ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের ঘরে বসিয়ে রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তাওহীদের কেন্দ্রীয় নারী সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী। তিনি বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই যুগ যুগ ধরে নারীর অবদান অনেক। ঘরে, কৃষিতে, অফিস আদালতে, চিকিৎসায়, কলকারখানায়, রাষ্ট্র পরিচালনায়, সর্বত্র নারীর অবদান রয়েছে। কিন্তু সাধারণত ধর্মীয় মূল্যায়নে নারীর অবদানকে সামনে নিয়ে আসা হয় না। নারীর অবদানকে উপেক্ষা করা হয়। শত বছর ধরে এটাই আমরা দেখেছি। অথচ রসুল (সা.) এর জীবনীতে আমরা দেখি, নারী-পুরুষ উভয়েই নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করেছেন, কেউ নারী বলে তাকে দমিয়ে রাখা হয় নি।
হেযবুত তওহীদের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আয়োজনে বুধবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর চেম্বার ভবনে “নারী জাগরণের মূলমন্ত্র ইসলামের সঠিক আদর্শ” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত হেযবুত তাওহীদের নারী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রুফায়দাহ পন্নী আরও বলেন, ইসলামের নারীদের বিশেষ করে বিবি খাদিজার (রা.) অবদান, বিবি আয়েশার (রা.) সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘটনাগুলো তুলে ধরেন। সুদীর্ঘকাল ধরে নারীদের অগ্রযাত্রায় বাধার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ধর্মের জিকির তুলে নারীদের ঘরে বসিয়ে রাখা যাবে না। ইসলামের নারীদের বিশেষ করে বিবি খাদিজার (রা.) অবদান, বিবি আয়েশার (রা.) সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘটনাগুলো তুলে ধরেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই নারী। পুরুষের তুলনায় নারীরা ধর্মীয় অঙ্গনে পিছিয়ে আছে। তাদের এই পিছিয়ে পড়া একদিনে হয় নি, শত শত বছর ধরে তাদের উপর ধর্মের নামে হাজারো বিধিনিষেধ আরোপ করে এভাবে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। আজ নারীরা যখন সব বাধাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চাইছে, ধর্মব্যবসায়ীরা চেষ্টা করছে তাদের চারপাশে ফতোয়ার প্রাচীর তুলে তাদের গতিকে রুদ্ধ করতে। এর পরিণামে নারীরা ধীরে ধীরে ধর্মের প্রতি আকর্ষণ ও শ্রদ্ধা হারাচ্ছে। আল্লাহ-রসুল তথা ধর্মকেই নিজেদের প্রগতির শত্রু “মনে করছে এবং পশ্চিমা অপ-সংস্কৃতিকেই মুক্তি ও উদারতার পথ মনে করে অশ্লীলতা ও অসভ্যতার দিকে পা বাড়াচ্ছে। আমরা বলছি, যে ফতোয়াগুলো আরোপ করে নারীর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ইসলাম সমর্থন করে না, সেগুলো ধর্মব্যবসায়ীদের মনগড়া ও অজ্ঞানতাসুলভ ফতোয়ামাত্র। দ্বিতীয়ত, পাশ্চাত্য সভ্যতা নারীর সামনে যে মুক্তির পথ প্রদর্শন করছে সেটা আসলে তাকে আরো অন্ধকারে নিয়ে যাবে, তাকে ভোগ্যপণ্যে পরিণত করবে। সুতরাং এ দুটি পথই ভুল। আমরা ইতিহাস থেকে প্রমাণ দিয়েছি যে, আল্লাহর রসুলের সময় নারীরা সকল সামাজিক, রাজনীতিক ও জাতীয় কর্মকাণ্ডে অবাধে অংশগ্রহণ করতেন। তারা মসজিদে পুরুষদের সঙ্গেই সালাহ (নামাজ) করতেন, যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন- সেখানে রসদ সরবরাহ, আহতদের সেবামূলক কাজগুলো যেমন করেছেন তেমনি অস্ত্র হাতে সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। মদীনার হাসপাতালের অধ্যক্ষ ছিলেন নারী, বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও ছিলেন একজন নারী। অথচ ধর্মব্যবসায়ীরা ফতোয়া দিয়ে রেখেছেন যে নারী নেতৃত্ব হারাম। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, হেযবুত তাওহীদের নারীদের আর মিথ্যা ফতোয়া কিংবা গুজব ছড়িয়ে আবদ্ধ রাখা যাবেনা। তাদের পথ আর কেউ গতি রোধ করতে পারবেনা। ধর্ম প্রচারে অধিকার আদায়ে নারীদের সোচ্চার হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “অধিকার দাও-অধিকার দাও বললে হবে না। কেউ অধিকার ছাড়তে চায় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়।”
চুয়াডাঙ্গা জেলা হেযবুত তাওহীদের নারী সম্পাদক ডা. মার্জিয়া পারভীনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হেযবুত তাওহীদের খুলনা বিভাগ-২ এর সভাপতি জসেব উদ্দিন, খুলনা বিভাগ-২ এর নারী সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস মিম, চুয়াডাঙ্গা জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি মো. জুয়েল রানা, মেহেরপুর জেলা হেযবুত তাওহীদের সভাপতি শাহারুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা হেযবুত তাওহীদের সভাপতি আক্কাচ আলী, এশিয়ান টিভি ও প্রতিদিনের সংবাদের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি আজাদুল ইসলাম আজাদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জেলার দূর দূরান্ত থেকে আগত সহস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।