অর্থনীতি ও বাণিজ্য ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে শুরু করেছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম। এতে আগামী মাসগুলোয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় জ্বালানিটির চাহিদা ফের শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এরই মধ্যে অনেক দেশ দরপত্রের মাধ্যমে বাজারে ফিরতে শুরু করেছে। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস।
এলএনজি ক্রেতারা, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো মূল্যসংবেদনশীল ক্রেতারা গত বছরের বেশির ভাগ সময়জুড়ে এলএনজি আমদানি থেকে বিরত ছিল। এর মূল কারণ আকাশচুম্বী দাম। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরই এলএনজিসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম রেকর্ড মাত্রায় বাড়তে শুরু করে। এ সময় এশিয়ার দেশগুলো এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিলেও ইউরোপ বেশি দামেই বিপুল পরিমাণে এলএনজি আমদানি করেছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস জানায়, গত বছর এলএনজির প্লাটস জেকেএম (জাপান কোরিয়া মার্কার) বাজার আদর্শ দাম ছিল গড়ে এমএমবিটিইউপ্রতি ৩৩ ডলার ৯৮ সেন্ট। ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্চে সরবরাহের জন্য দাম কমে এমএমবিটিইউপ্রতি ১৫ ডলার ২১ সেন্টে নেমেছে। ২ ফেব্রুয়ারির তুলনায় দাম কমেছে ১৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। প্লাটস জেকেএম হলো এলএনজির বাজার আদর্শ দাম। স্পট মার্কেটে এলএনজি কার্গো বেচাকেনার ক্ষেত্রে এ বাজার আদর্শ দাম অনুসরণ করা হয়।
উত্তর-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় এবার শীতের প্রকোপ কম থাকায় এলএনজির চাহিদা কমেছে। তাছাড়া জ্বালানিটির মজুদও ছিল পর্যাপ্ত। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রি পোর্ট এলএনজির কার্যক্রম ফের চালু হতে যাচ্ছে, যা বৈশ্বিক সরবরাহ বৃদ্ধির বার্তা দিচ্ছে। মূলত এসব কারণেই এলএনজির বাজারদর নিম্নমুখী ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে।
শিল্পসংশ্লিষ্টরা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালকে জানান, গত বছর এলএনজির ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে অনেক দেশে জ্বালানিটির ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। এর পরও অনেক দেশে জ্বালানিটির চাহিদা বলিষ্ঠ ছিল। কারণ এসব দেশের বেশির ভাগই জ্বালানি চাহিদা পূরণে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গ্যাস ও এলএনজি টিমের প্রধান বিশ্লেষক জোহান উতামা বলেন, ‘আমি মনে করছি, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় শক্তিশালীভাবেই গ্যাসের চাহিদা ফিরছে। এ বাজারের ক্রেতারা কার্যত স্পট মার্কেটে ফিরতে শুরু করেছেন।’
গত বছর ভারতে এলএনজি আমদানি এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৯ দশমিক ১২ শতাংশ কমে যায়। আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৯২৯ কোটি ঘনফুটে। দেশটির পেট্রোলিয়াম পরিকল্পনা ও বিশ্লেষণ সেল এ তথ্য জানিয়েছে।
মূলত যুদ্ধের পর থেকেই ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে ক্ষীণ হয়ে আসে স্পট মার্কেট থেকে আমদানি। তবে শিল্পসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ১০-১৫ ডলারের মধ্যে অবস্থান করলে ভারতের গ্যাসভিত্তিক অর্থনীতি হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
একটি সূত্র জানায়, ভারতের ক্রেতারা বর্তমানে ১২-১৩ ডলারে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি কিনতে আগ্রহী। ব্যবসায়ীরা দরপতনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। আগামী সপ্তাহগুলোয় বাজারে কেনাবেচার পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি বছর বাংলাদেশে এলএনজি আমদানি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমদানির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৬২০ কোটি ঘনফুটে। গত বছর আমদানি করা হয়েছিল ৫৮০ কোটি ঘনফুট। চলতি মাসে টোটালএনার্জিসের কাছ থেকে এক কার্গো (৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ) এলএনজি কিনেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে প্রতি এমএমবিটিইউর দাম পড়েছে ১৯ ডলার ৭৮ সেন্ট।
এর আগে বাংলাদেশ গত বছরের জুনে সর্বশেষ এলএনজি আমদানি করেছিল। গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করা হয় ২৪ ডলার ৭৫ সেন্টে।
এদিকে আগামী ১১ মার্চে সরবরাহের জন্য পেট্রোবাংলা আরো একটি দরপত্র আহ্বান করে, যার সময়সীমা ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ১০-১২ কার্গোরও বেশি এলএনজি কিনতে পারে। ফলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আরো কিছু দরপত্র আসবে। প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ১০ ডলারের নিচে নামলে অতিরিক্ত আরো দরপত্র দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে সরবরাহ ঝুঁকি এড়াতে স্পট মার্কেটের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেও এলএনজি আমদানির কথা ভাবছেন ক্রেতারা।