‘সংস্কৃতি চর্চার হাত ধরে আসুক নবজাগরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নোয়াখালী জেলা শাখা। রবিবার বিকালে নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে এই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে দেশীয় সংস্কৃতিকে রক্ষা করা ও সাংস্কৃতিক জগতে একটি জাগরণ সৃষ্টি করতে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় দীর্ঘদিন যাবৎ সারাদেশে কাজ করে যাচ্ছে মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। তারই ধারাবাহিকতায় নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী নোয়াখালী।
মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নোয়াখালী জেলা সভাপতি গোলাম কবির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কাজী মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ। প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রিয়াদুল হাসান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিথুন ভট্ট, নারী অধিকার জোটের সভাপতি বেগম লায়লা পারভীন, আপন শিশু বিকাশ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান শিশু মনোবিজ্ঞানী সুলতানা রাজিয়া, নোয়াখালী পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিনা চৌধুরী, নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবি ও সাংবাদিক জামাল হোসেন বিশাদ, লক্ষ্মী নারায়ণপুর থিয়েটার এর মহাসচিব ও নাট্য নির্দেশক ফরিদ উদ্দিন মনু, মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী তোফায়েল হোসেন মোহনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ডাক্তার তুহিন মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক রিয়াদুল হাসান বলেন, মুুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের দেশে জাগরণমূলক গানের আকাল শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে নর-নারীর প্রেম নিয়ে হাজারো গান, কবিতা, নাটক, সিনেমা হয়। কিন্তু দুর্নীতিতে কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংস্কৃতি কর্মীদের তেমন কোনো রচনা আমাদের চোখে পড়ে না।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজে দুই বছরের শিশু ধর্ষিত হয়, মাদ্রাসায় শিশুরা বলাৎকারের শিকার হয়, মাদকের আগ্রাসনে যুগ সমাজ ধ্বংসের পথে, কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম দিন দিন বাড়ছে, তরুণরা ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্ত হয়ে স্বকীয়তা হারাচ্ছে, পশ্চিমা অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে অশ্লীলতা, বেহায়াপনার দিকে ধাবিত হচ্ছে, অপরাজনীতিকদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে তারুণ্য শক্তির অপচয় হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে সংস্কৃতিপ্রেমীদের সোচ্চার হতে দেখি না আমরা। অথচ এসব অপ-সংস্কৃতি রোধে, তরুণ সমাজকে অন্ধকার থেকে টেনে তুলে আলোর পথে আনতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারত এই সংস্কৃতি জগৎ। একটি জাগরণ সৃষ্টি করে সমাজের জন্য, জাতির জন্য ভূমিকা রাখতে উৎসাহ, উদ্দীপনা জোগাতে পারত।
তিনি আরো বলেন, মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠ এই কাজটিই হাতে নিয়েছে। মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী গান, কবিতা, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে ঐক্যের শিক্ষা দিচ্ছে। জাতির জন্য, দেশের জন্য কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করছে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে দেশীয় সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে ইউরোপের মতো একটি নবজাগরণ, একটি বিপ্লব সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
সবশেষে তিনি বলেন, একশ্রেণির ধর্মব্যবসায়ীরা ফতোয়া দেয় গান হারাম। আমরা বলছি গান হারাম নয়। আল্লাহ হারাম-হালাল বিষয়টি পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। কোরআনে কোথাও গান-বাদ্যযন্ত্রকে, শিল্পচর্চাকে হারাম করা হয়নি। আল্লাহ হারাম করেছেন অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, আল্লার নাফরমানিকে। সেটা প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য। আমরা বলছি, যে গান মানবতার কথা বলে, মানুষের মুক্তির কথা বলে সে গান হারাম নয় বরং তা এবাদত।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিগণ মুখ্য আলোচকের বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করেন। মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর এমন উদ্যোগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নিয়মিত শিল্পী টিএইচ মোহান, নাজমুল আলম শান্তু, শাহীন আলম, তহমিনা আক্তার চাঁদ, তাহী প্রমুখ। এছাড়াও নাটক, আবৃত্তি, একক অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করে নোয়াখালী চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের একঝাঁক ক্ষুদে শিল্পী।