বেশ লম্বা এক আন্দোলন এবং নাটকীয়তার পর বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে এলেন দেশের ইতিহাসে একমাত্র নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব ড. মোহাম্মদ ইউনূস। সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার পরেই বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব চলে যায় এই অর্থনীতিবিদের হাতে। যদিও এর আগপর্যন্ত ড. ইউনূস ব্যস্ত ছিলেন প্যারিসে অনুষ্ঠিত গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত অলিম্পিকে। ২০২৪ সালের এই বিশাল ক্রীড়াযজ্ঞের সঙ্গে মিশে আছে বাংলাদেশের এই অর্থনীতিবিদের নাম।
অবশ্য ২০১৭ সাল থেকেই অর্থনীতির এই বিশেষজ্ঞ প্যারিস অলিম্পিকের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অলিম্পিকের বিডিং প্রক্রিয়ার সময়েই ড. ইউনূসের শরণাপন্ন হয়েছিল প্যারিস। নিজেদের দেশে অলিম্পিকের জন্য তারই অর্থনৈতিক মডেলের উপস্থাপন করেছিল ফ্রান্স। ড. ইউনূসের বিখ্যাত তিন শূন্য মডেলের ভিত্তিতে সামাজিক ব্যবসা কর্মসূচিকে একীভূত করা হয় প্যারিস অলিম্পিকের পরিকল্পনায়।
এবারের অলিম্পিকের গেমস ভিলেজের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে প্যারিস শহরের অন্যতম অনুন্নত অঞ্চল সেইন্ট ডেনিসে। এই অঞ্চলে গেমস ভিলেজ করার পরিকল্পনাতে ছিল ড. ইউনূসের অবদান। সামাজিক ব্যবসা কর্মসূচিকে অলিম্পিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতেই এমন উদ্যোগ। এমন অঞ্চলে আবাসনের ব্যবস্থা করার কারণে সেখানে গড়ে উঠেছে আরও কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ড. ইউনূসের তিন শূন্য মডেলের ‘শূন্য বেকারত্ব’ এখান থেকেই বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেছে প্যারিস।
২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের গেমস ভিলেজে মোট ১৪ হাজার ৫০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট ৪০ ব্লকে করা হয়েছে এই ব্যবস্থা। কার্বন দূষণ কমাতে সেখানে রাখা হয়নি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের বাড়তি ব্যবস্থা। ইন্টেরিয়র ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যাতে বাইরের তাপমাত্রা থেকে ভেতরের তাপমাত্রা অন্তত ছয় ডিগ্রি কম থাকে। প্রতি স্কোয়ার মিটারে ৩০ শতাংশ কম দূষণ হয়। কার্বন মেশানো কংক্রিটের বদলে কাঠ ব্যবহারের প্রবণতা দেখা গিয়েছে। মেঝেতেও কম কার্বনের কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছে।
ড. ইউনূস তার ‘তিন শূন্য’ মডেলে রেখেছেন ‘শূন্য কার্বন নিঃসরণ’। সেই উদ্যোগেই বর্জন করা হয়েছে কার্বন মেশানো কংক্রিট। সঙ্গে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা। অন্তত ৪০ শতাংশ সবুজ রাখার চেষ্টায় লাগানো হয়েছে ৯ হাজার গাছ। আর অলিম্পিক শেষে এই গেমস ভিলেজ ২ হাজার ৮০০টি অ্যাপার্টমেন্টে পরিণত করা হবে। যেখানে সেইন্ট ডেনিসের অভিবাসীদের নিলামের মাধ্যমে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
ড. ইউনূসের ‘তিন শূন্য’ হলো শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ। ২০২৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজনে এ তিন বিষয়কে মূল ভূমিকায় রেখে সব পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া এই অলিম্পিক থেকেই প্যারিসের অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা সেইন্ট ডেনিসের ব্যবসা ও অর্থ ব্যবস্থাপনাকেও শক্তিশালী করেছেন ড. ইউনূস।
প্যারিস অলিম্পিকের মোট উপকরণ সংগ্রহের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ- প্রায় ২০ শতাংশ সংগ্রহে ৪০০টি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করা হয়েছে। সেখান থেকেই প্যারিসের অর্থনীতিকেও শক্ত করার কাজে হাত দেয়া হয়েছে। শুধু এখানেই শেষ না। ২০২৬ সালে মিলানে অনুষ্ঠিতব্য শীতকালীন অলিম্পিকেও একই মডেল অণুসরণ করার কথা বলা হয়েছিল।
সেই লক্ষ্য ইতালির মিলান শহরের পক্ষ থেকেও আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলাদেশের এই নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদকে। তবে এর আগেই বাংলাদেশের শাসনভার চলে যায় ড. ইউনূসের হাতে। প্যারিস অলিম্পিকের পর্দা নামছে ১১ আগস্ট। আর সেই সঙ্গে পর্দা নামছে ড. ইউনূসের আরও এক উল্লেখযোগ্য প্রজেক্টের। যা থেমে গেলেও সুফল ঠিকই বহুদিনের জন্য পাবে প্যারিস।