ডেস্ক রিপোর্ট:
কোন পণ্য কিনে ইনভয়েস নেওয়ার অভ্যাস নেই ক্রেতাদের, ভ্যাট ফাঁকি প্রতিরোধে ক্রেতাদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে ভ্যাট আদায়ের ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ২০১২ সালের ভ্যাট আইন কার্যকর করলাম ২০১৯ সালে, এত দীর্ঘ সময় লাগল কেন তার পেছনেও একটা কারণ আছে। নতুন ভ্যাট আইনটি সম্পূর্ণ অটোমেশন বেজড। কিন্তু আমাদের বিজনেস, ইকনোমিক সম্পূর্ণ অটোমেশন বেজড হয়ে উঠেনি। সে জন্য ২০১২ সালে আইনটি কার্যকর করতে ২০১৯ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আধুনিক ভ্যাট আইনের মূল বিষয় হল তথ্য। সে তথ্যের মাধ্যমে ভ্যাট আইনের প্রয়োগ। অটোমেশন ছাড়া সেটা সম্ভব না।
তিনি বলেন, আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সংগ্রহে অটোমেশন শুরু করতে পেরেছি। কিন্তু ব্যবসায়ী পর্যায়ে বা খুচরায় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সফল ভাবে ভ্যাট সংগ্রহ সম্ভব না। ভ্যাট সংগ্রহের সিস্টেমটা হলো কাঁচামাল থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায় পর্যন্ত প্রক্রিয়াটা ধারাবাহিকভাবে চলবে। সেই যায়গায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। ইসিআর মেশিন, পজ ইত্যাদি। কিন্তু কোনটাই ইফেক্টিভ সাকসেসফুল রেজাল্ট পাচ্ছিলাম না।
রহমাতুল মুনিম বলেন, অর্থমন্ত্রীর পরামর্শে আমরা ইএফডির পাইলট প্রকল্প শুরু করি। ২০২০ সালের আগস্টে পাইলট প্রোগ্রামে গিয়ে আমরা দেখতে পেলাম ইএফডিএমএস একটা কার্যকর সিস্টেম কিন্তু এফিশিয়েন্ট নয়। কেননা লাখ লাখ খুচরা ব্যবসায়ী সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। এই ব্যবসায়ীদের কে এই যন্ত্র সরবরাহ করা, রক্ষণাবেক্ষণ করা জন্য এনবিআরের ম্যানপাওয়ার- টেকনিক্যাল নলেজ যথেষ্ট নয়। সেজন্য আমরা আউটসোর্সিং করার চিন্তা করি। যারা মেশিনগুলো দোকানে দোকানে বসাবে। মেশিনটা দেখভাল করবে, রক্ষাণাবেক্ষণ করবে, সমস্যা সমাধান করবে, দোকানে দোকানে বসাবে ও দোকানদারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। একটা দোকানে যে কয়টা ইনভয়েস ইস্যু হলো সেই তথ্যগুলো আমাদের লাগবে। ভ্যাট ও এসডির তথ্য আমরা পেয়ে যাব। আমরা মাস শেষে রাজস্ব সংগ্রহ করব।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়কে পাইলট প্রকল্প উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনটা এলাকা আমরা সিলেক্ট করেছি ঢাকা ও চট্টগ্রামের। পাইলট হলেও ভ্যাটের বড় একটা অংশ কাভার হবে। এটা সাকসেসফুল হলে আমরা অন্য ভেন্ডর নেব। এর ফলে সারাদেশে ইএফডির মাধ্যমে সারা দেশে থেকে ভ্যাট সংগ্রহ করতে পারব।
তিনি বলেন, ক্রেতাদের ইনভয়েস নিতে আগ্রহী হতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে। কোন জিনিস কিনে ইনভয়েস নেওয়ার অভ্যাস নেই ক্রেতাদের। ক্রেতা যদি ইনভয়েস না নেয় তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইএফডিতে ইনভয়েস জেনারেট হচ্ছে কী না সেটা পাহারাদারি খুব ডিফিকাল্ট। পাহারাদারি আমাদের পক্ষে সম্ভব না আমরা চাই ক্রেতার সচেতনতা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ভ্যাট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার জন্য সরকার কাজ করছে। ভ্যাট প্রদানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষ দেশের উন্নয়নে অংশ নিতে পারে। সেই জায়গায় আমরা স্বচ্ছতা আনতে চাই। আমরা এনবিআর এর ব্যবস্থাপনায় এবং জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের সহায়তায় এই উদ্যোগকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থ সচিব মিজ ফাতিমা ইয়াসমিন ও এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য এবং মূল উপস্থাপনা করেন এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. মইনুল খান।