পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং একাধিক অভিযোগ সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মফিজুল হকের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার বিদ্যালয়ের ২১ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয়ের সভাপতি বরাবর তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
১১ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর দেওয়া অভিযোগে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ আয়-ব্যয়ের কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। অভিযোগপত্রে ১২টি দফার মধ্যে প্রধান শিক্ষক মফিজুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং হয়রানির বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহজালাল সাজু, সহকারী শিক্ষক মেহের এলাহী, জাহাঙ্গীর হারুনসহ অন্যান্য ২১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা স্বাক্ষর করেছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ডকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তবে শিক্ষকদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিযোগ গ্রহণ করলেও রিসিভ কপি দেননি। এসিল্যান্ড নিজে স্বাক্ষর করে শিক্ষকদের রিসিভ কপি প্রদান করেছেন।
স্থানীয় সচেতন মহল ও শিক্ষকদের দাবি, প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক ২০১০ সালে যোগদানের পর থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। বিদ্যালয়ের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হকের ছত্রছায়ায় তিনি শহরে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ, জমি ক্রয়সহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা দাবি করেছেন, মফিজুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যালয়ের সকল আর্থিক কেলেঙ্কারির নিরপেক্ষ তদন্ত করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।
বিদ্যালয়ের আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য সংগ্রহে স্থানীয় সাংবাদিকরা বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। একজন সাংবাদিক তথ্য অধিকার আইনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করলেও তথ্য প্রদানে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আশা প্রকাশ করেছেন, প্রধান শিক্ষক মফিজুল হকের দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।
উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক মফিজুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ও আন্দোলনের মুখেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। সচেতন মহল তার অপসারণ এবং বিদ্যালয়ের দুর্নীতির মূল উৎপাটনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।