![পাঁচবিবির এক মেধাবী ছাত্রের দায়িত্ব নিল পুলিশ](/storage/news/joypurht-map.jpg)
পাঁচবিবি প্রতিনিধি, জয়পুরহাট:
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা এলাকার এক ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি (ভোকেশনাল শাখা) থেকে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে কলেজে ভর্তি হতে না পারায় রাতের আঁধারে সড়কে দাঁড়িয়ে ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিলো ওই ছাত্র।
এদিকে প্রতিদিনের মতো উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাতের বেলায় ওই পথে টহল দিচ্ছিলেন পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল হক। দূর থেকে গাড়ীর আলোয় দেখতে পান কেউ একজন ট্রাকের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। তখন ওসি মহোদয়ম দ্রুত গাড়ীটি ওই ছাত্রের সামনে দাঁড় করায়। ওসি গাড়ী থেকে নেমে ওই ছাত্রকে রাস্তার পাশে নিয়ে তার প্রাণ বাঁচান!
ওই ছাত্রের মা-বাবা বলেন, কিছু দিন আগে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় এ-প্লাস পেয়ে পাশ করেছে।
ছেলের পাশের খবর শুনে বুকটা আনন্দে ভরে গেলেও ছেলেকে কলেজে ভর্তি করে দিতে না পারার দুঃখে আমরা হতাশায় দিন পার করছিলাম। সেদিন ছেলে এসে বললো মা আমি কলেজে ভর্তি হব টাকা দিবে না? তখন আমি একটু রাগ করেই বলেছিলাম তোর পড়শোনা করা লাগবিনা, তুই কাজ কাম করেক। তোকে আর পড়াশোনা করা লাগবেনা। এই কথা শুনে ছেলেও মন খারাপ করে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যায়। রাতের বেলায় কাউকে না জানিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে ট্রাকের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিলো। ওই রাস্তা দিয়ে পাঁচবিবি থানার ওসি যাওয়ার সময় আমার ছেলের প্রাণ বাঁচায় এবং পরের দিন সকালে আমাদের থানায় দেখা করতে বলে। সকালে থানায় গেলে আমাদের নাস্তা খাওয়ানোর পর বলেন আপনাদের ছেলের কলেজের ভর্তি খরচের দায়িত্ব আমি নিলাম। এই কথা শুনে চোখ দিয়ে আমাদের আনন্দের জল চলে আসে। ভগবান মানবিক এই ওসির ভালো করুন। ছেলে এখন কলেজে যাচ্ছে।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করছেন পুলিশ। সেদিন রাতে পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী বাগজানা এলাকায় টহলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই গাড়ীর আলোয় দেখতে পাই কেউ একজন ট্রাকের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। তখন চালককে দ্রুত গাড়ী চালাতে বলি আর অবশেষে ছেলেটার সামনে গিয়ে গাড়ী দাঁড় করলে ছেলেটি ভয় পায়।
তিনি আরও বলেন, পরে ছেলেটির কাছ থেকে আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইলে সে বলে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছে কিন্তু পরিবারের অভাবের কারনে সে কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। এ কারণে হতাশায় নিজের জীবন শেষ করে দিতে চায়। রাতের বেলায় ছেলেটাকে নিরাপদে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে সকালে মা-বাবাকে নিয়ে থানায় আসতে বলি।
এদিকে বিষয়টি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম স্যারকে জানালে তিনি ছেলেটার কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই ছেলেকে কলেজে ভর্তি করে দিয়েছি। এখন থেকে ওর দায়িত্ব আমরা পাঁচবিবি থানা পুলিশ নিয়েছি।