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে বলেন। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য তিনি দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে একটি মহান আদর্শের ভিত্তিতে ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সমাজ, অন্যায়-অশান্তি, মিথ্যা, প্রতারণা, মাদক ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ। সমাজের এই অধঃপতনের মূল কারণ আল্লাহকে ইলাহ বা হুকুমদাতা হিসেবে না মানা। সমাজের এই দূরাবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে মানবজাতিকে আবার আল্লাহকে ইলাহ এর আসনে বসাতে হবে। এককভাবে এই কাজ কখনোই সম্ভব নয়।’ তাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই কাজে অংশগ্রহণের জন্য সকলকে আহ্বান জানান এই নেতা।
সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, প্রতি ৫ বছর পর পর সাধারণ নির্বাচন নিয়ে একটা মহা হট্টোগোল বাঁধে। নির্বাচনের পর প্রতিটা দিন চলে এ নিয়ে অস্থিতিশীলতা। একটা দিনও শান্তিতে থাকা যায় না। এটাই আমাদের দিয়ে গেছে ব্রিটিশরা। আর আমরা এটাকে তসলিম করে নিয়েছি, সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছি। এখন এর থেকে আমরা বেরিয়েও আসতে পারছি না। ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ অবস্থায় চলে গেছি আমরা। আমাদের এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে যে, আমাদের আর ফেরার কোনো উপায় নেই।
তিনি বলেন, এই সঙ্কট এখন শুধু বাড়বে, কমবে না। অর্থনৈতিক সংকট বাড়বে, ট্যাক্স বাড়বে, অর্থপাচার বাড়বে। দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ বাড়বে। সুদ এখন হয়ে গেছে সম্মানজনক জীবিকা আর ঘুষ হয়ে গেছে বৈধ ইনকাম। যিনি ৫০ হাজার টাকা ঘুষ খেতেন তিনি এখন খাবেন ৫ লাখ টাকা। রাজনৈতিক সংকট আরো ভয়াবহ হবে। পারিবারিক যন্ত্রণা, বিচ্ছেদ বাড়বে। সামাজিক সংকট; মারামারি, হানাহানি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই অবস্থার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অশান্তির কারণ মানুষ তার সামগ্রিক জীবনে আল্লার হুকুম বাদ দিয়েছে। তওবা করে জাতীয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক অর্থাৎ সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর জীবন বিধান মেনে নিলে এই অশান্তি থেকে বাঁচা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী তাদের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতিকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে কামড়াকামড়ির এই রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। কাঁদা ছোঁড়াছুড়ির এই রাজনীতি বন্ধ না হলে জাতির ধ্বংস অনিবার্য। বিশ্বজুড়ে চলমান এই ভোগবাদী শাসন ব্যবস্থা, বৈষম্যমূলক অর্থ ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করে বিশ্বময় চলমান যুদ্ধাবস্থা ও এর কারণে সৃষ্ট সঙ্কটময় পরিস্থিতির জন্য জাতিকে সতর্ক সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘লেবাসধারী এক শ্রেণির ভণ্ড আলেমদের স্বার্থবাদী উগ্র কর্মকাণ্ডের কারণে ইসলামের গায়ে আজ কালিমা লিপ্ত হয়েছে। আর এদের মুখোশ উন্মোচন করায় তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলে মিথ্যাচার, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। তিনি উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে কোনো লাভ হবে না। হেযবুত তওহীদ সত্য নিয়ে এসেছে। মিথ্যার ধ্বংস এবার অনিবার্য।’ এসময় ধর্মব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অপপ্রচারের কড়া জাবাব দেন হেযবুত তওহীদের এই নেতা।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ উপকমিটির সদস্য শাহনেওয়াজ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, কেন্দ্রীয় নারী সম্পাদক রূফায়দাহ পন্নী, ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদদের সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির, কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, যুগ্ম নারী সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রব্বানী, ঢাকা জেলা সভাপতি মো. ইউনুস মিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি তসলিম উদ্দিন, মতিঝিল জোনের সভাপতি মেসবাউল ইসলম, রমনা জোনের সভাপতি আরিফ হোসেন সজল, লালবাগ জোনের সভাপতি হাসিবুর রহমান শাওন, যাত্রাবাড়ী জোনের সভাপতি ওলী উল্লাহ খান প্রমুখ। সবশেষে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। হেযবুত তওহীদের ইমাম উপস্থিত শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।